ভূমিহীন হওয়ায় পুলিশে চাকুরী পাচ্ছে না মেধাবী আসপিয়া

পুলিশে নিয়োগ পেতে সাত স্তরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন আসফিয়া ইসলাম। যাচাই-বাছায়ের পর কেবল ভূমিহীন হওয়ায় চাকুরীর স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না মেধাবী আসফিয়া। পুলিশের প্রতিবেদনে ভূমিহীন হওয়ায় তার চাকুরী হবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। চাকুরীর দুয়ারে পৌঁছানোর পরও চাকুরী হবে শুনে হতাশ হয়ে পরেছে আসফিয়া।
গতকাল বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামনের কাছে যোগ্যতা বিবেচনায় চাকুরী পাবার দাবি নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকেও নিরাশ হয়েছেন তিনি।
যোগ্যতা থাকার পরও ভূমিহীনরা চাকুরী পাবে না পুলিশের এমন নিয়ম পরিবর্তনের দাবি করেছেন সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা। এদিকে ভূমিহীন ওই মেয়েটির পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প থেকে জমিসহ একটি ঘর দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার।
সাত স্তরে যাচাই-বাছাই, শারীরিক যোগ্যতা, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা এবং দুই দফা মেডিকেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও কেবল ভূমিহীন হওয়ার কারণে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকুরীর স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার কলেজ ছাত্রী আসপিয়া ইসলামের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সেপ্টেম্বর মাসে বরিশাল জেলায় পুলিশ কনস্টেবলের শূন্য পদে (৪১ জন পুরুষ ও ৭ জন নারী) লোক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পুলিশ কনস্টেবল (নারী) পদে অনলাইনে আবেদন করেন জেলার হিজলা উপজেলার সরকারী হিজলা ডিগ্রি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী আসপিয়া ইসলাম। গত ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে শারীরিক যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন আসফিয়া। ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও উত্তীর্ণ হয়ে ২৪ নভেম্বর একই স্থানে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন আসপিয়া। পরদিন ২৫ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলেও মেধা তালিকায় পঞ্চম হয়ে উত্তীর্ণ হয় সে। ২৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে চিকিৎসকরা মোৗখিক পরীক্ষায় উত্তর্র্ণদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এতেও উত্তর্র্ণ হয় আসপিয়া। সব শেষ ২৯ নভেম্বর ঢাকায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন সেন্ট্রাল হাসপাতালে অনুষ্ঠিত মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সকলের চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। এতেও উত্তীর্ণ হয় সে।
বিপত্তি বাধে চূড়ান্ত নিয়োগের আগে। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আসপিয়া ও তার পরিবারকে ভূমিহীন উল্লেখ করা হয়েছে। আসপিয়া ও তার পরিবারকে ভূমিহীন উল্লেখ করে গতকাল বুধবার জেলা পুলিশ সুপার বরাবর প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হিজলা থানার উপ-পরিদর্শক মো. আব্বাস। এর আগে ভূমিহীন হওয়ায় (স্থায়ী ঠিকানা না থাকায়) আসপিয়ার চাকুরী হবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
চাকুরীর দোড়গোড়ায় পৌঁছেও স্বপ্ন পূরণ না হওয়া আসপিয়া ইসলাম বলেন, আমি যোগ্যতাবলে ৭টি স্তর উত্তীর্ণ হয়ে চূড়ান্ত নিয়োগের অপেক্ষায় আছি। এমন সময় হিজলার ওসি বলেছেন, চাকুরী পেতে হলে নিজেদের জমিসহ ঘর দেখাতে হবে। আমরা ভূমিহীন। আমার জন্মের আগে থেকে আমার পরিবার হিজলায় বসবাস করে। গত ১৫ বছর ধরে আমরা খুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামে একজনের জমিতে আশ্রিত আছি। আমাদের নিজেদের জমি না থাকায় আমরা গরীব হওয়ায় এখন আমার চাকুরী হবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় গতকাল দুপুরে ডিআইজি স্যারের কাছে গিয়েছিলাম প্রতিকার চাইতে। এ ব্যাপারে স্যারের কিছু করার নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, শারীরিক এবং একাডেমিক যোগ্যতায় অজপাড়াগায়ের একটি মেয়ে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। যোগ্যতা থাকার পরও কেবল ভূমিহীন হওয়ায় তার চাকুরী হবে না এটা মানা যায় না। পৃথিবীতে কোন একটা ঘটনার প্রেক্ষিতে অনেক আইন পরিবর্তন হয়েছে। প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করে হলেও যোগ্যতা বলে ওই মেয়েটিকে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেয়ার দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের কোথাও যদি তার ভূমি না থাকে সেটা তিনি দেখবেন। আর যদি কোথাও ভূমি থাকে তাহলে সেটাই তার স্থায়ী ঠিকানা।
বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও ভূমি না থাকায় কারোর চাকুরী না হওয়া দুঃখজনক। তিনি ওই মেয়েটির পরিবারকে হিজলায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প থেকে জমিসহ ঘর তথা একটি স্থায়ী ঠিকানার ব্যবস্থা করবেন বলে আশ^াস দিয়েছেন।