বরিশাল মহানগর বিএনপি মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠন পিছিয়ে,নেতৃত্বের দৌড়ে নিস্ক্রিয়রা

বরিশাল মহানগর বিএনপির ৩ বছরের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে। চার বছরের বেশি সময় ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের কথা জোরোসোরে আলোচনায় উঠে এসেছে। তবে আহ্বায়ক কমিটি গঠন প্রক্রিয়া পিছিয়ে যাচ্ছে। কবে কোন প্রক্রিয়ায় এই কমিটি পুনর্গঠন হবে তা স্পষ্ট নয়। এদিকে কমিটি পুনর্গঠন আলোচনা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে দলের নিষ্ক্রীয় সদস্যরা দৌড়ঝাপ শুরু করেছে।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের আলোচনা থাকলেও নতুন আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব কে হবেন তা নিয়েও চলছে জোর আলোচনা। অনেকেই বলছেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারকে একটি পদ ছেড়ে দিতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিবের পদটি তিনি রাখবেন এমনটাই নিশ্চিত।
নতুন কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আলোচনায় উঠে আসছে দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারান্তরীণ সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল, মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলী হায়দার বাবুল এবং মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি মনিরুজ্জামান ফারুকের নাম।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি মনিরুজ্জামান ফারুকের দাবি, বরিশালে মজিবর রহমান সরোয়ারের বিকল্প নেই। জনবিচ্ছিন্ন কিছু নেতা যাদের কোন কর্মী নেই তারা কেন্দ্রে গিয়ে সরোয়ারের বিরুদ্ধে কানভারী করছেন। কিন্তু তারা চাইবেন সরোয়ারকেই নতুন কমিটির আহ্বায়ক করা হোক। যদি কোন কারণে তাকে (সরোয়ার) মহানগর থেকে সরিয়ে দেয়া হয় সে ক্ষেত্রে সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে আহ্বায়ক পদের দাবিদার তিনি।
আহ্বায়কের আলোচনায় থাকা মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলী হায়দার বাবুল বলেন, ছাত্রদল থেকে শুরু করে বর্তমানে বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছেন। ৪২ বছর ধরে জাতীয়তাবাদী রাজনীতি করতে গিয়ে ধন-দৌলত বয়স সব হারিয়েছেন। দল থেকে কিছুই পাননি। এবার দল তার ত্যাগের মূল্যায়ন করবে বলে আশা করেন তিনি।
বাবুল আরও বলেন, যারা (সাবেক মেয়র কামাল) খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে না এসে শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু বার্ষিকী পালনের জন্য গরু কেটে খাওয়ায় তারা কিভাবে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদের দাবি করেন। দলের নীতি নির্ধারকরা নিশ্চয়ই এ বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে সর্বাধিক আলোচনায় রয়েছেন গত ১২ বছরে সরকার বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কা-ারী ৫২ মামলার আসামী বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন সিকদার জিয়া। এছাড়া গত ১ যুগ ধরে দলের আন্দোলন-সংগ্রাম এড়িয়ে চলা জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি মহসিন মন্টু, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি আক্তার হোসেন মেবুল, মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর জাহিদুল কবির এবং মহানগর যুবদলের সভাপতি আক্তারুজ্জামান শামীমের নাম।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর মজিবর রহমান সরোয়ারকে সভাপতি এবং কামরুল আহসান শাহিনকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর বিএনপির ১৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্নাঙ্গ কমিটি অনুমোদন হয়। ৩ বছর মেয়াদের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয় ২০১৬ সালে। পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠনের এক বছর পর ২০১৪ সালের ২২ নভেম্বর সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান শাহিন মারা যান। এরপর থেকে দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এরপর গত চ্র বছরেরও বেশি সময় ধরে মহানগর বিএনপির কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। গত অক্টোবরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনগর্ঠনের জন্য সম্মেলনের মাধ্যমে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করার দাবি জানিয়ে কেন্দ্রে চিঠি পাঠায় মহানগর বিএনপি। কিন্তু ওই চিঠির কোন প্রতিউত্তর বা কমিটি পুনগর্ঠনের কোন উদ্যোগ নেয়নি কেন্দ্রীয় বিএনপি।
এ বিষয়ে জানতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর মুঠোফোনে কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বরিশাল বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, বরিশাল বিভাগে মহানগরসহ বিভিন্ন জেলা কমিটি পূনগর্ঠন চলামন আছে। তৃনমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বর্তমান কমিটি গঠন করা হয়। এ বিষয়ে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারনী মহল এবং বিশেষ করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনের তারেক রহমান তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছেন। অচিরেই বরিশাল মহানগরসহ বিভাগের যে সব জেলা ইউনিটে বিএনপির কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে, সে সকল জেলায় কমিটি পুনগর্ঠন করা হবে।