পানি সংকটে পাবর্ত্যাঞ্চলের মানুষ

পানি সংকটে অতিষ্ঠ পাবর্ত্যাঞ্চলের মানুষ। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এ সমস্যা। খরার তাপে শুকিয়ে গেছে পাহাড়ি ছড়া, ঝর্ণা, খাল-বিল ও কূপ। একই প্রভাব পরেছে কাপ্তাই হ্রদেও। কমেছে হ্রদের পানি। মৃত প্রায় পাহাড়ি ছড়া ও ঝর্ণা।
নানা সংকটের মধ্যে একমাত্র ভরসা কাপ্তাই হ্রদও পরিণত হয়েছে ছড়ায়। হ্রদের বুকে জেগে উঠেছে হাজারো ডুবো চর। প্রতি বছর গ্রীষ্মে এ সমস্যা ভয়াবহ রূপ নেয় পাহাড়ে। পানির স্তর নিচে নেমে গেলে নানা ভোগান্তিতে পোহাতে হয় পাহাড়ি বাসিন্দাদের।
পার্বত্যাঞ্চল অর্থাৎ তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। এসব জেলার বেশির ভাগ মানুষ নির্ভরশীল ভূ-পৃষ্ঠের পানির ওপর। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত বেশিরভাগ মানুষই পায়নি নলকুপ সুবিধা। তাই তাদের বাধ্য হয়ে নির্ভর থাকতে হয় পাহাড়ি ছড়া, ঝর্ণা, খাল, বিল ও কূপের উপর। দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পাহাড়ি নারীদের সংগ্রহ করতে হয় এ খাবার পানি।
কিন্তু সম্প্রতি তীব্র খরায় শুকিয়ে গেছে পাহাড়ের বেশিরভাগ ছড়া ও ঝর্ণা। এতেই প্রকট হয়েছে পানি সংকট। মূলত বছরের শেষ এবং শুরুতে পানি সংকটে দেখা দেয় পাহাড়ে। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে পান করছেন কাপ্তাই হ্রদের অনিরাপদ পানি। এতে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে নানা রোগবালাই। এখন এমনই চিত্র রাঙামাটির পুরো পাহাড় জুড়ে।
রাঙামাটির ১০টি উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলাই নৌ-পথ ও বেশ দূর্গম অঞ্চল। এগুলো হল বরকল, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, লংগদু, নানিয়ারচর ও বাঘাইছড়ি। এসব অঞ্চলের মানুষের জীবন-যাপনে পড়েনি উন্নয়নের ছোয়া। উপজেলার বেশির ভাগ ইউনিয়নে নেই নলকূপ ব্যবস্থাও। তাই এসব পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে বাধ্য হয়ে নির্ভর থাকতে হয় প্রাকৃতিক পানির ওপর।
সাজেক ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা বলেন, 'রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা বেশ দুর্গম। প্রতিবছর ঠিক এসময়টা খাবার পানির সংকট দেখা দেয় এখানে। যার কারণে অনেক শিশু পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারাও যায়। এখানে নলকূপ ব্যবস্থা নেই বলেলই চলে। তাছাড়া দূর্গমতার কারণে কেউ নলকূপের কাজও করতে চায়না।'
বরকল উপজেলার সুবলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তরুণ জ্যোতি চাকমা বলেন, 'পাহাড়ি গ্রামগুলোতে রিংওয়েল, টিউবওয়েল বসিয়ে বছরের অন্যান্য সময় পানি পাওয়া গেলেও শুকনো মৌসুমে পানি একদমই থাকেনা। দূর পাহাড়ি ঝর্ণার পানি সংগ্রহ করতে এ অঞ্চলের মানুষের কষ্ট কয়েকগুন বেড়ে যায়।'
তাই রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে এলাকায়ভিত্তিক নলকূপ বসানো হলে খাবার পানি সংকটা অনেকটা দূর হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।