বরিশাল-খুলনা যাতায়াতে কমলো অর্ধেক সময়

রাজধানী ঢাকার পর এবার খুলনার সাথে বরিশালের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার ভার্চুয়ালী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব অস্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর দীর্ঘ পরীক্ষার অবসান ঘটিয়েছেন। এই সেতু চালুর ফলে দুই বিভাগীয় সদর বরিশাল ও খুলনার সড়ক পথ যাতায়াতে সময় কমলো অন্তত দেড় থেকে ২ ঘণ্টা। সেতুর ফলে মোংলা সমুদ্র বন্দর ও বেনাপোল স্থল বন্দরের সাথে পায়রা সমুদ্র বন্দরসহ দক্ষিণাঞ্চলে পন্য পরিবহনেও সময় সাশ্রয় হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এই সেতু এই এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ঘটাবে বলে প্রত্যাশা সড়ক বিভাগের।
মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে পন্য বোঝাই একটি ট্রাক বরিশাল পৌঁছাতে সময় লাগতো অন্তত ২৪ ঘণ্টা। কঁচা নদীর বেকুটিয়া ফেরীঘাটে গিয়ে থমকে যেত গাড়ির চাকা। অনেক সময় ফেরীঘাটে কেটে যেত ৩০ থেকে ৪৮ ঘণ্টা। গুণতে হতো দ্বিগুণ ভাড়া।
বরিশাল থেকে একটি বাস পিরোজপুর হয়ে খুলনার রূপসা ঘাটে পৌঁছাতে সময় লাগতো সাড়ে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। মাত্র ১১০ কিলোমিটার সড়ক পথ দুই ঘণ্টায় পৌঁছানো সম্ভব হলেও বেকুটিয়া ফেরীর জন্য অপচয় হতো বাকি সময়। রবিবার প্রধানমন্ত্রী বরিশাল ও খুলনা বিভাগের মানুষকে নতুন দিগন্তে পৌঁছে দিয়েছেন।
বরিশাল বিভাগীয় আঞ্চলিক সড়ক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন, নগরীর রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে রূপসা ঘাট পর্যন্ত ১১০ কিলোমিটার সড়ক যেতে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় লাগতো। ফেরিঘাটে কেটে যেত ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সেতু চালু হওয়ায় বরিশাল থেকে খুলনা যাতায়াতে অর্ধেক সময় কমেছে। এখন সোয়া ২ ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ আড়াই ঘণ্টায় খুলনা ও বরিশাল যাতায়াত করা সম্ভব হবে। একটি বাস একদিনে বরিশাল-খুলনা রুটে একাধিক ট্রিপ দিতে পারবে। এতে মালিক-শ্রমিকের আয়ও বাড়বে।
পন্য পরিবহন কমিশন এজেন্ট ও বরিশালের গড়িয়াপাড় শাখা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন খান বলেন, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে বিকেলে একটি পন্যবাহী ট্রাক বরিশালের উদ্দেশ্যে ছাড়লে রাত ৯টা নাগাদ বেকুটিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছাত। যানবাহনে সিরিয়াল ও নদীতে স্রোতসহ নানা কারণে রাতে ফেরি পাড় হতে পারতো না ট্রাকগুলো। পরদিন সকালে ফেরি পাড় হয়ে দুপুর নাগাদ কখনও বিকেল ঠেকে যেত ট্রাকগুলো বরিশাল পৌঁছাতে। অনেক সময় ফেরিঘাটেই ৩০ থেকে ৪৮ ঘণ্টা অলস বসে থাকতে হতো।
তিনি বলেন, এখন মোংলা থেকে বিকেলে ট্রাক ছেড়ে রাতের মধ্যে বরিশাল পৌঁছাবে ট্রাকগুলো। বেকুটিয়া সেতু চালু হওয়ায় স্থল বন্দর বেনাপোল ও সমুদ্র বন্দর মোংলার সাথে পায়রা সমুদ্র বন্দরে পন্য পরিবহনে গতি বাড়বে। আর্থিকভাবে লাভবান হবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।
বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী একেএম আজাদ রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই সেতু বরিশাল ও খুলনা বিভাগের মানুষের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করলো। কম সময়ে তারা গন্তব্যে যেতে পারবে। কৃষি, মৎস্য সহ যাবতীয় পন্য দ্রুত সময়ে খুলনা ও বরিশালের গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে। বেনাপোল স্থল বন্দর ও মোংলা সমুদ্র বন্দরের সাথে পায়রা সমুদ বন্দরে পন্য পরিবহন তড়ান্বিত হবে। এতে সময় এবং জ্বালানি সাশ্রয় হবে। সেতুর ফলে এ অঞ্চলের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবনমান উন্নতি হবে বলে তারা আশা করছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ পিরোজপুরে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঁচা নদীর বেকুটিয়া পয়েন্ট সেতু নির্মানের ঘোষনা দেন। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঁচা নদীর উপর সেতু নির্মান কাজের ভিত্তি উদ্বোধন করেন। ১ হাজার ৪শ’ ৯৩ মিটার দির্ঘ ও ১৩.৪০ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৮শ’ ৯৪.০৮ কোটি টাকা। যার ৬৫৪.৮০ কোটি চীন সরকার এবং বাকী ২৩৯.০৮ কোটি টাকার যোগান দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ৪৯৫ মিটার ভায়াডাক্ট সহ পিসি বক্সগার্ডার ডিজাইনের মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৯৯৮ মিটার। ভায়াডাক্টে স্প্যান ১৫টি এবং পিয়ার ১৫টি। এছাড়া ৯টি স্প্যান এবং ৮টি পিয়ারের উপর নির্মিত হয়েছে সেতুটি। উভয়পাশে এপ্রোচ সড়ক রয়েছে ১ হাজার ৪শ’ ৬৭ মিটার। পর্যটক আকৃষ্ট করতে বাতি দিয়ে নান্দনিক করা হয়েছে সেতুটি। বিনোদনের জন্য সেতুর বরিশাল প্রান্তে নদীর তীর করা হয়েছে আকর্ষণীয়। চীনের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেতুটি নির্মাণ করেছে।