বাড়ছে গাড়ি ও গতি, হতাশায় মহাসড়ক

বাড়ছে গাড়ি ও গতি, হতাশায় মহাসড়ক

বহুল প্রতীক্ষিত ‘পদ্মা সেতু’  উদ্বোধন হয়েছে। এর ফলে দক্ষিনের রুটে গাড়ির সংখ্যা  বেড়েই চলছে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের পরিবহন খাতেও আসছে ব্যাপক পরিবর্তন। এ লক্ষ্যে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ করছে পরিবহন মালিকরা। দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীসেবা বৃদ্ধি করতে নতুন ও আধুনিক অর্ধশত-এর বেশি বাস নেমেছে। জানাগেছে এখনো রুট পারমিটের জন্য অপেক্ষায় আছে অনেকে। এ নিয়ে কোম্পানিগুলোর মধ্যে চলছে ‘নীরব প্রতিযোগিতা’। এদিকে পদ্মা সেতুর চালুর প্রথম দিনেই সাকুরা পরিবহন দুই ঘন্টা ৫০ মিনিটে বরিশাল  থেকে ঢাকায় পৌঁছেছে। এতো দ্রুত গতিতে গাড়ি চলাচলে সড়কে ঝুঁকি বেড়েই যাচ্ছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।

পদ্মা সেতু নিয়ে বরিশালের মানুষের মধ্যে যেমন উচ্ছাস আছে, তেমনি আশঙ্কাও আছে। সেতু খুলে দেওয়ার পর যানবাহনের চাপ বাড়ছে ঢাকা-বরিশাল সড়কে। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশে সমস্যা তৈরি না হলেও ভাঙ্গা মোড় থেকে বরিশাল এবং বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর ও কুয়াকাটায় যেতেই ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। যানবাহনের চাপে এই সড়কে যানজট আরো বাড়বে বলে মনে জানান একাধীক যাত্রীরা। কারণ এ সড়কের প্রশস্ততা মাত্র ২৪ ফুট।

স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত ভাঙ্গা মোড় থেকে বরিশাল এবং বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত সড়ক প্রশস্ত করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

রোড ট্রান্সপোর্ট অর্থরিটি (বিআরটিএ) বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় বরিশালের সড়ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ওই সভায় বলা হয়েছে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর পরই বরিশালের দিকে যানবাহনের চাপ বাড়বে। কিন্তু বরিশালে বাইপাস কোন সড়ক নেই।

সভায় আরও বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু চালু হলে বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনাও বাড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। তাই বিকল্প চিন্তাভাবনা করতে হবে, যাতে করে এই অঞ্চলের মানুষ পদ্ম সেতু সুফল পান। এ ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা জরুরি।

পরিবহন কোম্পানিগুলো সূত্রে জানা যায়, কোম্পানিগুলো পুরনো হলেও দক্ষিণাঞ্চলে তাদের সেবা এত দিন বন্ধ ছিল। এর প্রধান কারণ ফেরী পারাপারে দীর্ঘ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকা এবং ভাঙাচোরা সড়কের ভোগান্তি। এবার সেই ভোগান্তির ৯০ ভাগ কমে আসছে পদ্মা সেতুর কারণে। মূলত এখানেই দক্ষিণের রুটে কোম্পানিগুলো তাদের যাত্রীসেবা নতুন আঙ্গিকে চালু করতে যাচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলের গ্রামের মানুষসহ সবাই পাবে আধুনিক বাসে চড়ে ভ্রমণের সুযোগ।

ইউনিক পরিবহন সূত্রে জানা যায়, দেশে নানা প্রান্তে ৪০ বছরের সুদীর্ঘ যাত্রায় বরিশাল রুটে কখনো ভ্রমণ করেনি তাদের পরিবহন। এই প্রথম পদ্মা সেতুকে ঘিরে যাত্রীসেবার হাতকে প্রশস্ত করতে চট্টগ্রাম-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা রুটে নিয়মিত যাতায়াত করবে তাদের গাড়িগুলো।

গ্রিন সেন্টমার্টিন এক্সপ্রেসের ম্যানেজার ইকবাল হোসেন বলেন, ‘সারা দেশের ন্যায় এবার দক্ষিণাঞ্চলের ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা এসি বাস এবং ঢাকা-বরিশাল-বরগুনা নন-এসি বাস চালু হয়েছে কোম্পানিটি। গত ২৩ জুন ঢাকা-পাটোয়ারী ফেরি যোগাযোগে বরিশালে ঢুকেছে প্রথম ট্রিপ নিয়ে। তবে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে পাড়ি দেওয়ার জন্য আমাদের প্রস্তুতি চলছে।

এ ব্যাপারে বরগুনা জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা কিসলু বলেন, ‘বরগুনার যোগাযোগ ব্যবস্থা দীর্ঘদিন খারাপ থাকার কারণে এ রুটে কোনো আধুনিক বাস চলাচল করত না। নতুন সেতু পেয়ে বরগুনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের জনগণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। যাত্রীদের সেবার মান নিশ্চিত করতে অত্যাধুনিক বিলাসবহুল বাস নিয়ে আসার পরিকল্পনা হয়েছে। আশা করি, অল্প দিনের মধ্যে আমাদের রুটে নতুন গাড়ি সংযোজন করে যাত্রীদের সেবার মান আরও বাড়িয়ে তুলতে পারব।’

পটুয়াখালী জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রিয়াজ মৃধা জানান, পদ্মা সেতুকে ঘিরে পটুয়াখালীর মানুষের আনন্দের শেষ নেই। পটুয়াখালীর উন্নয়ন বৃদ্ধি পাবে, ইপিজেড তৈরি হবে। আরও অনেক উন্নয়ন হবে। সে লক্ষ্যে পরিবহন খাতেও চলছে নীরব প্রতিযোগিতা। নতুন বিলাসবহুল বাস পদ্মা পাড়ি দিয়ে ছুটবে সাগরকন্যা কুয়াকাটায়। দূরপাল্লার এই গাড়িগুলো নির্বিঘ্নে এবং যাত্রীরা যাতে নিরাপদে চলাচল করতে পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। তবে সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে আমরা সরকারের কাছে ছয় লেনের প্রশস্ত সড়ক নির্মাণের দাবি জানাই।

বরিশাল জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মাসরেক বাবলু বলেন, ‘শুনেছি বরিশাল রুটে বিভিন্ন বিলাসবহুল বাস নিয়ে ঢুকবে কোম্পানিগুলো। কিন্তু কোনো কোম্পানি এখনও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তবে পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা-বরিশাল মহসড়কে গাড়ির গতি বাড়বে, বাড়বে গাড়ির সংখ্যাও। এ জন্য রাস্তা আরও প্রশস্ত করাটা জরুরি। মহাসড়ক থেকে থ্রি-হুইলার, অটোরিকশা, ভ্যান চলাচল বন্ধ করার দাবি জানাই। না হলে সড়কে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব নয়।’

বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন-উল আহসান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে বরিশালের সড়কে গাড়ি চলাচল বাড়বে। তাই যানবাহনের এই চাপ সামলাতে চার লেন বাস্তবায়নের আগে বরিশাল-ভাঙ্গা মহাসড়কের সোল্ডার (দুই পাশ) ৩ ফুট করে প্রশস্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া মানুষ দ্রুততম সময়ে ঢাকা যাতায়াত করতে পারবে। কর্মসংস্থান বাড়বে এবং দক্ষিণাঞ্চল মানুষের দুর্ভোগ কমবে।