বরিশাল কলেজ অশ্বিনী কুমারের নামে করা নিয়ে বিরোধ,পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারের কারিগর বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরো ব্যক্তিত্ব মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত। তাঁর বাসভবনে প্রতিষ্ঠিত সরকারি বরিশাল কলেজের নাম সরকারি মহাত্মা অশ্বিনী কুমার কলেজ বরিশাল করার সরকারি প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল এবং স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদসহ ৭টি সংগঠন।
একই সময় সরকারি প্রস্তাবনার বিরোধীতা করে সরকারি বরিশাল কলেজের নাম অপরিবর্তিত রাখার দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সভা করেছে সরকারি বরিশাল কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় নগরের অশ্বিনী কুমার হল সম্মুখ সড়কের এক পাশে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ বরিশাল কলেজের সঙ্গে অশি^নী কুমারের নাম যুক্ত করার দাবিতে এবং সড়কের উল্টোদিকে সরকারি বরিশাল কলেজের নাম অপরিবর্তিত রাখাখার দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হলেও কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ব্যাপক পুলিশের উপস্থিতিতে একই সময় দুটি প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাসদ বিক্ষোভ সমাবেশ শেষ করে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে যান। শেখানে সরকারি প্রস্তাবনা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেন।
বর্তমান সরকারের শাসন আমলের দীর্ঘ ১২ বছরের মধ্যে এই প্রথম বরিশালে সরকারি সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি কোন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাসদ জানায়, গত মঙ্গলবার বিকেলে সরকারি বরিশাল কলেজের নাম সরকারি মহাত্মা অশ্বিনী কুমার কলেজ বরিশাল করার সরকারি প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের দাবিতে অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে তারা জানতে পারেন নামকরণের বিরোধীকারীরা একই স্থানে একই সময়ে গণস্বাক্ষর গ্রহণ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছে। বাসদের নির্ধারিত কর্মসূচি তারা পালন করেছে। তবে পাল্টা কর্মসূচির কারণে কিছুটা সমস্যা হয়েছে।
এদিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন ও আওয়ামী লীগ নেতা হাসান আহমেদ বাবু, জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব খানের নের্তৃত্বে নেতাকর্মীসহ সকাল সাড়ে ১০টার আগে অশ্বিনী কুমার হল সংলগ্ন সদর রোডের পূর্ব পাশে অবস্থান নিয়ে সরকারি বরিশাল কলেজের নাম অপরিবর্তিত রাখার দাবিতে সমাবেশ শুরু করেন তারা।
বাসদ জেলা সদস্য সচিব ডা. মণীষা চক্রবর্তীর নের্তৃত্বে বিপুল সংখ্যক নারীসহ কয়েকশত নেতাকর্মী সকাল সাড়ে ১০টায় ফকির বাড়ি সড়কের কার্যালয় থেকে তাদের দাবির পক্ষে মিছিল বের করেন। মিছিলটি সদর রোড অশ্বিনী কুমার হল অতিক্রম করে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবার অশ্বিনী কুমার হল এলাকায় ফিরে আসে। তারা নাম বিরোধীকারীদের অবস্থানের ঠিক বিপরীত মুখে সদর রোডের পশ্চিম পাশে দাঁড়িয়ে সমাবেশ শুরু করেন। মাইকে উভয়পক্ষের উত্তেজিত বক্তব্যে সেখানে ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর সেখানে এসে নাম বিরোধীকারীদের সমাবেশে বক্তৃতা করেন।
দুপুর ১২টায় সমাবেশ শেষ করে বাসদ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয় গিয়ে স্মারকলিপি দেয়। তারা চলে যাওয়ার পর নাম বিরোধীতাকারী সামাবেশ শেষ করলেও স্বাক্ষর গ্রহণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদের) ব্যানারে আয়োজন করা বিক্ষোভ সমাবেশে জেলা আহবায়ক ইমরান হাবীব রুমনের সভাপতিত্বে বিক্ষোভে বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট নাগরিক মো. নজরুল ইসলাম, বাসদ জেলা আহবায়ক ডা. মনীষা চক্রবর্তী, মাক্সবাদী নেতা সাইদুর রহমান, জেলা কমিউনিস্ট পার্টি সম্পাদক দুলাল মজুমদার, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বরিশাল জেলা সভাপতি সম্পা দাশ, ছাত্রফ্রন্ট সভাপতি সাগরে দাশ সহ বিভিন্ন বাম সংগঠনের ছাত্র নেতৃবৃন্দ।
ডা. মনীষা বলেন, আজকে যেখানে সরকারি বরিশাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এ জমি মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের পৈত্রিক সম্পত্তি তাই তার নামেই কলেজের নাম করণ করার জন্যই বিভিন্ন মহল থেকে প্রস্তবনার কারনে শিক্ষা মন্ত্রলয়ে জেলা প্রশাসক প্রস্তাব প্রেরণ করেছে। সরকারি প্রস্তাবনার বিপক্ষে আজ সরকারি দলের কর্মীরা নেমেছে। তারা মূলত সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেওয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন।
অশ্বিনী কুমার দত্তের নামের বিরোধীতাকারীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সাবেক বরিশাল কলেজের ছাত্র ভিপি ও বর্তমান বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. একে এম জাহাঙ্গির হোসেন, সাবেক শিক্ষার্থী বিসিসি প্যানেল মেয়র এ্যাড, রফিকুল ইসলাম খোকন, এ্যাড, গোলাম সরোয়ার রাজিব, বিসিসি কাউন্সিলর গায়েত্রী সরকার পাখি, হাসান মাহমুদ বাবু, ইমরুল আহমেদ উজ্জল, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জিয়াউর রহমান জিয়া, মহানগর ছাত্রলীগ নেতা রাজিব খান, মোস্তাফিজুর রহমান অনিকসহ বিভিন্ন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল কালিবাড়ি সড়কে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের বাসভবনটি ১৯৬৩ সালে ‘বরিশাল কলেজ’ নাম দিয়ে প্রথমে নাইট ও পরে দিবাকলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৬ সালে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। স্থানীয় সংস্কৃতিজনদের দাবির মুখে সরকারি বরিশাল কলেজের নামের সঙ্গে ‘মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত’ যুক্ত করার জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রাণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়। এ সুপারিশের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের মতামত চেয়ে গত ২৯ জুন চিঠি দিয়েছে। এর বিরোধীতা করছে কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ব্যানারে নগর আওয়ামী লীগের একটি অংশ।
এদিকে সরকারি বরিশাল কলেজের নাম সরকারি মহাত্মা অশ্বিনী কুমার কলেজ বরিশাল করার সরকারি প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের দাবিতে বৃহষ্পতিবার নগরের অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে সাংবাদিক সম্মেলন আহ্বান করেছে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের নামে নাম করণ বাস্তায়ন কমিটি। পরে তারা প্রস্তাবনা বাস্তায়নে প্রধানমন্ত্রী এবং জেলা প্রশাসকের সাছে স্মারকলিপি প্রদান করবে।