বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির পথপ্রদর্শক, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে শোক দিবসে বক্তারা
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে অনুষ্ঠিত শোক দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির পথপ্রদর্শক। তাঁর তর্জনীর ইশারায় সেদিন কোটি বাঙালি মুক্তি সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুরর ৭ মার্চের ভাষণই বাঙালি জাতিকে মুক্তির দিকে নিয়ে যায়।
গতকাল শনিবার রাত আটটায় নগরীর অশ্বিনী কুমার হলে অনুষ্ঠিত শোক দিবসের অনুষ্ঠানমালার শেষ দিনের আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাট্যজন সৈয়দ দুলালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবি কামাল চৌধুরী। স্মৃতিচারণ করেন ১৫ আগস্ট ট্রাজেডির শহীদ জননী সাংস্কৃতিক সংগঠক সাহান আরা বেগম, আলোচক ছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবত সাদিক আাবদুল্লাহ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক স্নেহাংশু কুমার বিশ্বাস।
স্মৃতিচারণ পর্বে ১৫ আগস্ট ট্রাজেডির শহীদ জননী সাহান আরা বেগম বলেন, ১৯৭৫ সালের সেই দিনের নৃশংতা বলা কঠিন। ওই দুঃসহ স্মৃতি আজো আমি বুকে চেপে বয়ে চলেছি। ওই দিনের স্মৃতি বলতে গেলে আমি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ি। বর্তমান প্রজন্ম সেদিনের ঘটনা জানতে চায়। তাই কিছু কথা বলতে হচ্ছে।
‘সেদিন সেনা সদস্যরা বাড়িতে এসে আমদের সবাইকে দোতলা থেকে নীচে নামিয়ে আনেন। তখন আমার শ^শুর সেসময়ের কৃষিমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবত বলেছিলেন, ‘তোমাদের কমান্ডিং অফিসার কে? জবাবে ঘাতকরা বলেছে, আমাদের কোন কমান্ডিং অফিসার নেই।’ এরপরই তারা ব্রাশ ফায়ার করতে থাকে। আমার চোখের সামনে আমার শ্বশুর সে সময়ের কৃষিমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবতকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করেছে। আমরা তখন ভয়ে আতঙ্কে জড়োসরো অবস্থা। এর কিছুক্ষণ পর সেনা সদস্যরা ওই কক্ষে এসে আবার ব্রাশ ফায়ার করে। আমার শিশুপুত্র সুকান্ত বাবু গুলি খেয়ে আমার কোলে মারা যায়। আমার গায়েও বেশ কয়েকটি গুলি লাগে। একজন মায়ের কোলে শিশুকে হত্যা করার স্মৃতি যে কতটা যন্ত্রণার হয় সেটা কেবল মা-ই বুঝতে পারে। সেই স্মৃতি আজো আমি বয়ে চলেছি। পরে আাহত অবস্থায় আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও আমার সঙ্গে কাউকে দেখা পর্যন্ত করতে দেয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যেমন স্বপরিবারে হত্যা করেছে ঘাতকরা, তেমনি আমি এবং আমার পরিবারকেও তারা শেষ করতে চেয়েছিল। আমি আহত হয়ে বেঁচে আছি। আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ কোনমতে প্রাণ বাচিয়েছেন। ১৫ আগস্টের ওই রকম দুঃসহ স্মৃতি যেন কোন মা কিংবা কোন পরিবারকে বহন করতে না হয়। আমরা চাই, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার বাস্তবায়ন হোক।
আলোচনার পর আবৃত্তি পরিবেশন করে বরিশাল নাটকের আবৃত্তি শিল্পী আজমল হোসন লাবু, সঞ্জয় সাহা, মারিফ আহম্মেদ বাপ্পী, শিল্পী বর্মণ মিলু, সামসুন্নাহার নীপা। এরপর বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় গীতি আলেখ্য সোনার বাংলাদেশে জয়বাংলা বলে বজ্রকণ্ঠ ছড়াব। গ্রন্থনা মিন্টু কর এবং পরিচালনায় স্নেহাংশু কুমার বিশ্বাস।
এর আগে জাতীয় শোক বিদবস উপলক্ষে আয়োজিত আবৃত্তি ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করেন অতিথিরা।
ছবি ঘড়-