বরিশাল জেলায় করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু সর্বোচ্চ

বরিশাল বিভাগের করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুতে সর্বোচ্চ বরিশাল জেলা। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে ওই তথ্য জানানো হয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় বরিশাল বিভাগে ১৩৫ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। আর করোনা পজেটিভ একজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বরিশালে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাড়ালো ২১৮ জন।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, গতকাল করোনা আকান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তির বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায়। ৬৫ বছর বয়সী আব্দুল খালেক নামের ওই ব্যক্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, করোনার প্রথম ঢেউয়ে বরিশাল বিভাগে সংক্রমণের হার কম ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের হার বেশি। এই অবস্থায় শুধু করোনার টিকা গ্রহণ করলেই চলবে না স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয় জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে বরিশাল জেলায়। ২৪ ঘন্টায় জেলায় ৬৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। এর পরের অবস্থানে আছে ভোলা জেলা। জেলার ৩২ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। পিরোজপুরে ১৩ জন, পটুয়াখালীতে ১১ জন, ঝালকাঠিতে ১০ জন এবং বরগুনা জেলায় ৫ জন শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ১৩ মাসে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ আক্রান্ত বরিশাল জেলায় ৫ হাজার ৪৪০ জন। পটুয়াখালীতে ১ হাজার ৮৫৬ জন, পিরোজপুরে ১ হাজার ৩১৩, ভোলা ১ হাজার ২৫৫ জন, বরগুনা ১ হাজার ৯৫ জন এবং ঝালকাঠিতে ৯৪২ জন।
স্বাস্থ্য কার্যালয় আরো জানিয়েছে গত ২৪ ঘন্টায় মাত্র ১৮ জন রোগী করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থতা লাভ করেছেন। যা নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ১০ হাজার ৭১২ জন। অর্থাৎ আক্রান্ত শনাক্তের মধ্যে ১ হাজার ১৮৯ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরমধ্যে কিছু রোগী হাসপাতালে, অন্যরা নিজ বাসায় চিকিৎসাধীন।
বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন বরিশাল জেলায়। মোট মৃত্যুবরণ করা ২১৮ জনের মধ্যে বরিশাল জেলায় সর্বোচ্চ ৯৪ জন, এরপর পটুয়াখালীতে ৪৪ জন, পিরোজপুরে ২৭ জন, বরগুনায় ২২ জন, ঝালকাঠিতে ২০ জন এবং ভোলায় ১১ জন।
বরিশালে প্রথম ২০২০ সালের ৯ মার্চ নারায়নগঞ্জ ফেরত পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার এক শ্রমিক আক্রান্ত শনাক্ত হন। সেদিন থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ৩৯৪ দিনের আপডেটে এই তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এদিকে প্রথম ঢেউ কিছুটা স্থিমিত হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে রোগী শূন্য ছিল বরিশাল অঞ্চলের করোনা চিকিৎসার অন্যতম প্রতিষ্ঠান বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলল কলেজ হাসপাতাল। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি এই ওয়ার্ড থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন মঠবাড়িয়ার খালেদা বেগম। এরপর দুই মাসের মত করোনা ইউনিট সম্পূর্ণ ফাঁকা ছিল। তবে ৭ মার্চ করোনা ওয়ার্ডে একজন রোগী ভর্তি হয়। সেই থেকে দিনে দিনে বাড়ছে ভর্তির সংখ্যা। আর লোকবল সংকটের মধ্যেই এখানো চালানো হচ্ছে অতিরিক্ত দেড়শত শয্যার করোনা ওয়ার্ডের কার্যক্রম।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন জানিয়েছেন, আমাদের যা সম্বল আছে তা দিয়েই চিকিৎসাসেবা প্রদানের কার্যকম চলমান রয়েছে। করোনা ওয়ার্ডের জন্য নতুন করে কোন চিকিৎসক, নার্স, আয়া, পরিচ্ছন্নতাকর্মী সংযুক্ত করা হয়নি। ফলে মূল হাসপাতালে যা জনবল রয়েছে সেখান থেকে নিয়েই চলছে করোন ইউনিট।
উল্লেখ্য ১৯৬৮ সালে যাত্রা শুরু করা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ২০১৩ সালে এক হাজার বেডে উন্নিত করা হয়। কাগজে কলমে ১০০০ শয্যায় উন্নিত করা হলেও ৫০০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে এখনো। ২০২০ সালে নতুন করে দেড়শ শয্যার করোন ইউনিট চালু হলে সংকট আরো বেশি বৃদ্ধি পায়। করোনা সংকট মোকাবেলায় গত বছর ৪০ জন ডাক্তার সংযুক্ত করা হলেও প্রথম ঢেউ শেষ হওয়ার আগেই অনেকেই নিজেদের পছন্দমত অন্য কর্মস্থানে যোগ দিয়েছেন।
এছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যনুলা। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২২টি ক্যানুলা থাকলেও ১০টির মতো বিকল হয়ে পড়ে আছে। আইসিইউ থাকলেও তা পরিচালনার জন্য নেই টেকনিশিয়ান।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের অনেক কিছুই নেই। এরমধ্য থেকেই চলতে হচ্ছে। সব থেকে বড় অভাব হচ্ছে করোনার এই চরম সংকটকালীন সময়ে হাসপাতালে পরিচালক নেই।
উল্লেখ্য এ হাসপাতালটির করোনা ওআইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত রোগীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫০৭ জানের মৃত্যু হয়েছে। যারমধ্যে ১৪৬ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। আর ২১ জনের রিপোর্টের ফলাফল প্রাপ্তির অপেক্ষায় রয়েছে।