বরিশালে ২৪ ঘন্টায় ১০ মৃত্যু,বেড়েছে রোগী ভর্তি ও শনাক্তের হার

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি এবং মৃত্যুর হার বেড়েছে। একই সঙ্গে মেডিকেল কলেজের আরটি-পিসিআর ল্যাবে বেড়েছে করোনা শনাক্তের হার। এই অবস্থাকে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালেনের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
গত সোমবার দুপুর ১টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলের করোনা ওয়ার্ডে ১০জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের করোনা তথ্য সংরক্ষক জাকারিয়া স্বপন। এরা হলো শওকত হোসেন (৪০), আব্দুল কাদের (৭০), বাদল কর্মকার (৪২), মোয়াজ্জেম হোসেন (৭০), রাজিয়া বেগম (৬০), হাওয়া বেগম (৭২), সাইমুন (২৪), মাকসুদ তালুকদার ৪৫, মতিউর রহমান (৬০), মো. সুলতান (৬০)।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম জানান, গত বছরের জুলাইয়ের পর বরিশাল মেডিকেলের করোনা ওয়ার্ডে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সর্বোচ্চ চিকিৎসাধীন ছিলেন ১৪০ জন রোগী। গত বছর জুলাইয়ে করোনার প্রথম ঢেউয়ে সর্বোচ্চ ১২১জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলো মেডিকেলের করোনা ওয়ার্ডে। এর আগের ২৪ ঘন্টায় (সোমবার) নতুন ভর্তি হওয়া ২৭ জনসহ চিকিৎসাধীন ছিলেন ১১৮জন রোগী। করোনা ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি এবং মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে মেডিকেলের করোনা ওয়ার্ডে সাতক্ষীরা এবং বাগেরহাটের রোগী ভর্তি থাকায় তাদের মাধ্যমে বরিশালে করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করেন তিনি।
এদিকে গত ৪দিন ধরে ধরে মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবে নমূনা পরীক্ষা অনুযায়ী করোনা শনাক্তের হার ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও সব শেষ রিপোর্টে কিছুটা কমেছে। গত সোমবার রাতে প্রকাশিত রিপোর্টে ১৮৮জনের নমূনা পরীক্ষায় ৭১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৭ দশমিক ৩৭ ভাগ। এর আগে রবিবার রাতে প্রকাশিত রিপোর্টে করোনা শনাক্তের হার ছিলো ৪৮ দশমিক ৮০ ভাগ, শনিবারের রিপোর্টে ৪৬ দশমিক ২০ভাগ, শুক্রবারের রিপোর্টে ৪৪ দশমিক ৪৪ ভাগ এবং বৃহস্পতিবার শনাক্ত হয়েছে ৩৩ দশমিক ৩৩ভাগ। তবে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ শুধু নতুন নমূনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার বিবেচনা করছে।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবের ইনচার্জ ডা. একেএম আকবর কবির বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী কেবল নতুন নমূনা পরীক্ষার শনাক্ত বিবেচনা করা হয়। যারা ফলোআপ বা আগে থেকে পজেটিভ ছিলো তাদের নমূনা পরীক্ষায় ফের পজেটিভ রিপোর্ট হলেও মোট গড়ে তাদের বিবেচনা করা হয় না। তিনি বলেন, নতুন নমূনা পরীক্ষায় গত ২৭ জুন সর্বোচ্চ ৩৭ ভাগ করোনা শনাক্ত হয়েছে। সারা দেশের মতো বরিশালেও করোনা শনাক্তর হার বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবের ইনচার্জ ডা. একেএম আকবর কবির।
অপরদিকে দিন দিন করোনা সংক্রামণ বেড়ে গেলেও সাধারণ জনগণ মাস্ক পড়াসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে তেমন আগ্রহী নয়। নানা অজুহাতে মাস্ক ছাড়াই রাস্তায় বের হচ্ছেন তারা। তবে মাস্ক ব্যবহার করা উচিত বলেও তারা স্বীকার করেন।
মেডিকেলের করোনা ওয়ার্ডে সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের রোগী ভর্তি রয়েছে ৩জন। তাদের মাধ্যমে বরিশালে করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট পরীক্ষার ব্যবস্থা বরিশালের আরটি পিসিআর ল্যাবে নেই বলে জানিয়েছেন ল্যাব ইনচার্জ ডা. একেএম আকবর কবির।