বরিশালের নির্মম ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি সাধারণের জন্য উন্মুক্ত

বরিশালের নির্মম ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি সাধারণের জন্য উন্মুক্ত

বরিশালের নির্বচারে নারী-পুরুষদের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে, নীরিহ মানুষদের হত্যা করা হয়েছে তার সাক্ষী বরিশালের ওয়াপদার বাঙ্কার ও টর্চার সেল। পাক বাহিনীর ব্যবহৃত বাঙ্কার ও টর্চার সেল সংরক্ষণের মাধ্যমে নতুন প্রজ¥ পাকিস্তানীদের নির্মমতা সম্পর্কে জানতেক পারবে।

বরিশাল নগরীর বান্দ রোডের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ওয়াপদা) কলোনী এলাকায় বাঙ্কার ও টর্চার সেল সংস্কার ও সংরক্ষণ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহসহ মৃক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট নাগরিকরা।

মঙ্গলবার বিকেল চারটায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বেলুন-ফেস্টুন উড়িয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

বক্তারা বলেন, বরিশালে ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর নির্মম নির্যাতন হত্যার ঘটনা নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার জন্য একটি অনন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে বরিশালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় ওয়াপদায় পাক বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের সাক্ষী ব্যবহৃত স্থাপনা, বাঙ্কার ও টর্চার সেল সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। বরিশাল মুক্ত দিবস উপলক্ষে সেদিনের নির্মম ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
এ সময় ৭১-এর রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা, বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান, পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলামসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

ইতিহাসের সাক্ষী ঐতিহাসিক বাঙ্কার, টর্চার সেল সংস্কার ও সংরক্ষণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বরিশাল সিটি করপোরেশন। প্রকল্পে সহযোগিতা দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, বরিশাল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বরিশালের নিরস্ত্র বাঙালী নারী-পুরুষদের ধরে এনে এই টর্চার সেলে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হতো। পরে তাদের হত্যা করে লাশ কীর্তনখোলা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হতো। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বরিশালে বাঙালি নারী-পুরুষের উপর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসরদের নির্মম নির্যাতন ও নৃশংসতার স্মৃতি বহন করে চলেছে বরিশাল ওয়াপদা কলোনি।

মুক্তিযুদ্ধে হানাদারদের নির্মমতার সাক্ষী এই টর্চার সেল এবং বাঙ্কারটি অযত্ন-অবহেলায় প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো। স্থানীয় সাংস্কৃতিক অঙ্গনের দাবির প্রেক্ষিতে বরিশাল সিটি করপোরেশন ওয়াপদা কলোনীর প্রায় ১ একর ৩০ শতাংশ জমিতে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই টর্চার সেল ও বাঙ্কার সংস্কার করার উদ্যোগ নেয়। গতকাল ৮ ডিসেম্বর বরিশাল মুক্ত দিবসে টর্চার সেল ও বাঙ্কার সংস্কার ও সংরক্ষণ কাজের উদ্বোধন করা হয়।

এ রকম একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা সংস্কার হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বরিশালের সুশীল সমাজ ও মুক্তিযোদ্ধারা। তারা বলেন, টর্চার সেল ও বাঙ্কারটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে পাক বাহিনীর নিষ্ঠুরতার বিষয়টি নতুন প্রজন্মের অজানা থেকে যেত। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত এই স্থাপনা সংস্কার করায় এটি এখন আগামী প্রজন্ম দেখতে পারবে। তারা জানতে পারবে হানাদারদের নির্মম নির্যাতন-নিষ্ঠুরতার কথা। এর মাধ্যমে তাদের দেশপ্রেম আরও গভীর হবে আশা করেন। 

ঐতিহাসিন নিদর্শন সংস্কার করে নতুন প্রজন্মকে জানার সুযোগ দেয়ায় সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিনসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। 

বরিশাল সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন নির্মমতার স্মৃতি সংরক্ষণ করে নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস জানার সুযোগ করে দিতে পেরে আমি আনন্দিত। আগামীতেও মুক্তিযুদ্ধের সকল স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেন তিনি।