বিএনপির ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

বিএনপির ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

আজ ১ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার— প্রতিষ্ঠার ৪৩ বছরে পা দিয়েছে বিএনপি। ১৯৭৮ সালের এই দিনে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের হাত ধরে দলটির জন্ম। দেশের সংসদীয় ইতিহাসে তিন বার কর্তৃত্ব করলেও টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতার বাইরে দলটি। এরমধ্যে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর হতভম্ব অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বিএনপি।

দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এবার একদিনের কর্মসূচি দিয়েছে দলটি। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় রাজধানীর নয়াপল্টনের দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সারাদেশের বিএনপির অন্যান্য সব কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বেলা ১১টায় দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। পরে, বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর শাখার নেতা-কর্মীরা জিয়ার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

এদিন বিকাল ৩টায় দলটি এক ভার্চুয়াল আলোচনার আয়োজন করবে।

সারাদেশে বিএনপির অংগসংগঠন এবং তাদের সব শাখা আলোচনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে।

দিবসটি উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক পৃথক বার্তায় দলের নেতা-কর্মী, অনুসারী ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

বিএনপির যাত্রাপথ

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান হন। ৭ নভেম্বরের সামরিক অভ্যুত্থানের পর তিনি শাসন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন; ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর তিনি হন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক।

১৯৭৭ এর ২১ এপ্রিল বিচারপতি আবু সাদাত সায়েমকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে যেতে হয়, জিয়া তখন ওই দায়িত্বও নেন। সে সময় জিয়ার সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টায় একটি গণভোটের আয়োজন করা হয়, যাতে ৯৮.৯ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়ে।

সামরিক আইন প্রশাসক থাকা অবস্থায় জিয়াউর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে একটি ডানপন্থি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠিত হয়। তবে সে দল তখন দেশের রাজনীতিতে নাড়া দিতে পারেনি।

ওই বছর ১ মে জিয়াউর রহমানকে চেয়ারম্যান করে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট’ ঘোষণা করা হয়। সেনাবাহিনী প্রধানের পদে থেকে পুরাদস্তুর রাজনীতিবিদ বনে যান জিয়া। ৩ জুন নির্বাচন দিয়ে ওই ‘জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট’ থেকে প্রার্থী হয়ে তিনি ‘নির্বাচিত’ রাষ্ট্রপতি হন।

নির্বাচনের তিন মাসের মাথায় ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর ঢাকার রমনা রেস্তোরাঁয় এক সংবাদ সম্মেলনে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।

জাগদল, মশিউর রহমান যাদু মিয়ার নেতৃত্বাধীন ন্যাপ, আবদুল হালিম-আকবর হোসেনের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস পার্টি, আব্দুল মতিনের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি ও শাহ আজিজুর রহমানের মুসলিম লীগ বিলীন হয় জিয়ার বিএনপিতে।

১৯৮১ সালের ৩০ মে এক সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত জিয়া রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন। ২০১০ সালে সপ্তম সংশোধনী বাতিলের রায়ে জিয়ার ক্ষমতাগ্রহণকে অবৈধ ঘোষণা করে উচ্চ আদালত।

জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার এক বছরের মধ্যে রাজনীতিতে নেমেই দলের ভাইস চেয়ারম্যান পদ নেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তখন বিএনপির চেয়ারম্যান ছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তার।

সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদ ১৯৮২ সালে বিএনপি হটিয়ে ক্ষমতা দখল করলে সাত্তারের অসুস্থতার মধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের পদ নিয়ে দলের হাল ধরেন খালেদা। তারপর ১৯৮৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন খালেদা।

সেই থেকে খালেদা এই পদে রয়েছেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার পর দুই বার তার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে বিএনপি।

তবে প্রতিষ্ঠার পর চার দশকের মধ্যে গত এক যুগ ধরে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ হওয়ার পর থেকে দলের অবস্থা অনেকটা নাজুক হয়ে পড়ে। তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেলেও অসুস্থতার কারণে এখনো সক্রিয় হতে পারেননি।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় লন্ডনে বসবাসরত তারেক রহমানকে। দলের নেতারা বলছেন, করোনার কারণে গত ছয় মাস বিএনপির পুনর্গঠন স্থগিত রাখা হলেও প্রধান অঙ্গসংগঠনগুলোর কমিটি পুনর্গঠন চলছে। তারেক রহমান প্রতিদিনই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে স্কাইপেসহ ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক করছেন, দিক-নির্দেশনা-আদেশ-নির্দেশ দিচ্ছেন।

দলের নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি, দলকে সর্বস্তরে ঢেলে সাজানো এবং আন্দোলন গড়ে তোলা এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য। তবে মামলা-হামলায় জর্জরিত দলের এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে খোদ নেতাদের মধ্যেই সংশয় রয়েছে।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত ১৪ বছর ধরে দলের ওপর দিয়ে ঝড়-ঝাপটা যাচ্ছে। আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের অঙ্গীকার হবে আন্দোলনের মাধ্যমে হারানো ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা এবং বাক-ব্যক্তি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও জনগণের মানবিক মর্যাদা সুরক্ষা করা।


ভোরের আলো/ভিঅ/১/২০২০