বিসিসির সাবেক মেয়র কামাল কারাগারে

দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা একটি মামলায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বিএনপি কেন্দ্রিয় কমিটির সাবেক মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক আহসান হাবিব কামালসহ ৫ জনকে কারাদ- দিয়েছে আদালত। রায়ে প্রত্যেক আসামীকে ৭ বছর করে সশ্রম কারাদ- প্রদান করা হয়।
সোমবার বিকেলে বরিশালের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মহসিনুল হক আসামীদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারি হারুন অর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দন্ড-প্রাপ্ত অন্য আসামীরা হলো সাবেক বরিশাল পৌরসভা (বর্তমান বরিশাল সিটি করপোরেশন) এর নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমান অবসরপ্রাপ্ত) মো. ইসহাক, প্রাক্তন সহকারী প্রকৌশলী (বর্তমান ঢাকা নগর ভবনের স্থানীয় সরকার বিভাগের আরবান পাবলিক অ্যান্ড এনভয়েরমেন্টাল হেলথ সেক্টর ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) খান মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম, সাবেক বরিশাল পৌরসভার (বর্তমান বরিশাল সিটি করপোরেশন) উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. আবদুস ছাত্তার ও বরিশাল নগরের কালিবাড়ি রোডের বাসিন্দা মো. জাকির হোসেন।
আদালতের রায়ে প্রত্যেক আসামীকে ৭ বছর করে সশ্রম কারাদ- প্রদান করা হয়। পাশাপাশি ১ নম্বর আসামী সাবেক মেয়র মো. আহসান হাবিব কামালা ও ৫ নম্বর আসামী বরিশাল নগরের কালিবারি রোডের বাসিন্দা মো. জাকির হোসেনকে ১ কোটি টাকা করে অর্থদ- প্রদান করা হয়।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. হারুন অর রশিদ মামলার এজাহারের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, ১৯৯৫-৯৬ সালে বরিশাল টিএন্ডটি’র ভূ-গর্ভস্থ ক্যাবল স্থাপনের সময় ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তা মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে ৪৫ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। কিন্তু কোন প্রকার টেন্ডার আহ্বান না করে এবং রাস্তার কাজ না করেই হাই ইয়ং নামে একটি কথিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে ৪টি চেকের মাধ্যমে ৩৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাত করেন আসামীরা। বাস্তবে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কোন অস্তিত্ব পায়নি দুর্নীতি দমন কমিশন।
দন্ড-প্রাপ্তরা ১৯৯৫ সালের ২১ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৬ সালের ৩ জুন তারিখের মধ্যে তৎকালীন পৌরসভা এলাকায় টেলিফোন শিল্প সংস্থা কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত দেখিয়ে টেলিফোন শিল্প সংস্থার জাল প্যাড প্রস্তুত পূর্বক ভূয়া দরপত্র সৃষ্টি করে ও ভূয়া ঠিকাদার নিয়োগ করে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যেমে বরিশাল ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড এ চলতি হিসাব খোলে। উক্ত হিসাবে টেলিফোন শিল্প সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত ৪ টি চেকের মাধ্যমে মোট ৩৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করে ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৩৭১ টাকার রাস্তার মেরামত কাজ দেখায় এবং পরষ্পর একে অপরের সহযোগিতায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি ২৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৯ টাকা আত্মসাৎ করে।
এ ঘটনায় ২০১০ সালের ১১ অক্টোবর জেলা দুর্নীতি দমন কর্মকর্তা মো. আব্দুল বাসেত বাদী হয়ে ৫ জনের বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক আব্দুল বাসেত ২০১১ সালের ১৯ জুলাই আহসান হাবিব কামালসহ ৫জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে এই মামলার অভিযোগপত্র জমা দেন।
পরে বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে ২৬জনের মধ্যে ২২জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বিচারক উপরোক্ত রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পরপরই কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ।
এদিকে রায় ঘোষণার পর সংক্ষুব্ধ হয়ে সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের অনুসারীরা আদালত চত্ত্বরে এবং ফজলুল হক এভিনিউ এলাকায় বিক্ষোভ করেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চাদালতে আপীল করার কথা বলেন কামালের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান নান্টু এবং অ্যাডভোকেট মহসিন মন্টু।