বরিশালে শিশুর লাশ উদ্ধার : হত্যা না আত্মহত্যা ক্ষতিয়ে দেখছে পুলিশ

বরিশালে শিশুর লাশ উদ্ধার : হত্যা না আত্মহত্যা ক্ষতিয়ে দেখছে পুলিশ

বরিশালে শিক্ষকের গালমন্দ এবং পিটুনী খাাওয়ায় অভিমান করে নুসরাত জাহান নোহা (১০) নামে তৃতীয় শ্রেণির স্কুল শিক্ষার্থী গালায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘরের চৌকাঠে ঝুলন্ত অবস্থায় শিশুর লাশ উদ্ধার করে হাসপাতলে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এঘটনায় স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নিহত শিশুর বাবা সুমন মিয়া। মেয়ের মা দাবি করেছে এটা আত্মহত্যা নয়, পুলিশ বলেছে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের নিজ বসত ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না ও গামছা পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে ওই শিশু শিক্ষার্থী।

নিহত শিশু নুসরাত জাহান নোহা উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা সুমন মিয়ার সন্তান এবং স্থানীয় দারুল ফালাহ্ প্রি ক্যাডেট একাডেমীর তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী।

ঘটনার পর বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে দারুল ফালাহ্ প্রি ক্যাডেট একাডেমীর সহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সুমন পাইককে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন শিশুর বাবা সুমন মিয়া।

জানা যায়, করোনা ভাইরাসের কারণে খাজুরিয়া দারুল ফালাহ্ প্রি ক্যাডেট একাডেমীর ক্লাশ বন্ধ ছিলো। গত এক সপ্তাহ আগে ক্লাশ শুরু হলে নুশরাত জাহান নোহা ক্লাশে যাওয়া শুরু করে। গত ৫ সেপ্টেম্বর ক্যাডেট একাডেমীতে মাসিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত ফলাফলে নুসরাত অকৃতকার্য হওয়ায় ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সুমন পাইক তাকে ক্লাশ রুমে নিয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের সামনে হাতে লাঠি দিয়ে পেটায় এবং গালমন্দ করে। এতে স্কুল ছাত্রী কষ্ট পায় এবং বাড়িতে ফিরে গিয়ে কান্নাকাটি করে। পরে দুপুরে সবার অজান্তে বসত ঘরের দোতলার আড়ার সঙ্গে ওড়না ও গামছা দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। দ্রত নোহাকে উদ্ধার করে তার বাবা সুমন মিয়া স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এদিকে নুসরাত জাহান নোহার মা তানিয়া বেগম অভিযোগ করেন, নুসরাতের বাবা সুমনের মোট চারটি বিয়ে। নুসরাত সৎ মায়ের সঙ্গে থাকতো। নুসরাতকে তিনি তার কাছে নিতে চাইলেও দেওয়া হয়নি। এমনকি তার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতেও দেওয়া হতো না। ডিভোর্সের পর তানিয়া বিয়ে করে ঢাকায় থাকেন।
নোহার মা তানিয় বেগম এটি আত্মহত্যা না হত্যা সে বিষয়টি তদন্ত করার দাবি করেছেন। একই সঙ্গে ঘটনাটি হত্যা হলে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারও দাবি করেছেন তিনি।

আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আফজাল হোসেন ভোরের আলোকে বলেন, শিক্ষকের বকাঝকা এবং মারের কারণে আত্মহত্যা করেছে শিশু নুসরাত এমন অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। মামলায় মৃত্যুর জন্য শিক্ষক শফিকুল ইসলাম পাইককে দায়ী করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ওই শিক্ষক পলাতক রয়েছে। তাকে গেপ্তারে অভিযোন চলছে। পুলিশ ওই ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে।

বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হক বলেন,  আগৈলঝারা থানা এলাকায় নুসরাত জাহান নোহা নামে এক শিশু স্কুল পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়া এবং শিক্ষক কর্তৃক বেত্রাঘাতের ঘটনায় আত্মহত্যা করেছে বলে তার বাবা বাদি হয়ে মামলা করেছে। মামলাটির তদন্ত চলছে। খুব শিঘ্রই প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হবে।