ভাস্কর্য নিয়ে ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে

ভাস্কর্য নিয়ে ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে

বাংলাদেশে ভাস্কর্য নিয়ে নানামূখি সংকীর্ণ চিন্তার বিকাশ ঘটছে। এই চিন্তা বাংলাদেশ সৃষ্টির আগে অতটা বিস্তার ঘটেনি। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে ৭৫ পরবর্তী মৌলবাদীদের আষ্ফালন বাড়তে শুরু করে। তবে ৯০-এর দশকে ধর্মের নামে ভাস্কর্য বিরোধী ফতোয়া শুরু হয়।  বিশেষ করে ইসলাম ধর্মের নামে ধর্মান্ধ মৌলবাদী চক্র একটি ভুল দর্শন মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে। নেতিবাচক ফতোয়া দিয়ে তারা নান্দনিক শিল্পকর্মগুলো ধ্বংস করার চেষ্টায় লিপ্ত হচ্ছে। অনেক সময় এসব কাজে রাস্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাও পেয়েছে। ৯০-এর দশক থেকে বাংলাদেশে নতুন এই ধারা বাস্তবায়ন হলেও ২০০৫ সালের দিকে উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী দেশের ভিতরে এই চিন্তার প্রসার ঘটাতে থাকে। যার মাধ্যমে সৃষ্টি হয় উগ্র মৌলবাদি জঙ্গী গোষ্ঠীর উত্থান।

বিভিন্ন সময় এই চক্র দেশের স্থপত্যশৈলী বিনাশও করেছে। ধর্মীয় উন্মাদনা দিয়ে এই গোষ্ঠী ধর্মভীরু মানুষদেরও বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হচ্ছে। গত ২৫-৩০ বছর ধরে ভাস্কর্য ভাঙার সংস্কৃতি আজ প্রচ্ছন্ন আঘাত হানছে। যার প্রমাণ কুষ্টিয়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার দুঃসাহস। ধর্মভিত্তিক মৌলবাদী গোষ্ঠীর এই নেতিবাচক কাজ বন্ধ করতে রাস্ট্রকে অবশ্যই কঠোর হতে হবে। বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর উদাহরণ ধর্মপ্রাণ মনুষের মাঝে তুলে ধরে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে জবাব দিতে হবে।

কেবল ভোটের সমীরকণ হিসাব করতে গিয়ে রাষ্ট্র একাধিকবার ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব ভুলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আমাদের পাঠ্য বইয়ে ব্যাপক পরিবর্তন। যাদের প্রেসক্রিপশনে সরকার পাঠ্য বই এবং কারিকুলামে পরিবর্তন এনেছে সেটা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে বুমেরাং ছাড়া অন্য কিছু নয়। আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে চারু ও কারু বিভাগ বাদ দেওয়া হয়েছে। সংস্কৃতি চর্চার পথকে সংকুচিত করা হয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে সমাজ ও রাষ্ট্রে। আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও ধর্মান্ধ চিন্তায় ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্র জেনেও নিশ্চুপ ভূমিকা নিচ্ছে। এসব কারণে স্বাধীনতা বিরোধী ও উগ্র গোষ্ঠী মাথাচারা দিয়ে ওঠার পথ পাচ্ছে। তারাই নতুন নতুন ফরমান জারী করে আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। তারই অংশ হিসেবে ভাস্কর্য ভাঙার ঔদ্ধত্য। রাজধানীর বিমান অফিসের সামনের বলাকা ভাঙা দিয়ে শুরু হয়েছিল আমাদের ঐতিহ্য গুড়িয়ে দেওয়া। তারই ধারাবাহিকতায় হাইকোর্ট চত্বর থেকে সরাতে হয়েছে অনন্য ঐতিহ্যের স্মারক। আজ শেষ আঘাত এসেছে জাতির জনকের ভাস্কর্যর ওপর।

এই আলামত একদিনে হয়নি। শুরুতেই যদি এই চক্রকে থামিয়ে দেওয়া যেত হাতলে আজকের এই দৃশ্য দেখতে হতো না। সেদিন বলাকা ভেঙে ওই চক্র সাহস সঞ্চার করেছে। তাদের বিচার না হওয়ায় হাইকোর্ট চত্বরের ভাস্কর্য সরাতে হয়েছে। এরপর আরো কত কিছুর ওপর আঘাত আসবে আমরা জানি না। তাই এখনও সময় আছে, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে ধর্মী উগ্র চিন্তা বন্ধ করতে হবে। ধর্মকে যেন কোনভাবেই নেতিবাচক কাজে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি যেন এই গোষ্ঠী না হয়। আমরা বিশ্বাস করি বর্তমান সরকার সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবে।