ভাঙার আগে গড়ে তুলুন

ভাঙার আগে গড়ে তুলুন

কথায় আছে, ‘মন ভাঙা আর মসজিদ ভাঙা সমান কথা’। তারপরও প্রতিদিন ভাঙনের খেলা চলছে, মনের সঙ্গে মসজিদ, মন্দির, পাঠাগার, হল, ক্লাব ভাঙ্গা হচ্ছে। কখনো উন্নয়নের দোহাই দিয়ে আবার কখনো দখলে নেওয়ার জন্যও ভাঙা হচ্ছে। ভাঙার খেলায় অনেক সময় হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাস ও ঐতিহ্য। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে জনগণের কল্যাণে প্রতিষ্ঠা হওয়া অনেক স্থাপনাও। দখল আর ভাঙনের খেলায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী পাবলিক লাইব্রেরি, জাহানারা হল, শহীদ আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়, পঞ্চসিঁড়ি গ্রুপ থিয়েটারসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। এই ভাঙন, দখল আর ধ্বংস অব্যাহত থাকলে ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প-সংস্কৃতি মুখ থুবড়ে পরবে। তাই ভাঙার আগে গড়ে তোলার দিকে নজর দিন।

তিন তিল করে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান এক মুহূর্তে বুলডোজার গুঁড়িয়ে দিতে পারে। কোন কিছু গড়ে তোলার চেয়ে ভেঙে ফেলা সহজ। কিন্তু ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া স্থাপনার নীচে চাপা পড়ে যায় ইতিহাস-ঐতিহ্য। তাই একটি স্থাপনার সৌন্দর্য বর্ধনের নামে অন্য স্থাপনা ভাঙার সংস্কৃতি পরিহার করতে হবে। তারপরও কখনও কখনও ভাঙার প্রয়োজন পড়ে। তবে সেই ভাঙার প্রক্রিয়া শুরুর আগেই পুরানো প্রতিষ্ঠানটি প্রতিস্থাপন জরুরী।

গত কয়েকদিন আগে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী মোহমেডান ক্লাবটি ভেঙে দিয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন। বর্তমানে মোহমেডান ক্লাবে ক্রীড়া কার্যক্রম কি হয় সেটা আমাদের জানা নেই। কিন্তু জনশ্রুত দেশ ভাগেরও আগে মোহমেডান ক্লাব প্রতিষ্ঠা। সেই ক্লাবের স্থাপনা ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। সেটা ভেঙে অন্যত্র প্রতিস্থাপনের সুযোগ থাকা দরকার। একই সঙ্গে ক্লাবটি যাতে ক্রীড়ার সঙ্গে যুক্ত থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। সিটি করপোরেশনের কাছে অনুরোধ, মোহমেডান ক্লাবের স্থাপনা ভাঙা নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে সেটা অবসান হওয়া জরুরী। তা না হলে মানুষের মনে ক্ষত সৃষ্টি হবে। সেটা কাম্য নয়া।

আমরা লক্ষ্য করছি, বরিশালে গণপূর্ত বিভাগের জায়গায় থাকা পঞ্চসিঁড়ি গ্রুপ থিয়েটার এর কার্যলয়টি ভেঙে ফেলা হয়েছে। না। সেটা গণপূর্ত বিভাগ ভাঙেনি। ভেঙেছে জেলা পুলিশ। গণপূর্তর স্থাপনা পুলিশ ভাঙে কিভাবে? এমন প্রশ্ন করা কি যাবে? শুধু ভাঙেনি, তারা সেখানে থাকা একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে প্রাচীর তুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের বাধার সৃষ্টি করেছে। গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছে, কোন রকম অনুমতি ছাড়াই না কি পুলিশ এই কাজ করেছে। এই ভাঙনের খেলায় ৪০ বছরের পুরানো একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে। এর দায় কে নেবে। পাবলিক লাইব্রেরির জায়গায় জেলা প্রশাসন স্কুল ভবন নির্মাণ করছে। পুলিশ গণপূর্তর জায়গায় উন্নয়ন করছে। এই আলামত ভালো নয়। তাই কোন প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা ভাঙা কিংবা দখলে নেওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করতে উদ্যোগ নিন। তা না হলে ভাঙার সংস্কৃতি আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য মুছে দেবে।

বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সংষ্কার ও উন্নয়ন হচ্ছে দেখে আমরা আনন্দিত। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু অডিটেরিয়ামের সামনের জায়গাটিও নান্দিনিকতার ছোয়া পাচ্ছে। কিন্তু শহীদ মিনারের পাশের সড়কটি আটকে প্রাচীর তুলে দিয়ে কিছুটা সৌন্দর্যহানি ঘটেছে। বছরে মাত্র ৯দিন শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক কর্মসূচির জন্য কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়, জাজেজ কোয়ার্টারের বাসিন্দাদের। সেটাও বিজয় দিবস, মাতৃভাষা দিবস এবং স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য। এই অসুবিধাটুকু মেনেই তো চলছিল। কেন আজকের এভাবে উন্নয়ন করতে হলো জানি না। সমস্যা সমাধানে সার্টিক হাউসের ভেতর দিয়ে জাজেস কোয়ার্টারে প্রবেশের জন্য একটি বিকল্প পথ করা যেত। তা না করে পুরো রাস্তাটি শহীদ মিনার থেকে আলাদা করা দৃষ্টিকটু। আমরা বলতে চাই, নান্দনিক সৌন্দর্য করতে গিয়ে যেন কালো তিলক এঁকে না দেই। আমরা বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়ামের সৌন্দর্য যেমন চাই, তেমনি মোহামেডান ক্লাব সংরক্ষণেরও দাবি জানাই। ভাঙনের আগে সংস্কার ও সংরক্ষণে উদ্যোগ নিন।