বাকেরগঞ্জে সাংসদ রত্না: ‘নেই উন্নয়নে, আছেন ভাগবাটোয়ারায়’

বরিশাল-৬ বাকেরগঞ্জের সাংসদ নাসরিন জাহান রত্নাকে এলাকার উন্নয়নে পাওয়া যাচ্ছে না এমন অভিযোগ সাধারণ মানুষের। সাংসদের বিরুদ্ধে এমনও অভিযোগ আছে উন্নয়নে ভূমিকা না রাখলেও সরকরি দলের সঙ্গে সমঝোতা ও ভাগবাটোয়ারায ব্যস্ত তিনি। সারা দেশে অবকাঠামোসহ ব্যাপক উন্নয় হলেও কেবল সাংসদের উদ্যোগহীনতায় উন্নয়ন বঞ্চিত এলাকা হিসেব পরিচিতি পাচ্ছে বাকেরগঞ্জ।
বকেরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রত্নার জনবিচ্ছিন্ন এবং অযোগ্যতার কারণে উন্নয়ন বঞ্চিত হচ্ছে বাকেরগঞ্জ উপজেলা। তিনি উপজেলার বাইরে ইউনিয়নগুলোর কোন খোঁজ খবর রাখেন না। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার উন্নয়নে ডিও দিয়েও সহযোগিতা করছেন না। সড়ক যোগাযোগসহ অবকাঠামো উন্নয়নে তার ভূমিকা শুন্যের কোঠায়। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে সকল সংসদীয় এলাকাগুলোর উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। কিন্তু বাকেরগঞ্জের ১৪ ইউনিয়নে উন্নয়ন নেই বললেই চলে। মহাজোটের সরিক জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য রত্নার কর্মকাণ্ডে মহাজোটের মূল দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও ক্ষুব্ধ।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. আবুল হোসাইন খান বলেন, সাংসদ রত্না আমিন সরকারে আছে জোটের কারণে, ভোটে নয়। বিনা ভোটের এমপিদের জনসম্পৃক্ততা থাকে না। জাতীয় পার্টি ছোট একটা দল। বাকেরগঞ্জে সরকারি দলের সঙ্গে সমঝোতা করে ভাগবাটোয়ারা ছাড়া আর কোন উন্নয়নে কাজে নেই তিনি। এলাকার উন্নয়নে তার কোন ভূমিকা নেই। এই অবস্থা চলতে পারে না।
এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, মহাজোটের সরিক দল হওয়ায় বাকেরগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতারাও কাজ করতে পারছেন না। স্থানীয় সাংসদের জনবিচ্ছিন্নতা এবং উন্নয়নে ভূমিকা না রাখায় সেই জায়গা পূরণের চেষ্টা করছেন কেন্দ্রীয় জাসদে নেতা ও বাকেরগঞ্জের বাসিন্দা মোহাম্মদ মহসিন। ইতি মধ্যে বরিশাল-শিয়ালঘুনি সড়কের গোমায় সেতু প্রকল্প, কাটাদিয়া এলাকায় রাঙামাটি নদীতে ফেরি ব্যবস্থা, বরিশাল-নেহালগঞ্জ-সিদ্দিকবাজার সড়কের জন্য ৩০২ কোটি টাকার প্রকল্প, নেহালগঞ্জ এবং সিদ্দিক বাজার নদীতে সেতু নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে এলাকায় আস্থার জায়গা সৃষ্টি করেছেন।
তবে মোহাম্মদ মহসিনের এসব উদ্যোগের বিষয়ে নেতিবাচক কথা বলেছেন সাংসদ নাসরিন জাহান রতœা। তিনি দাবি করেন, বাকেরগঞ্জে নেওয়া ওইসব প্রকল্প তার ডিওতে হয়েছে। বিশেষ করে গোমা সেতু এবং কাটাদিয়া রাঙামাটি নদিতে ফেরী সার্ভিসও তার ডিওতে হয়ে দাবি করেন। তবে তার পক্ষে কোন শক্ত যুক্তি নেই। জাসদ নেতা করিয়েছেন তার পক্ষে যুক্তি এবং ডিওর কপি রয়েছে। তারপরও সাংসদ কাটাদিয়ার ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধন করে তিনি সেটা তার অবদান দাবি করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালে তখনকার মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ডিও দেন বরিশাল-লক্ষিপাশা-দুমকী সড়কের ১৪ কিলোমিটারে গোমা সেতু নির্মাণের জন্য। পরে সড়ক সপরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সেটি অনুমোদন করেন। একইভাবে ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট তখনকার সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী রাসেদ খান মেনন বাকেরগঞ্জ উপজেলার রাঙামাটি নদীতে ফেরি সার্ভিস চালুর জন্য সড়ক ও সেতুমন্ত্রীকে অনুরোধপত্র পাঠান। ১৯ আগস্ট সেটি সড়ক ও সেতু পরিবহন মন্ত্রণালয়ে নথিভুক্ত হয়। ২৫ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সড়ক ও জনপথ বিভাগ তাতে স্বাক্ষর করেন। ২৭ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিবের স্বক্ষর শেষে ২৮ আগস্ট মন্ত্রীর অনুমোদন পায়। সেখানে ফেরি সার্ভিস চালু হয়েছে। তবে সাংসদ সেখানে শোডাউন করে তার উন্নয়ন বলে দাবি করেছেন।
বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা ইউনয়নের এক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, আমরা বাকেরগঞ্জ এলাকার মানুষ উন্নয়ন বঞ্চিত। এক দিকে দলীয় সাংসদ না থাকা, অন্যদিকে মহাজোটের সাংসদ নাসরিন জাহান রত্না এলাকার উন্নয়নে কোন ভূমিকা রাখছেন না। সব মিলে দল ক্ষমতায় থাকলেও সেরকম দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন হচ্ছে না। আমরা চাই মহাজোটের সংসদ সদস্য উদ্যোগ নিয়ে এলাকার উন্নয়নে কাজ করুক।
জাসদ নেতা মোহাম্মদ মহসিন বলেন, একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি সংদস সদস্য হওয়ায় এলাকাবসী উন্নয়ন বঞ্চিত হচ্ছে। শেখ হাসিনা সরকারের ১২ বছরে সারা দেশে উন্নয়রে জোয়ার বইয়ে গেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের অদক্ষতার কারণে বাকেরগঞ্জে উন্নয়নের ছিটেফোটাও হয়নি। তার দ্বারা কোন উন্নয়ন সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সাংসদ উদ্যোগ না নেওয়ায় পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি প্রকল্প মহাজোটের সরিক সাবেক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাসেদ খান মেননের ডিও নিয়ে করা হয়েছে। ওই ডিওগুলো সড়ক পরিবহন ও সতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গুরুত্বসহকারে বিবেনচান করায় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু সাংসদ ওইসব প্রকল্প নিয়েও রাজনীতি করতে চান।
এব্যাপারে বরিশাল-৬ বাকেরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য নাসরিণ জাহান রত্না মুঠোফোনে (০১৭১১××××৭৭) যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাকেরগঞ্জের উন্নয়ন এবং স্থানীয় সাংসদের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে জানতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম চুন্নুর মুঠোফোনে কল দিলে তিনি বলেন, আমি বর্তমানে অসুস্থ্য। সুস্থ্য হয়ে এব্যাপারে কথা বলবো।