বিএম কলেজের মহাত্মা অশ্বিনী কুমার হলে ঝূঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের বসবাস

বিএম কলেজের মহাত্মা অশ্বিনী কুমার হলে ঝূঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের বসবাস

বরিশাল বিএম কলেজের মহাত্মা অশ্বিনী কুমার হলের দুরাবস্থা। অর্ধ শত বছরের পুরনো ওই ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে ৭ শতাধিক আবাসিক শিক্ষার্থী। তাদের দাবী, প্রায়ই সিলিং ও পলেস্তার খসে পড়ে আহত হয় শিক্ষার্থীরা। দুই একজন শিক্ষার্থী মারা না গেলে কর্তৃপক্ষ হলটি সংস্কারের উদ্যোগ নেবে বলে তারা মনে করেন না। হলটি জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন হল সুপার। পুরনো হলটি ভেঙ্গে সেখানে বহুতল ভবন নির্মানের জন্য সরকারের  কাছে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএম কলেজের অধ্যক্ষ। 

অশ্বিনী কুমার দত্ত্ব ছাত্রাবাসটি (ডিগ্রী হল) ‘এ’ এবং ‘বি’ ব্লকে বিভক্ত তিনতলা বিশিষ্ট দুটি ভবন। জরাজীর্ন ভবনের দেয়াল এবং সিলিংয়ে অধিকাংশ পলেস্তার খসে পড়েছে। সিলিং ধ্বসতে ধ্বসতে ছাদের পুরনো মরচে ধরা রড বেড়িয়ে গেছে। একটু বৃস্টি হলেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে শিক্ষার্থীদের বিছানায়, পড়ার টেবিলে। ভবনটির দরজা-জানালাও নাজুক। ভেতরে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ। বাথরুম-টয়লেটওলোতে দরজা নেই এবং নোংরা দুর্গন্ধ। এক কথায় বস্তিময় পরিবেশে ওই ছাত্রাবাসে বসবাস করছে  শিক্ষার্থীরা। 

গত রবিবার দুপুরে ওই হলের বাসিন্দা বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ওসমান গনি জানান, সকালে কক্ষের সামনে বারান্দায় চেয়ারে বসে পড়ছিলেন। হঠাৎ সিলিংয়ে অংশবিশেষ খসে পাশে পড়ে। এতে অল্পের জন্য বেঁচে যান। সিলিং ভেঙ্গে মাথায় পড়লে ওখানেই শেষ হয়ে যেতেন তিনি। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করে অভিযোগ তার। হলটি সংস্কার হবে বলে সময় ক্ষেপন করা হচ্ছে। ছাদ খসে দুই একজন শিক্ষার্থী না মারা গেলে হলটি সংস্কার হবে বলে মনে করেন না তারা। 

আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী পদার্থ বিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত ছাত্রাবাসের ‘এ’ ব্লকে প্রায় সাড়ে ৩ শ’ ছাত্র বসবাস করে। প্রতিনিয়ত সিলিং এবং ছাদের অংশ বিশেষ খসে পড়ছে। দেয়ালের পলেস্তার খসে পড়ছে। হলটি ভেঙ্গে পড়লে মৃত্যুর মিছিল হতে পারে। 

আবাসিক শিক্ষার্থী গনিত বিভাগের ৩য় বর্ষের রেজাউল করিম বলেন, দেখতেই পাড়ছেন অনেক ঝুঁকি নিয়ে হলে বসবাস করে শিক্ষার্থীরা। দরজা-জানালা নেই। ছাদ খসে পড়ে। মাঝে মধ্যে ছাত্ররা আহত হয়। আহতরা ব্যাক্তিগতভাবে চিকিৎসা নেয়। হল কর্তৃপক্ষের কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। আগে হল ভাড়া ছিলো সাড়ে ৩ হাজার টাকা এখন নেয় ৫ হাজার টাকা। তারপরও হলের অবকাঠামো উন্নয়ন হয় না। 

একাউন্টিং বিভাগের ৪র্থ বর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. নাজমুল হোসাইন বলেন, কখন ছাদ ভেঙ্গে মাথায় পড়বে সেই আশংকা নিয়ে হলে বসবাস করছে শিক্ষার্থীরা। এত পড়শোনা বিঘিœত হচ্ছে। হল সুপাররের কাছে একাধিকবার হলটি সংস্কারের দাবী জানানো হয়েছে। তারা অভিভাবক হলেও সেই দায়িত্ব পালন করেন না। 

হান্নান উদ্দিন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, যদি হলটি ভেঙ্গে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে সেদিন হয়তো কলেজ প্রশাসনের টনক নড়বে। রানা প্লাজার মতো ঘটনা ঘটলে নজর দেবে কর্তৃপক্ষ। 

অশ্বিনী কুমার দত্ত্ব ছাত্রাবাসের সুপারিনটেনডেন্ট অধ্যাপক মো. শাহেআলম হাওলাদার বলেন, জরাজীর্ন ছাত্রাবাসটি জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। হলের ছাদ, পলেস্তার খসে পড়ে বহু হতাহত হওয়ার আশংকা রয়েছে। শিক্ষার্খীরা ঝূঁকিয়ে নিয়ে অর্ধশত বছরের পুরনো ওই হলে বসবাস করছে। বিষয়টি একাধিকবার কলেজ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। 

ছাত্রাবাসটির দুরাবস্থার কথা স্বীকার করেছেন বিএম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. গোলাম কিবরিয়াও। তিনি বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে একাধিকবার হলটি সংস্কার করেছে। ছাত্রদের নিরাপদ আবাসনের জন্য সেখানে নতুন ভবন নির্মান করা প্রয়োজন। বিষয়টি সংশ্লিস্ট প্রশাসকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। 

বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তাদের একটি বিশেষজ্ঞ দল হলটি সরেজমিন পরিদর্শন করবে। যেখানে যেভাবে সংস্কার প্রয়োজন সেভাবেই হল সংস্কার করা হবে। নতুন ছাত্রাবাস নির্মানের বিষয়টিও বিবেচনাধীন রয়েছে বলে তিনি জানান।