বাংলাদেশের কাছে অস্ত্র বিক্রির খসড়া হস্তান্তর করল যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক সংলাপে বৈশ্বিক নিরাপত্তায় বাংলাদেশকে নিয়ে পথ চলতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে বাংলাদেশে অস্ত্র বিক্রি করতে জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট (জিসোমিয়া) এর খসড়া হস্তান্তর করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা সহসা প্রত্যাহার হচ্ছে না বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটি।
যদিও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও এ বিষয়ে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে নন-পেপার (কূটনৈতিক পত্র) হস্তান্তর করে বাংলাদেশ।
রবিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অষ্টম রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ১১টায় শুরু হয়ে প্রায় ১টা পর্যন্ত চলে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক সংলাপ। এতে নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন ও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড।
সংলাপে অংশ নেয়ার আগে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড বলেন, ‘বৈশ্বিক নিরাপত্তায় বাংলাদেশকে নিয়ে পথ চলতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের ফলে বৈশ্বিকভাবে গণতন্ত্র ও আন্তর্জাতিক আইন এখন হুমকির মুখে।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশসহ যুক্তরাষ্ট্র তার সব অংশীদারকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেও উল্লেখ করেন ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড।
সংলাপের পরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ন্যুল্যান্ড বলেন, (র্যাবের) নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জটিল ও কঠিন। আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করেছি। র্যাবের কার্যক্রম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে আমরা বলতে পারি গত তিন মাসে এসব বিষয়ে র্যাবের কার্যক্রমে আমরা উন্নতি লক্ষ্য করেছি। আমরা সরকারের পরিকল্পনাসহ একটি প্রতিবেদন পেয়েছি এবং এসব বিষয়ে কাজ করতে চাই। কারণ নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় আমাদের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, বিশ্বের কোথাও মাবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটলে যুক্তরাষ্ট্র চুপচাপ বসে থাকে না। যখন আমরা মৌলিক আইনের লংঘন দেখতে পাই, এ বিষয়ে কথা বলি। আমরা ভবিষ্যতেও এ বিষয়ে কথা বলব। কারণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সন্ত্রাসবাদ দমনে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (জিসোমিয়া) খসড়া বাংলাদেশকে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমি আশা করি এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখবে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন বলেন, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা করেছি। এ বিষয়ে আমাদের পদক্ষেপ তাদের বিস্তারিত জানিয়েছি। সামনে অগ্রগতি হবে। র্যাবও তার সংশ্লিষ্টদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ জানিয়েছি। আমরা এটা ব্যাখ্যা করেছি কীভাবে এই নিষেধাজ্ঞা সরকারের সন্ত্রাসবাদ ও আন্তরাষ্ট্রীয় অপরাধ মোকাবেলা কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং পাশাপাশি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগের বিষয়েও বিস্তারিত জানিয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের নেয়া কিছু উদ্যোগের বিষয় উল্লেখ করে আমরা একটি নন-পেপার (কূটনৈতিক পত্র) ডোশিয়ার হস্তান্তর করেছি। তারা এটা নিয়ে যাবে এবং দেখবে। বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চালছে এবং আশা করি এই বিষয়টা সময়মত সমাধান হবে।
সচিব বলেন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সিকিউরিটি, ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি, সুশাসন, সন্ত্রাসবাদ দমন, উন্নয়ণ, রোহিঙ্গা ইস্যু, ইউক্রেন-রাশিয়া পরিস্থিতি, সাইবার ও নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ কমন বিয়গুলোতে আলোচনা হয়েছে।
সংলাপে অংশ নিতে শনিবার ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড। ছয় সদস্যের একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
সফর শেষে সোমবার নয়াদিল্লির উদ্দেশ্য ঢাকা ত্যাগ করবেন মার্কিন এ কূটনীতিক প্রতিনিধি দল।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৭ম সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক সংলাপে মূলত উভয় দেশের মধ্যে সব ইস্যুতে খোলামেলা আলোচনা হয়।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবে সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমদসহ বাহিনীর সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।