ভোট এত সহজ জিনিস নাকি: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ঢাকার দুই সিটির ভোটের আগের দিন ইভিএমে ভোট জালিয়াতির আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন। একজন ভোটার আঙুলের ছাপ দেয়ার পর অন্য আরেকজন কোনো মার্কায় টিপ দিয়ে দিতে পারবে না— এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘না না, ভোট এত সহজ জিনিস নাকি।’
শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নির্বাচন কমিশনে সাংবাদিকদের সামনে তিনি স্বচ্ছ ও পক্ষপাতহীন নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেন।
শনিবার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণ করা হবে। জমজমাট প্রচার-গণসংযোগ, ভোটারের দ্বারে দ্বারে প্রার্থীদের বিরামহীন ছোটাছুটি শেষ। দলের প্রার্থীর জন্য কর্মীদের দৌড়ঝাঁপ ফুরিয়েছে। এবার পালা ভোটারদের। কাল সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে বিকেল চারটা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ।
সিইসি বলেন, সকালে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি, নির্বাচনের সামগ্রী বিতরণ দেখেছি। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। কোনো অসুবিধা নেই। মালামাল পৌঁছে গেছে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা বলেছেন কোথাও নির্বাচনের বিষয়ে কোনো রকমের কোনো আশঙ্কা নেই।
তিনি বলেন, ভোটাররা নির্বিঘ্নে অবাধে অংশগ্রহণ করবেন। তাদের কোনো অসুবিধা নেই। প্রচারের সময় যেভাবে প্রার্থীরা অংশ নিয়েছেন, ভোটার সমর্থকরা যেভাবে রাস্তায় নেমেছে এসেছে, ওটা একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সব দল অংশ নিয়েছে। ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হলে পরিবেশ সুন্দর হয়।
সিইসি বলেন, প্রস্তুতি শেষ। সামগ্রী চেলে গেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবাই যার যার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। সব ধরনের বাহিনী তারা নিয়োজিত রয়েছে। তারা তাদের কাজ পরিচালনা করছে।
কেন্দ্রে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, পক্ষ নিয়ে নেন, ভোট কর্মকর্তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না, এমন হলে কমিশনের ভূমিকা কী থাকবে? প্রশ্নের জবাবে কেএম নূরুল হুদা বলেন, এজেন্টদের প্রতি প্রথম অনুরোধ, তারা যেন দায়িত্ব নিয়ে থাকেন। কেউ এসে বললো আর বের হয়ে যাবেন, কেউ তাকে রাখবেন না, তখনই বের হয়ে যাবেন, তা যেন না করেন। এমন ঘটেও, ঘটার সম্ভাবনা যদিও নাই, তবু যদি ঘটেও টহলদার বাহিনী থাকবে, প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে, তাদের বলবেন। সুতরাং এটার কোনো সম্ভাবনা নাই। যদি নিজে থেকেই বেরিয়ে না যায় তাহলে কিন্তু এজেন্টদের বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ নাই।
সিইসি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সঙ্গে বৈঠকের সময় বলেছি- এজেন্টদের শেল্টার দিতে বলেছি। যখনই তারা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ঢুকবে, তখনই তাদের দেখভাল করার দায়িত্ব কিন্তু যারা ভোটকেন্দ্রের দায়িত্ব থাকবেন। এজেন্ট কাউকে না জানিয়ে অনেক সময় বের হয়ে যায়, তখন বলে যে আমাদের এজেন্ট নেই। এমন হলে তো হবে না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ যদি থাকে, যদি না শুনে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করবেন। আমাদের পর্যন্ত আসার দরকার নেই।
সিইসি বলেন, আশা করি সুষ্ঠু, নিরপক্ষে ও গ্রহণযোগ নির্বাচন হবে। এতোকিছুর পরে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। সবার সহযোগিতা দরকার। ইভিএম নতুন একটি প্রযুক্তি। অবশ্যই সবার সহযোগিতা দরকার। অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে ছিলাম। এখন বিশ্বাস করি কমিশনের একটি স্বপ্ন যে, এটার মাধ্যমে ভোটার তার নিজের ভোট দিতে পারবে। এটাকে সফল করার জন্য সবার সহযোগিতা করতে হবে।
১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
প্রসঙ্গত, এবারের সিটি নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন ৬ জন। কাউন্সিলর পদে ২৫১ জন এবং সংরক্ষিত আসনে ৭৭ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উত্তর সিটিতে ওয়ার্ড রয়েছে ৫৪টি। ঢাকা দক্ষিণে ৭ জন মেয়র পদের জন্য লড়ছেন। কাউন্সিলর পদে ৩৩৫ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী প্রার্থী হয়েছেন ৮২ জন। দক্ষিণে ৭৫টি ওয়ার্ড। ঢাকায় ভোটার সংখ্যা ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন। ঢাকা উত্তর সিটির ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৩১৮। এসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষের সংখ্যা ৭ হাজার ৮৪৬টি। দক্ষিণ সিটিতে ১ হাজার ১৫০টি ভোটকেন্দ্র এবং ভোটকক্ষ রয়েছে ৬ হাজার ৫৮৮টি।