বরিশালের হিজলায় গ্যাস ও খনিজ সম্পদ উত্তোলনের সম্ভাবনা

বরিশালের হিজলা উপজেলার দুটি ইউনিয়নে গ্যাস ও খনিজ সম্পদ উত্তোলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। উপজেলার গুয়াবাড়িয়া ও কোরালিয়া ইউনিয়নের ভূতাত্বিক অবস্থা দেখে গ্যাস থাকার সম্ভাবনা আছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। খনিজ সম্পদ থাকার সম্ভবনায় হিজলায় তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য সিসমিক জরিপের প্রকল্প গ্রহণ করা হবে এমন আশ^াস দিয়েছেন জ¦ালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
২৭ মার্চ রোববার দুপুরে বরিশালের হিজলা উপজেলার গুয়াবাড়ি ও কোরালিয়া সম্ভাব্য খনিজ সম্পদ থাকার এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একথা বলেন জ¦ালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হিজলায় খনিজ সম্পাদ আছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৫২ সাল থেকে জরিপ শুরু হয়। ষ্ট্যা-র্ড ভ্যাক্যুয়াম অয়েল কোম্পানী এই জরিপ করে। এরপর ১৯৬৩-৬৪ সালে দ্বিতীয়বার জরিপ করে অয়েল অ্যা- ডেভেলপমেন্ট কোম্পানী। একই বছর ভৌগলিক (জিওগ্রাফিক) তদন্ত করা হয়। ১৯৫২ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান পেট্রোঢিয়াম কোম্পানী, পাকিস্তনাী সেইল অয়েল কোম্পানী, ষ্ট্যা-র্ড ভ্যাক্যুয়াম কোম্পানী নানাভাবে জরিপ চালায়। তবে বড় সম্ভাবনা দেখা দেয় ১৯৬৭-৬৮ এবং ১৯৭৬-৭৭ সালে। এর প্রেক্ষিতে ১৯৭৬ সালে উপজেলার গুয়াবাড়িতে ৪ হাজার ৭৩২মিটার মাটির এবং কোরালিয় ইউনিয়নের ৪ হাজার ৫৫৬ মিটার মাটির তলা পর্যন্ত খনন করে খনিজ সম্পাদ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চত হয়। যা প্রতিবেদন আকারে ১৯৭৮ সালের ২৪ জুনে প্রকাশও হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কাররেণ এরপর আর খনিজ সম্পদ উত্তোলনে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে, ১৯৭৬ সালে রাশিয়ার কোন প্রতিষ্ঠান ওই খনন কাজ করে গ্যাসের বিষয়টি নিশ্চিত করে। তারা ৫-৬ বছর ধরে কাজ করেছে। হাজার হাজার মিটার পাইপ মাটির নিচে ঢুকিয়ে কূপ করেছিল। কিন্তু তাদের মতো করে চুক্তি না হওয়ায় গ্যাস উত্তোলন না করে তারা গ্যাসকূপ দুটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে চলে যান। এমনও অভিযোগ করেছেন রাশিয়ার ওই কোম্পানী কূপ দুটিতে শীষা ঢেলে এর মুখ স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে সেই অবস্থায় পড়ে আছে। এখানে পুনরায় খনন করা হলে গ্যাস পাওয়া যাবে।
এব্যাপারে বাপেক্স এবং পেট্রোবাংলা দাবি করেছে, তখনকার সময় বাংলাদেশে কোন বিশেষজ্ঞ ছিল না। বিদেশীদের ওপর নির্ভর করে গ্যাস সম্পদ আহরণের চেষ্টা করা হতো। তাই ওই পরামর্শকরা যা বলতো সেটাই বাংলাদেশকে মেনে নিতে হতো। বর্তমানে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ ক্ষেত্রের অনুসন্ধান, জরিপ ও আহরণে অভিজ্ঞ দেশ হিসেবে স্বীকৃত। সেকারণেই বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খনিজ সম্পদ ক্ষেত্রগুলোর নতুন করে অনুসন্ধান এবং গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাপেক্স এবং পেট্রোবাংলা সম্ভাবনাময় সকল এলাকায় জরিপ পরিচালনা করবে।
এদিকে হিজলা উপজেলা পরিদর্শন শেষে জ¦ালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, এই এলাকার ভূতাত্বিক অবস্থা দেখে গ্যাস থাকার সম্ভাবনা আছে বলে ধারণা করনা হচ্ছে। গ্যাস থাকলে কোথায় আছে সেটি আগে খুঁজে বের করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে এর পরিমাণ নির্ধারণ করাও দরকার। তাহলে এব্যাপারে বাণিজ্যিকভাবে চিন্তাভাবনা করা যাবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ইতিমধ্যে এব্যাপারে প্রকল্প তৈরী করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এটি অনুমোদিত হলে সিসমিক জরিপ কাজ শুরু করা হবে। দেশে আধুনিক পদ্ধতিতে সিসমিক জরিপের কাজ হচ্ছে এখন।
বাপেক্সের জেনারেল ম্যানেজার মেহেরুল হাসান বলেন, হিজলার দুটি স্থানে গ্যাসের সম্ভাবনা আছে এমনটা মনে হওয়ার কারণেই সরকার বিনিয়োগের চিন্তাভাবনা করছে।
বাপেক্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে আগামী অক্টোবর থেকে জরিপ কাজ শুরু হতে পারে। এখানে কমপক্ষে ১৩০০ লোক একসঙ্গে কাজ করবে। তিন মাস চলবে তথ্য সংগ্রহের কাজ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে অত্যাধুনিক ‘রিগ’ দিয়ে খনন কাজ শুরু হবে।
বরিশাল-৪ (হিজলা- মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে জানি হিজলায় গ্যাস আছে। নানা কারণে জরিপ করানো যাচ্ছিল না। এবার জ¦ালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব, বাপেক্স এবং পেটোবাংলার বিশেষজ্ঞরা এসে পরিদর্শন করেছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সরকার আন্তরিকভাবে এই কাজটি করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।