ভেতরের পশুকে কোরবানী দিতে হবে

হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর কাছে আল্লাহ তায়ালা তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জিনিসকে কোরবানী দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর প্রাণের চেয়েও প্রিয় সন্তান ইসমাইল (আঃ)কে কোরবানী দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হন। হযরত ইব্রাহিম তাঁর চোখ বেঁধে প্রিয় সন্তান ইসমাইল (আঃ)কে যখন কোরবানী করার জন্য গলায় ছুরি চালান। তখন আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে সেখানে দুম্বা কোরবনী হয়ে যায়। সেই থেকে মুসলমান ধর্মের মানুষদের ওপর পশু কোরবানী ফরজ হয়ে যায়। হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর সময় থেকে আজো মুসলমান ধর্মের অনুসারীরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানী পালন করে চলেছে।
আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং মানুষের ভেতরের পশুত্বকে দূর করার জন্য সারা দুনিয়ায় কোরবানী পালন হচ্ছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই কোরবানী আজ লোক দেখানো অনুষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোরবানী নিছক আনুষ্ঠানিকতা এবং প্রতিযোগিতায় রূপ নিয়েছে। বাজারে গরু কেনার প্রতিযোগিতা এখন প্রকাশ্য ঘটনা। অমুকে এক লাখ টাকার গরু কিনেছে। আমি কি তার চেয়ে ছোট? আমার সামনে ও এত টাকার পশু কোরবানী দিলে আমার মর্যাদা থাকে? তাই বাজারের সেরা গরু কিনতে হবে। দাম কোন বিষয় নয়, দেড়, দ্ইু কিংবা ১০ লাখ টাকা হলেও সমস্যা নয়। কেবল ওকে এবং তাকে বিট দেওয়ার জন্য বাজারের পশুর দাম বেড়ে যায়। আর বেশি দামের পশু কিনে বাহবা নেওয়ার জন্য চলে প্রচারণা।
আজ মানুষের পশু কোরবানী দেওয়ার নামে প্রতিযোগিতা দেখে পশুরাও লজ্জা পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের লজ্জা হচ্ছে না। পশু বাজারে নিয়ে বিক্রি করার জন্য অমানবিক আচরণ করছি পশুর সঙ্গে। ট্রাকে ঝুলিয়ে গরু বাজারে নিয় যাওয়া কিংবা পাহাড়ের চূড়া থেকে গরু সমতলে ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। পশু কোরবানী দিতে গিয়ে আমরা যেন আরেক পশুর মত আচরণ করছি। পশু কোরবানী দিতে গিয়ে ‘আশরাফুল মকলুকাত’ শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ জানোয়ারের মতো আচরণ করছে। বাজারে গরু-ছাগল কিংবা দুম্বা, উট কেনার প্রতিযোগিতা বন্ধ হচ্ছে না।
প্রতিযোগিতা করে বড় পশু কেনার পর কোরবানীর মাংস নিয়েও চলে প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতা অবশ্য ভিন্ন ধরণের। এই প্রতিযোগিতার মধ্যে রয়েছে ফ্রিজ কেনার প্রতিযোগিতা। নরমাল ফ্রিজের পর ডিপ ফ্রিজ কেনেন কোরবানীর মাংস জমিয়ে রাখার জন্য। ফ্রিজে রেখে বেশিদিন কোরবানীর মাংস খাওয়ার সুযোগ তো হাতছাড়া করা যায় না। তাই অনেকেই এখন আর গরবীদের মাঝে মাংস বিলিয়ে আনন্দ পান না। এখানে চলে কোরবানীর মাংস খাওয়ার প্রতিযোগিতা।
এইভাবে কোরবানী দিয়ে কি মানুষের ভেতরের পশুত্বকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব? যেহেতু কোরবানী নিয়ে প্রতিযোগিতা বন্ধ হচ্ছে না। তাই মানুষের পশুত্ব বেড়ে যাচ্ছে। ভেতরের পশুকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ফলে বাড়ছে হিংসা, হানাহানি, মারামরি। সমাজে বাড়ছে অশান্তি।
কোরবানীর সঠিক মর্ম অনুধাবন করে কোরবানীর মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। লোক দেখানো কোরবানী দেওয়া বন্ধা হওয়া দরকার। এবারের কোরবানী আমাদের সেই শিক্ষা দিক এটাই আমাদের প্রত্যাশা। কোরবারনীর মাধ্যমে আমরা যেন আমাদের ভেতরের পশুত্বকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। তাহলে সমাজে হানাহানি, মারামারি এবং ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ হবে। আমরা যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানী দিতে পারি। তাহলেই হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কোরবানীর মতো আমাদের কোরবানীও আল্লাহর কাছে সমান গুরুত্ব পাবে।