বাবুগঞ্জে আমনের বাম্পার ফলন, ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কা

বাবুগঞ্জে আমনের বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কায় আছেন কৃষকেরা। চলতি মৌসুমে বাবুগঞ্জে আমনের ভালো ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আশানুরুপ ফলনের কারণ বলে জানিয়েছেন একাধীক কৃষক। তবে গত দুদিন যাবৎ বৈরী আবহাওয়া এবং গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির কারনে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। ফলন ভালো হলেও ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় আমন চাষিরা।
তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে মানুষ ব্যস্ত থাকায় অধিকাংশ এলাকায় দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। ফলে ধান কাটতে বিলম্ব হচ্ছে। এতে জমিতে পাকা ধান ঝরে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরেজমিনে বিভিন্ন ঘুরে দেখা গেছে, কিছু কিছু এলাকায় এখনও আধাপাকা ধান মাঠে রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠে আমন ধান কাটার ধুম পড়েছে। সোনালি ধান কাটা, মাড়াই ও ঘরে তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় কৃষকরা। উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে বাবুগঞ্জ উপজেলায় ৯ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। খবর নিয়ে জানা গেছে চলতি আমন মৌসুমে সরকার ভর্তুকির মাধ্যমে বাবুগঞ্জ উপজেলায় কৃষকদের ১টি কম্বাইন্ড হারভেস্টর বরাদ্দ দেওয়া হলেও সেটি বিতরণ হচ্ছে না। জমি সমতল না থাকার কারণে কৃষকরা কম্বাইন্ড হারভেস্টর নিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন না। এবছর আমন মৌসুমে বাবুগঞ্জ উপজেলায় ৭শত জন কৃষককে বিনা মূল্যে উন্নত জাতের বীজ ও রাসায়নিক সার দেওয়া হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে। দেহেরগতি ইউনিয়নের দক্ষিণ রাকুদিয়া গ্রামের কৃষক ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘নিয়মিত পরিচর্যা, মেরামত ও সময়মতো সার প্রয়োগের ফলে ফলন ভালো হয়েছে। তবে শ্রমিক সংকট থাকায় জমি থেকে ধান কাটতে সময় বেশি লাগছে। যারা হারভেস্টর মেশিন দিয়ে ধান কাটতে পারছেন,তারা কম সময় ও অল্প খরচে ফলন ঘরে তুলতে পারছেন’। চাঁদপাশা ইউনিয়নের কালিকা পুর গ্রামের কৃষক মোঃ মকবুল হোসেন ফকির বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং পোকার আক্রমণ ও রোগ-বালাই কম হওয়ায় ফলন বেশি হয়েছে।
এবছর উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান লাগিয়েছি। ফলনও ভালো হয়েছে। যদি ধানের ভালো দাম পাওয়া যায়, তাহলে লাভ জনক অবস্থানে থাকবেন বলে জানান তিনি’। বাবুগঞ্জ উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, এবছর ৯ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। তবে আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৬ শত হেক্টর জমিতে। ইতিমধ্যে উপজেলার প্রায় ২৫ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহ মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সার্বক্ষণিক কৃষকদের সার, কীটনাশক প্রয়োগে সচেতন করাসহ আলোক ফাঁদ তৈরি করে পোকামাকড় দমনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। ফলে এবছর আমনের আবাদ ভালো হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নাসির উদ্দিন বলেন, এবছর আমনের জন্য আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগন স্থানীয় কৃষকদের উন্নত জাতের বীজ ও নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। চলতি আমন মৌসুমে সরকার ভর্তুকির মাধ্যমে বাবুগঞ্জ উপজেলায় কৃষকদের ১টি কম্বাইন্ড হারভেস্টর বরাদ্দ দিয়েছেন। এতে অল্প খরচে ধান কাটা, মাড়াই এবং মাঠ থেকে ধান আনা সহজ হবে। পর্যায়ক্রমে কৃষকেরা যান্ত্রিক নির্ভরশীল হলে, শ্রমিক সংকট কেটে যাবে এবং ফসল উৎপাদন বাড়বে।