বরিশালে রোগীতে ঠাসা হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড

বরিশালে রোগীতে ঠাসা হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড

বরিশালে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল অবস্থা। করোনা সংক্রামণ বাড়ছে আশংকাজনকভাবে। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে করোনা রোগীর সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়েছে। মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে বাড়ছে করোনা পরীক্ষার ভীড়। কেবল স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করার কারণেই এই অবস্থা বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। এতকিছুর পরও সরকারের দেওয়া ১৮ দফা নির্দেশনা উপেক্ষিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে কঠোর হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।

বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি গত বছরের তুলনায় দশগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার উদ্যোগ নেই। ফলে অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। হাসপাতলে রোগী ভর্তির হার কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় সাধারণ মানুষের যথেচ্ছার ঘোরাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছ, গতকল বৃহষ্পতিবার বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগী ছিল ১০০জন। গত বুধবার করোনা ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে ভর্তি ছিলেন ৯৩জন। যার মধ্যে করোনা সনাক্ত হয়েছে ২৫ জনের। গত মঙ্গলবার ভর্তি থাকা ৮৭ জনের মধ্যে করোনা সনাক্ত ছিলো ২৫জন এবং গত সোমবার ভর্তি থাকা ৫৪ জনের মধ্যে সনাক্ত হয়েছে ২২জনের।

এদিকে বরিশাল মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবের তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবার ২৪ ঘন্টায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবে ১৮১ জনের নমূনা পরীক্ষায় করোনা সনাক্ত হয়েছে ২৭ জনের। সনাক্তের হার ১৪ ভাগ। গত সোমবার ১৮১ জনের নমূনা পরীক্ষায় সনাক্ত হয়েছে ৩৭ জনের। সনাক্তের হার ১৮ ভাগ। গত রোববার ১৮১ জনের নমূনা পরীক্ষায় সনাক্ত হয়েছে ৩৭ জনের। সনাক্তের হার ছিলো ১৮ ভাগ। গত শনিবার ২৪৭ জনের নমূনা পরীক্ষায় সনাক্ত হয়েছে ২৭ জনের। সনাক্তের হার ৭ভাগ।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনডোর ডক্টরর্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও করোনা মনিটরিং কমিটির সদস্য ডা. সুদীপ হালাদার ভোরের আলোকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে রোগী বাড়ছে আশংকাজনক হারে। করোনা ওয়ার্ডের একটি বিছানাও ফাঁকা নেই। গতকাল ১০০জন রোগী ভর্তি ছিল। বর্তমানে মেঝেতেও রোগী ভর্তি হচ্ছে। এর মধ্যে হাসপাতালের পরিচালকের পদ শুণ্য থাকায় সমস্যার আরো তীব্র হচ্ছে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুরোধ জানান তিনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বরিশালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্বাস্থ্যবিধি মানতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হলেও সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে। গণপরিবহনের এক সিট ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। কিন্তু বরিশাল নগরীর দুটি বাস টার্মিনাল এবং নদী বন্দর থেকে বুধবার ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লা এবং অভ্যন্তরীণ রুটের বাস ও লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হয়েছে পুরোপুরি। পাশাপাশি সিটে আবার কখনও গাদাগাদি করে দাঁড়ানো যাত্রী নেয়া হচ্ছে বাসে। লঞ্চে ভীড় করেই যাচ্ছে যাত্রীরা। সব কিছুই চলছে আগের মতো স্বাভাবিক নিয়মে।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আবদুর রাজ্জাক ভোরের আলোকে বলেন, লঞ্চ-বাস এবং জনসমাগমে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। ফলে করোনা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। হঠাৎ করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ায় সেবা দিতে হিমশীম খাচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সরা। তবে গত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দিন রাত সেবা দিয়ে যাচ্ছে তারা। স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতেই হবে। তা না হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান ভোরের আলোকে বলেন, গত ১০ দিনে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার বিগত বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। নিজের জীবন, বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, দেশ ও দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানতে পুলিশ প্রশাসন নিরন্তরভাবে কাজ করছে। বাস মালিক সমিতি ও সাধারণ মানুষদের সঙ্গে বৈঠক করে স্বাস্থ্যবিধি মানতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ইতি মধ্যে নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ  নেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে যৌথ কর্মসুচি নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।