বন্ধু হয়ে হাত বাড়াও, বন্ধন হবে দৃঢ়

বন্ধু মানে আত্মার বন্ধন। বন্ধু মানে সতেজ সবুজ মাঠ। বন্ধু মানে সবার সঙ্গে সুখ, দুঃখ সমানভাবে ভাগ করে নেওয়া। বন্ধু মানে অন্যের কষ্ট লাঘব করা। বন্ধু মানে স্বার্থহীন সম্পর্ক। বন্ধুত্বের নানাবিধ সজ্ঞা দেওয়া যায়। যতো বিশ্লেষণই দেই না কেন বন্ধুর উপমা কেবল বন্ধুই হবে। যার প্রতিধ্বনি কেবল বন্ধু হিসেবেই কানে ভাসবে। যতদিন পৃথিবী থাকবে ততোদিন বন্ধুর বন্দনাও থাকবে।
গতকাল ছিল বিশ্ব বন্ধু দিবস। বিশ্বের দেশে দেশে বন্ধুত্বের বন্ধন দৃঢ় করার আহ্বান ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ খবরের কাগজ ও টেলিভিশনে। আমরাও বন্ধুত্বের বন্ধন আরও দৃঢ় করবার আহ্বান জানাই। বন্ধু হয়ে পাশে যেন থাকতে পারি সবার সঙ্গে। বন্ধু যেন হয়ে ওঠে আমার, আপনার এবং সবার একজন। যে বন্ধুর পরশে সব বন্ধু সুন্দরের পথে হাঁটবে।
এখন বৈশ্বিক করোনা মহামারীতে বন্ধুর হাত বাড়াতে হবে আরও দৃঢ়তার সঙ্গে। বন্ধন সমৃদ্ধ করতে এখনই সময়। করোনাকে জয় করতে বিশ্বের দেশে দেশে বন্ধুত্বের যে হাত অন্য বন্ধুদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে সহযোগী হয়েছে তারাই সত্যিকার বন্ধু। ছেড়ে যাওয়া, চলে যাওয়া এবং মরন-বাঁচনের মাঝখানে বন্ধু হাইপেন হয়ে যুক্ত হয়ে গেছে। আজ এক বন্ধু অন্য বন্ধুর জন্য অক্সিজেন, পালসঅক্সিমিটার, আইসিইউ হয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছে। কেবল নির্মল পরিবেশে নিশ্বাস নেওয়ার বাসনায় নিরন্তর কাজ করে চলে বন্ধু। বিশ্ব বন্ধু দিবসে বন্ধুরা হয়ে উঠছে অন্য বন্ধুর অক্সিজেন।
বন্ধু বললেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে একজন ছেলের সঙ্গে একজন ছেলের সম্পর্ক। অথবা একটা ছেলের সঙ্গে একটা মেয়ের সম্পর্ক। কিন্তু বন্ধু কেবল ছেলে-মেয়েদের মধ্যেই হবে? অবশ্যই না। বন্ধু হতে হবে মায়ের সঙ্গে মেয়ের, মায়ের সঙ্গে ছেলের, বাবার সঙ্গে ছেলের আবার বাবার সঙ্গে মেয়ের। এরকম বন্ধুত্ব হওয়া একান্ত দরকার। কিন্তু আমাদের পরিবেশ এবং পরিস্থিতি বাবা মায়ের সঙ্গে সন্তানদের বন্ধুত্ব খুব একটা হয়ে ওঠতে দেয় না। বাবা মায়ের সঙ্গে যেহেতু সন্তানের বন্ধুত্ব হয় না। তাই সন্তানরা বাইরে সঠিক বন্ধু নির্বাচনে ভুল করে। আর ওই ভুলের মাসুল দিতে হয় পরিবার, সমাজ, রাস্ট্র এবং বিশ^কে। কিন্তু করোনায় সঠিক বন্ধু নির্বাচন করতে শিখিয়েছে। আমাদের সন্তানরা প্রকৃতির অক্সিজেনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজেরাই অক্সিজেন হয়ে জীবন বাঁচানোর কাজে লেগে যাচ্ছে। যদিও এই উদাহরণ এখনও সেভাবে বিস্তার ঘটেনি। এখনও বন্ধু মানে একটি গন্ডির মধ্যেই আবদ্ধ হয়ে আছে।
আমরা বলতে চাই, ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব খুবই দরকার। বাইরে বন্ধু না থাকলে শত্রু চিনবে কি করে। মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করার ক্ষেত্র পাবে কোথায়? পরিবেশ, পরিস্থিতে খাপ খাইয়ে উঠতে হলেও বন্ধুত্ব দরকার। কিন্তু বন্ধুত্ব গড়ে তোলার আগে বন্ধু নির্বাচন করা খুবই জরুরী। কে বন্ধু হবে, কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করা যাবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে সঠিকভাবে। সঠিক বন্ধু নির্বাচন হয় না বলেই ভুল পথে পা বাড়ায় প্রিয় সন্তান। আর বন্ধু নির্বাচনে ভুল হয় বলেই নেতিবাচক কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে আমাদের সন্তানরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক শ্রেণির লম্পট বন্ধু নির্বাচনের নামে কিশোর-কিশোরীদের ফাঁদে ফেলে। সারা দেশে স্কুল-কলেজের অসংখ্য ছেলে মেয়ে এমন বন্ধুর পাল্লায় পড়ে জীবন দিয়েছে। যা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। স্কুল কিংবা কলেজ পড়–য়া সন্তান বন্ধুত্বের নামে পাকে পড়ে যাচ্ছে। আমাদের সন্তানদের রক্ষা করতে হলে দেশটা সুন্দর হবে না। আমদের সন্তানরা যাতে বন্ধু নির্বাচনে ভুল না করে সেজন্য বাবা-মাকে দায়িত্ব নিতে হবে। সন্তানের সঙ্গে প্রথম এবং প্রধান বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হবে বাবা-মাকে।
আমাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানদের বন্ধুত্ব তেমন একটা হয় না। সন্তান একটু একটু করে বড় হতে থাকে আর বাবা-মায়ের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে। এই দূরত্বের কারণে সন্তান বাইরে তার সঙ্গে ঘটেচলা নেতিবাচক বিষয়গুলো বাবা-মায়ের সঙ্গে বলতে পারে না। বাবা মা বন্ধুসূলভ না হওয়ায় তারা তাদের ভয় পায়। এই ভয়ের কারণে তারা বাইরে বন্ধু খুঁজে বেড়ায়। সেই বন্ধু তার জন্য কতটা বন্ধুত্বের হবে সেটা সে নির্ণয় করতে পারে না। ফলে তারা ভুল পথে পা বাড়ায়। আর শেষ পর্যন্ত হয় বাল্য বিবাহ, নয় ধর্ষণের শিকার, কখনো মাদক এবং জঙ্গীবাদের শিকার হয়ে আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়।
জরিপে দেখা গেছে, যেসব পরিবারের বাবা-মা সন্তানের সঙ্গে নিবিড়ভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে সেই পরিবারের সন্তানরা অপেক্ষাকৃত নেতবাচক পথে কম ধাবিত হয়। সন্তান বাড়িতে কি করছে, পড়াশুনা না করে অন্য কাজে যুক্ত হচ্ছে কি না সেটা বন্ধু হয়ে পাশে থেকে খোঁজ নিতে হবে। তাহলে সন্তান বাইরে গিয়ে সঠিক বন্ধু নির্বাচন করতে পারবে।
আমরা চাই, বিশ্ব বন্ধু দিবস যেন সারা দুনিয়ায় সকল বন্ধুকে সেই পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়। কোন বন্ধু যেন অন্য কোন বন্ধুকে খারাপ পথে নিয়ে যেতে না পারে। এক্ সঙ্গে সবার পরিবার যেন বন্ধুত্বের মুক্ত বিচরণক্ষেত্র হয়। সেজন্য বাবা-মাকে সন্তানের সঙ্গে দূরত্ব কমাতে হবে। বন্ধু হয়ে প্রথম সন্তানের সুখ-দুঃখের সাথী হতে হবে। করোনায় সারা দুনিয়ায় বন্ধুরা যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে সেই উদাহরণ হোক সকল বন্ধুর জন্য। আমাদের সঠিক বন্ধু নির্বাচন করতেই হবে। তাহলে বিশ্ব বন্ধু দিবস স্বার্থক হবে।