বরিশালে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বাড়ছে

বরিশালে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বাড়ছে

বরিশালে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বাড়ছে। প্রতিদিন বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেলে ভর্তি হচ্ছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত একাধিক রোগী। তবে ডেঙ্গু আক্রান্তদের আলাদা চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই এই হাসপাতালে। মেডিসিন বিভাগে অন্য রোগীদের পাশে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের। এতে অন্য রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন আতংকের মধ্যে। ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা স্থানে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা হলে ভালো হতো বলে জানিয়েছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা। তাদের আলাদা চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লেখা হয়েছে বলে জানিযেছেন হাসপাতালের পরিচালক। 

শের-ই বাংলা মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগের রেজিস্টার অনুযায়ী, গত পহেলা অক্টোবর সকালে শের-ই বাংলা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ছিলো ২১ জন ডেঙ্গু রোগী। ওইদিন নতুন করে আরও ১২ জন রোগী ভর্তি হয়। ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি যায় ৮জন। দিনশেষে চিকিৎসাধীন ছিলো ২৫ জন। ২ অক্টোবর ভর্তি হয়েছে ১০জন, ৩ অক্টোবর ১৪ জন, ৪ অক্টোবর ৮ জন, ৫ অক্টোবর ১১ জন, ৬ অক্টোবর ৪ জন, ৭ অক্টোবর সর্বাধিক ১৯ জন, ৮ অক্টোবর ১৫ জন, ৯ অক্টোবর ১৭ জন এবং ১০ অক্টোবর ভর্তি হয়েছে ১৮ জন রোগী। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন ছিলো ৪৮ জন রোগী। 

মঙ্গলবার দুপুরে শের-ই বাংলা মেডিকেলে গিয়ে দেখা গেছে, মেডিসিন বিভাগের ৪টি ইউনিটে চিকিৎসাধীন ৪৮ জন রোগীর মধ্যে কেউ শয্যায়, কেউ মেঝেতে এবং কেউ চিকিৎসা নিচ্ছেন ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায়। তাদের প্রত্যেককে মশারী দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। 
চিকিৎসাধীন রোগীরা জানান, শুরুর দিকে জ্বর হয়। সাথে বমি বমি ভাব। পরে পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পরে।  হাসপাতালে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠছেন তারা। প্রতিদিন একবার বড় ডাক্তার আসে। ছোট ডাক্তার এবং নার্সরাও খেয়াল রাখেন। 

অন্য রোগীর স্বজনরা জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর পাশে অন্য সমস্যার রোগী থাকায় সব সময় দুশ্চিন্তা হয়। রোগী কখন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় সেই আতংক থাকে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের একটি নির্দিস্ট স্থানে রেখে চিকিৎসা দিলে দুশ্চিন্তা থাকে না। ভুক্তভোগীরা ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা স্থানে রেখে চিকিৎসা দাবী করেন। 

হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিট-৪ এর নার্সিং ইনচার্জ মো. মোহসীন জানান, মেডিসিন বিভাগের ৪টি ইউনিটের সবগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে। খালী থাকা সাপেক্ষ তাদের শয্যা বরাদ্দ দেয়া হয়। শয্যা না থাকলে মেঝেতে এবং কখনো বারান্দায়ও স্থান দেয়া হয় তাদের। প্রত্যেক রোগীর নিরাপত্তায় মশারী দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার মেডিসিন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৪৮ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলো বলে তিনি জানান। 

হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিট-৪ এর প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম খান বলেন, গত এক মাসেও ডেঙ্গুর কোন উন্নতি নেই। প্রতিদিনই একাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা না থাকায় মেডিসিন ওয়ার্ডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, বরিশালে চিকিৎসাধীন রোগীরা আশংকাজনক নয়। রোগীদের প্লাটিলেট বাড়তে বেশী সময় লাগে। প্লাটিলেট কনসেনট্রেটের ব্যবস্থা না থাকায় রোগীর অবস্থা একটু খারাপ হলেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকায় পাঠিয়ে দিতে হয়। প্লাটিলেট কনসেনট্রেটের ব্যবস্থা হলে রোগীদের আর ঢাকায় পাঠানোর প্রয়োজন হতো না। 

শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাদের আলাদা স্থানে রেখে চিকিৎসা দেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। 

পরিচালক আরও বলেন, পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় অনেক রোগীকে ঢাকায় পাঠাতে হয়। প্লাটিলেট কনসেনট্রেটের ব্যবস্থা চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এই ব্যবস্থা হয়ে গেলে আগামীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত কোন রোগীকে আর ঢাকায় পাঠাতে হবে না।