বীরবিক্রম শওকত আলী আর নেই

মারা গেলেন কুড়িগ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী সরকার বীরবিক্রম। সোমবার (২২ আগস্ট) ভোরে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি চিলমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও চিলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সকাল ১১টায় তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
শওকতের বড় ছেলে মো. সাইফুল্লাহ শওকত জীবন জানান, আমার বাবা দীর্ঘদিন ধরে লিভার ক্যান্সারে ভুগছিলেন। গত ৩০ জুলাই অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শরীরের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে রবিবার থেকে তিনি আবারো অসুস্থ হয় পরেন। এরপর সোমবার ভোরে চিকিৎসকরা তার মৃত্যুর বিষয়টি পরিবারকে অবগত করেন। পিতার মৃত্যুতে তার মাগফেরাত কামনা করে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) সকাল ১১টায় নিজ বাড়ি চিলমারীতে তার দাফন কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি।
শওকত আলী পরপর পাঁচবার চিলমারী উপজেলা পরিষদের সফল চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ‘বীর বিক্রম’ খেতাবপ্রাপ্ত একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ১১ নং সেক্টরের সাব সেক্টর মাইনকার চরের অধীন কুড়িগ্রামের রৌমারী-চিলমারী অঞ্চলে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এই সেক্টরে আবুল কাশেম চাঁদ কোম্পানীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন তিনি। ৭১ সালের ১৩ নভেম্বর উলিপুরের হাতিয়া যুদ্ধে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। যুদ্ধকালীন সময়ে বীরত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে প্রাণবাজী রেখে লড়েছিলেন তিনি। এজন্য পাক বাহিনীর কাছে তিনি ছিলেন ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’।
মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অবস্থানের কারণে পাক বাহিনী তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন চিলমারী থানায় মামলা করেছিল বলে জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে জানা যায়। তার বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘বীরবিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করেন।
এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ১৯৪৮ সালে চিলমারী উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ ওয়ারী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ইজাব আলী সরকার এবং মায়ের নাম শরিতুজ নেছা।