প্রচার শুরু ‘ভালোবাসা প্রীতিলতা’

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কথা প্রায় সবারই জানা। প্রীতিলতার আত্মাহুতির প্রায় ৯০ বছর পর এই প্রথম তাকে নিয়ে কোনো পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা তৈরি হয়েছে।
সিনেমার নাম ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’, বানিয়েছেন প্রদীপ ঘোষ। আর প্রীতিলতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। নভেম্বরের তৃতীয় অথবা শেষ সপ্তাহে মুক্তি পাবে দেশজুড়ে। তার আগে বুধবার শুরু হচ্ছে ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’র আনুষ্ঠানিক প্রচার।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে এই প্রচার কার্যের উদ্বোধন করবেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীন আখতার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’র পরিচালক প্রদীপ ঘোষ। তিনি জানান, চলতি মাসেই সিনেমাটির মুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। এ উপলক্ষে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের স্মৃতিবিজড়িত স্কুল ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শুরু হবে এটির প্রচারণা কার্যক্রম।
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ‘ভালোবাসা প্রীতিলতা’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছে ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’ সিনেমাটি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সিনেমাটি সরকারি অনুদান পায়। সিনেমায় নুসরাত ইমরোজ তিশা ছাড়া আরও আছেন মনোজ প্রামানিক, কামরুজ্জামান তাপুসহ অনেকে। সংগীত পরিচালনা করেছেন বাপ্পা মজুমদার।
উল্লেখ্য, বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবার নাম জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার এবং মায়ের নাম প্রতিভা দেবী। মিউনিসিপ্যাল অফিসের হেড কেরানী ছিলেন জগদ্বন্ধু।
প্রীতিলতারা ছিলেন তিন ভাই ও দুই বোন। প্রীতিলতার শৈশব কাটে তার নানা বাড়িতে। লাজুক স্বভাবের প্রীতিলতা সংসারের বিভিন্ন কাজে তার মাকে সাহায্য করতেন।
১৯২৮ সালে চট্টগ্রামের ড. খাস্তগির সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে লেটার মার্ক পেয়ে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন। পরবর্তীতে আইএ পড়ার জন্য তিনি ঢাকার ইডেন কলেজে ভর্তি হোন। ১৯৩০ সালে অনুষ্ঠিত আইএ পরীক্ষায় তিনি সম্মিলিতভাবে পঞ্চম ও মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে ১৯৩২ সালে ডিস্টিংশনসহ বিএ পাশ করেন। তবে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে তার এবং তার বান্ধবী বীণা দাশগুপ্তের ফলাফল স্থগিত রাখা হয়। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তাদের দুজনকে মরণোত্তর স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
চট্টগ্রাম শহরের উত্তরদিকে পাহাড়তলী স্টেশনের কাছে ব্রিটিশদের 'ইউরোপিয়ান ক্লাব' নামে এক ক্লাব ছিল, যা ছিল তাদের আমোদ-প্রমোদের জায়গা। ক্লাবটির সামনে রাখা এক সাইনবোর্ডে বোল্ড হরফে লেখা ছিল, "ডগ অ্যান্ড ইন্ডিয়ান প্রহিবিটেড।" অর্থ হচ্ছে, কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ। সন্ধ্যা হতেই ইংরেজরা এই ক্লাবে এসে নাচ-গান করত, মদ খেতো।
১৯৩২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রীতিলতা ও তার সহযোদ্ধারা ইউরোপিয়ান ক্লাব দখলের সময় ব্রিটিশ পুলিশ তাদের চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে। গ্রেপ্তার এড়াতে প্রীতিলতা পটাশিয়াম সায়ানাইড পান করে আত্মাহুতি দেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল মাত্র ২১ বছর।