বরিশালে মানবপাচার মামলায় সমঝোতা চেষ্টা ব্যর্থ

বরিশালে মানবপাচার মামলায় সমঝোতা চেষ্টা ব্যর্থ

বরিশালে একটি মানবপাচার প্রতিরোধ আইনের একটি মামলায় আদালতের নির্দেশে সমঝোতা চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। মামলার বাদিসহ অন্যান্যদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের শর্তে ট্রাইব্যুনাল সমঝোতার একটি সুযোগ দিলেও সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি বিবাদী পক্ষ।

শনিবার সকাল ১১টায় বরিশাল মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত আইনজীবী সমিতি ভবনে আসামী পক্ষের আইনজীবী মান্নান মৃধার চেম্বারে এই সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে গত ৩১ আগস্ট মামলার সব শেষ ধার্য তারিখে বাদিসহ অন্যান্যদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের শর্তে সমঝোতার বিবাদী পক্ষকে একটি সুযোগ দেন ট্রাইব্যুনাল। 
গতকাল সমঝোতা বৈঠকে বাদি পক্ষের আইনজীবী মো. শাহাবুল ইসলাম সাজু এবং বাদি মোফাজ্জেল হোসেন হাওলাদার, মানবপাচারের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসা ফরহাদ খান, কাওছার মোল্লা, ইমরান খানের বাবা দুলাল খান, আতিকুর রহমানের বাবা নাসির উদ্দিন হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন। সমঝোতা বৈঠকে মামলার প্রধান আসামী জসিম উদ্দিনের মা জাহানারা বেগম এবং শ্বশুড় ও এই মামলার অন্যতম আসামী শামসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তবে প্রধান আসামী জসিম উদ্দিন, তার স্ত্রী জান্নাতুর রহমান জুথি, হারুন অর রশিদ, পলাশ হোসাইন, এনামুল হক ও ইমন কাজী অনুপস্থিত ছিলেন। 

সমঝোতা বৈঠকে জসিমের শ্বশুড় শামসুর রহমান মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তাদের কোন ধরণের ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকৃতি জানান। 

মানব পাচার মামলার প্রধান আসামী কাতারে পলাতক জসিম ও তার ভাই ভানুয়াতুতে কারান্তরীণ পলাশের মা জাহানারা বেগম তার দুই ছেলের দায় অস্বীকার করেননি। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার মতো সামর্থ এই মুহূর্তে তার নেই বলে সভায় জানান তিনি। সম্ভব হলে জমি বিক্রি করে তাদের কিছুটা হলেও ক্ষতিপূষিয়ে দিতে সম্মত হন তিনি। 

এ সময় আসামী পক্ষের আইনজীবী মান্নান মৃধা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বাদি ও সাক্ষীদের কাছ থেকে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়ে নেন। 
আসামী পক্ষের আইনজীবী আ. মান্নান মৃধা বলেন, ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে সমঝোতার চেষ্টা হয়েছিলো। প্রধান দুই আসামীর মধ্যে জসিম কাতারে পলাতক এবং পলাশ ভানুয়াতুতে জেলে। তার পরিবারের সামর্থ নেই ক্ষতিপূরণ দেয়ার। জসিমের মা জমি বিক্রি করে তাদের কিছুটা ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলেছেন। বাদি ও সাক্ষীরা এই প্রস্তাব মেনে নিলে সমঝোতা হবে, না হলে ট্রাইব্যুনালে বিচার হবে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালে এই মামলার অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য রয়েছে। 

তবে মামলার বাদি মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, বাদি এবং সাক্ষীরা ১৭ জন সর্বনি¤œ সাড়ে ১১ লাখ থেকে সাড়ে ২১ লাখ পর্যন্ত টাকা দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া ও কিউবা যাওয়ার জন্য। ২০১৭ সাল থেকে পরবর্তী ১ বছরের মধ্যে ১৭ জনকে ভানুয়াতু নিয়ে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করে পরিবার থেকে আরও টাকা আদায় করে তারা। পরে আইওএমর সহায়তায় দেশে ফিরে এসে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে তিনি (মোফাজ্জেল) ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর বরিশাল মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মো. জসিম উদ্দিন ও পলাশ হাওলাদারসহ তাদের নিকটাত্মীয় সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এখন পুর্নাঙ্গ ক্ষতিপূরণ ছাড়া সমঝোতার কোন সুযোগ নেই। আইনে যে প্রতিকার পান সেটা মেনে নেবেন।