বাজেট হোতে হবে কৃষি, শিক্ষা ও প্রযুক্তিবান্ধব

বাজেট হোতে হবে কৃষি, শিক্ষা ও প্রযুক্তিবান্ধব

গতকাল বৃহষ্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১-২২ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এই বাজেট আমাদের আগামীর পথে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে এমনটা প্রত্যাশা। এই বাজেট আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছরের মাইল ফলক ছুঁয়েছে। কৃষি নির্ভর বাংলদেশ এখনো কৃষির ওপরই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। যদিও আমরা অন্যান্য ক্ষেত্রেও এগিয়ে চলেছি। কিন্তু আমদের বাজেট এখনো কৃষিকে সেভাবে ছুঁয়ে যেতে পারেনি।

কেবল কৃষির কথা বললে ভুল হবে। একই সঙ্গে আমাদের বাজেটে শিক্ষা, সংস্কৃতি ক্ষেত্রেও সেভাবে বরাদ্দ থাকছে না। সংস্কৃতিতে পৃষ্ঠপোশকতার অভাবে ধ্বংসের মুখোমুখী আমাদের সংস্কৃতি। তথ্য প্রযুক্তি দিয়ে বাংলাদেশ ভালোভাবে যাত্রা শুরু করলেও বাজেটে যেভাবে প্রভাব পড়ার দরকার সেভাবে পড়ছে না। সব সময় পিছিয়ে থাকছে শিক্ষা প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতি। সাধারণ মানুষের প্রত্যঅশা কৃষি, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং প্রযুক্তিবান্ধব বাজেট হওয়া অতি জরুরী।

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিটি বাজেটই রেকর্ড ভেঙেছে। এবার তৃতীয় মেয়াদের দ্বিতীয় বাজেটেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। গত বাজেটের চেয়ে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা বেশি বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। মোট বাজেটের ৩৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশের বেশি হলো ঘাটতি। যা বৈদেশিক অথবা অভ্যন্তরীণ সোর্স থেকেই ঋণের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে।

প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে ড. কামাল হোসেন বলেন, বাজেটে রেকর্ড পরিমাণ ঘাটতি রয়েছে যা দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে সরকার বাজেট বাস্তবায়ন করবে। এতে ঋণের বোঝা গিয়ে পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। সাধারণ মানুষের জন্য সৃষ্টি হবে মহাসঙ্কট। তা ছাড়া করোনা মহামারীর কারণে দেশের অনেক মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে নেমে গেছে তাদের সহায়তায় সরকারের কোনো পদক্ষেপ বাজেটে দেখা যায়নি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এ বাজেট গণবিচ্ছিন্ন। দেশে চলমান কোভিড-১৯ মোকাবেলায় কোনো বরাদ্দ নেই। দিন আনে দিন খায় এমন লোকদের জন্য বাজেটে কিছু নেই’। ‘করোনার এই মহামারীকালে নতুন অর্থবছরের জন্য রেকর্ড ঘাটতি রেখে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট দিয়েছেন। বাজেটের ছয় লাখ কোটি টাকা খরচ করতে হলে অর্থমন্ত্রীকে এক এক তৃতীয়াংশই ঋণ করতে হবে। যার বোঝা গিয়ে পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর’।

বাজেট সম্পর্কে অর্থনীতিবিদরা বিসদভাবে বিশ্লেষণ করতে পারবেন। বাজেটে রাজস্ব কত, ঘাটতি কত, কোথা থেকে ঘাটতি মেটানো হবে। এসব বিষয়ে বিস্তর আলোচনাও হয়। ওই আলোচা বাজেটে তেমন কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারে না।  কিন্তু আমাদের দেশের কৃষক, সাধারণ মানুষ বাজেটের আকার, প্রকার, প্রবৃদ্ধি, খাটতি সম্পর্কে কিছুই জানে না। জানতে চায়ও না। তাদের চাওয়া কৃষক তাঁর উৎপাদিত পন্যর যেন ন্যাজ্য মজুরী পায়। ধানের দাম যেন উৎপাদন খরচের চেয় কম না হয়। কৃষক যেন মাঠে কাজ করার পর স্বস্তিতে ঘুমাতে পারে। তাদের সন্তানরা যেন শিক্ষার সুযাগ পায়। বাজেট যেন কৃষিবান্ধব হয় এটাই তাদের প্রত্যাশা।

আমরা জানি, যে দেশ যত সংস্কৃতিতে এগিয়ে সে দেশ তত সমৃদ্ধ। বাংলাদেশও সেই সমৃদ্ধির পথে হাঁটছে। কিন্তু বাজেটে সংস্কৃতি ক্ষাতে বরাদ্দর চিত্র দেখলে মনে হবে সংস্কৃতির কোন প্রয়োজনই নেই। দেশে সংস্কৃতি চর্চার পথ সুগম না হলে কিশোর যুবকরা নেতিবাচক কাজের সঙ্গে বেশি যুক্ত হয়। যার নজির আমরা দেখেছি জঙ্গী সদস্য হচ্ছে শিক্ষিত যুবকরা। এটা এক ধরণের অশনিসংকেত। আমরা আর এধরণের ঘটনা দেখতে চাই না। তাই সংস্কৃতির দিকে আরো গুরুত্ব দেওয়া দরকার। তাই বাজেটে সংস্কৃতি চর্চায় বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। 

দরকার গণমূখী শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে শিক্ষখাতে বরাদ্দ বাড়ানো। শিক্ষা উপকরণের দাম সাধারণ কৃষকের নাগালে রাখতে হবে। যাতে কৃষক তাঁর পন্য উৎপাদন ও বিক্রি করে সেই অর্থে জীবনযাপন ও শিশুদের শিক্ষার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। আমরা চাই, মুক্তিযুদ্ধের বাংলদেশে কৃষিবান্ধব একটি যুগোপযোগী বাজেট প্রনয়ণ করা হবে। যে বাজেট কৃষি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, তথ্যপ্রযুক্তিসহ সব সমৃদ্ধির পথে এগোনোর সকল সূচককে সমান গুরুত্ব দেবে।