বরগুনার তালতলীতে বোরো-ইরি ধান চাষে ব্যস্ত কৃষকরা

শীতের কুয়াশা ভেজা শিশিরে, পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গা সকালে উঠেই ব্যস্ত হয়ে যায় কৃষকরা, মাঠে ধান চাষের জন্য। কনকনে ঠান্ডা শীতের মধ্যে বোরো - ইরি ধান রোপনে ব্যাস্ত সময় পার করছেন তারা।
কৃষকরা বলেন, শীতের এই মৌসুমে বোরো - ইরি ধান চাষ করে গত বছর ভালো লাভবান হয়েছেন। তবে এ বছর সবেমাত্র ধানের চারা রোপণ করছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে, ভালো ফলন পাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেন তারা।
বরগুনা তালতলী উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের লালুপাড়া গ্রামের কৃষকরা বোরো- ইরি ধান চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে লালুপাড়া সংলগ্ন নিদ্রা বাজারের সুইজঘাটের খাল থেকে লবণ পানি প্রবেশ করে, শীতের এই মৌসুমে মাঘ, ফাগুন ও চৈত্র মাস যদি এই তিন মাস লবন পানি আটকে রাখা হয়, তাহলে ধানের চারা নষ্ট হবে না ও ভালো ফলন পাওয়া যাবে।
লালুপাড়া এলাকার কৃষক মোঃ নুরুল হক বলেন, গতবছর বোরো - ইরি ধান চাষ করে ভালো লাভবান হয়েছি। এজন্যই এ বছর এই শীত মৌসুমে ধান চাষ করা শুরু করেছি। আমার দেখাদেখি অনেকেই এবছর বোরো- ইরি ধান চাষে ঝুঁকছেন। তবে আমাদের এলাকার সমস্যা হল লবণ পানি প্রবেশ করে মাঠের ফসল নষ্ট করে দেয়। লবণ পানি প্রতিরোধ করতে পারলে একরের পর একর জমি ফাঁকা থাকবে না সবাই ধান চাষ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। তিনি আরো বলেন, বছরে তিনি দুইবার আমন ও বোরো- ইরি ধান চাষ করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, লালুপাড়া এলাকাসহ আশেপাশের এলাকার মাঠ একরের পর একর জমি ফাঁকা রয়েছে। এর ভিতর কয়েকজন কৃষক ধান চাষ করছেন। তারা বলছেন, মিষ্টি পানির অভাবে ধান চাষ করতে পারছেন না, আবার ধান চাষ করলেও শীতের এই মৌসুমে লবণ পানি প্রবেশ করে সব ফসল নষ্ট করে দেয়। তাই কৃষকদের জন্য, কৃষি বিভাগের উদ্যোগে একটি ডীপ টিউবল বসানো হয় তাহলে সারা বছর জুড়েই কৃষকরা মিষ্টি পানি পাবে ও চাষাবাদ করতে পারবে।
একাধিক কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, তালতলী কৃষি অফিস থেকে ধান চাষের জন্য একবার প্রশিক্ষণ দিয়েছিল লালুপাড়া গ্রামের কৃষকদের। পরে আর তাদের সাথে কোন যোগাযোগ করেনি কৃষি অফিস। কৃষকরা সঠিক গাইডলাইন না পেয়ে ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন এছাড়াও কৃষি বিভাগ থেকে সাহায্য সহযোগিতা ও তৎপরতা নেই বলেও অভিযোগ করেন তারা।
কৃষক মো. আনোয়ার বলেন, প্রতি বছর এই সময়ে বিনা ১০ ও ৬৭ ইরি ধান প্রায় দেড় একর জমিতে চাষাবাদ করেন। কিন্তু লবণ পানি নিয়েই তারা বেশি চিন্তিত। লালুপাড়া এলাকা সংলগ্ন একটি খাল আছে ওই খালটি নিদ্রা সুইজঘাটের সাথে মিলিত হয়েছে। গতবছর ওই সুইজঘাটটি আটকে দেয়া হয়েছে এ কারণে মিঠাপানি পেয়েছিলাম। কিন্তু এবছর লবন পানি ঠেকাতে নিদ্রা খালের সুইচগেটটি আটকাতে চায় না সংশ্লিষ্টরা। আদৌ আটকাবে কিনা এ নিয়ে সন্দেহ। সুইজটা টা যদি শীতের মৌসুমে এই মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র ০৩ মাস আটকে রাখে, তাহলে শীত মৌসুমে মিঠাপানি দিয়ে এলাকার সবাই ধান চাষ করতে পারবে।
তালতলী কৃষি কর্মকর্তা সি এম রেজাউল করিম বলেন, আমি আমতলী উপজেলার দায়িত্বে আছি। তালতলীতে অতিরিক্ত দায়িত্বে, যদিও তালতলী বেশি একটা যাওয়া হয় না। তবে লোকজন পাঠিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে। তাছাড়া সুইজ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে, বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব। দক্ষিণাঞ্চলে ডিপ টিউবলের সরকারি উদ্যোগে কার্যক্রম নেই। কৃষকদের সকল ধরনের সহযোগিতা করবেন বলেও আশ্বাস দেন তিনি।