বরিশালে ৭ দফা দাবিতে সিপিবির পথসভা

বরিশালে দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মানুষের মাঝে ন্যায্য মূল্যে রেশন কার্ড দিয়ে দ্রুত খাদ্যের ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ ৭ দফা দাবীতে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ওই পথসভার আয়োজন করে। এদিকে একই দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মরকলিপি দিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর প্রাণকেন্দ্র সদররোডে ওই পথসভার মাধ্যমে সরকারের কাছে তাদের দাবি তুলে ধরেন। এ ছাড়া দুপুরে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে গিয়ে দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠিত পথসভায় বক্তারা বলেন, এখনো সার্বিকভাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা কম হচ্ছে। আরো বেশি বেশি করোনা পরীক্ষা করে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আইসোলেশনে রেখে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। কর্মহীন দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা পৌছে দিতে হবে। খাদ্য চোরদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সকল দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মানুষের মাঝে ন্যায্য মূল্যে রেশন কার্ড দিয়ে দ্রুত খাদ্যের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সেলিমের সভাপতিত্বে পথ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক দুলাল মজুমদার, অ্যাড. বিশ্বনাথ দাস মুন্সি, মনির হোসেন প্রমুখ।
এসময় বক্তারা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে ধান ক্রয় করার পাশাপাশি ৬লক্ষ মেট্রিক টন নয়, ২ কোটি মেট্রিক টন ধান কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করে খাদ্য মজুদ করার জন্য আহবান জানান।
এদিকে বরিশাল জেলায় করোনা ভাইরাসের বিস্তাররোধ ও কর্মহীন নিম্নবিত্ত মানুষের দুর্ভোগ নিরসনে ৭ দফা দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটি।
বৃহষ্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটির পক্ষে আহবায়ক দেওয়ান আব্দুর রশিদ নীলু ওই স্মারকলিপি জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমানে হাতে তুলে দেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটির সদস্য আরিফুর রহমান মিরাজ, রুবিনা ইয়সমিন, ছাত্র ফেডারেশনের সম্পাদক সাকিবুল ইসলাম সাফিন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, করোনার বিস্তার থকে বাংলাদেশ তথা বরিশাল মুক্ত নয়। এই পরিস্থিতিতে সরকার একদিকে জনগণকে ঘরে থাকার ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার উপদেশ দিচ্ছে। অপরদিকে গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে আগামী ১০ মে বিপনি বিতানগুলো পুরোপুরি খুলে দেয়া হবে। লকডাউন যে উদ্দেশ্যে করা হয়, তার কোনটাই দেশে পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। যা বরিশাল জেলাতে পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে দেশ এখনও করোনা ভাইরাসের সংক্রমনে ঝুকিমুক্ত নয়।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, দলীয় বিবেচনা না করে, ত্রাণ চুরি কঠোরহস্তে দমন করে সরকারি ত্রাণ বঞ্চিত দরিদ্র মানুষের ঘরে অবিলম্বে তা পৌঁছে দেয়া, রেশন কার্ড বিতরণের তালিকা তৈরিতে দলীয়করণের নীতি রোধ করা, লকডাউন ও সাধারণ ছুটি চলকালীন সময়ে বাজার, দোকানপাটসহ সর্বত্র স্বাস্থ্যগত দুরত্ব ও লাকডাউন নিয়মবিধি বজায় রাখার ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, অসাধু ব্যবসায়ীদের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অপতৎপরতা রোধে মনিটরিং অব্যাহত রাখা, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে করোনা পরীক্ষার ল্যাবে টেকনোলজিস্ট সংকটের সমাধান করা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা, সরকারি নির্ধারিত মূল্যে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা এবং ক্রয়ের পরিধি বৃদ্ধি করা।
গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটির পক্ষে আহবায়ক দেওয়ান আব্দুর রশিদ নীলু বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই আমরা যতসামান্য সামর্থ দিয়ে সচেতনতামুলক প্রচার পত্র বিলি, মাক্ত ও হ্যান্ড ওয়াস প্রস্তুত এবং বিলি করার পাশাপাশি দুস্থ পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রি বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছি। কিন্তু আমাদের এ প্রয়াস মোটেই যথেষ্ট নয়। এ অবস্থায় মানব বিপর্যয়ের হাত থেকে বরিশালবাসীকে রক্ষা করে করোনা সংকট মোকাবেলায় আমরা কিছু দাবি তুলে ধরেছি এবং বাস্তবায়নের আহবান জানিয়েছি।