আমাদের জীবনের চলমান সময় স্রোতে সংযুক্ত হলো আরো একটি নূতন বছরের আবাহন। বাংলা ১৪২৬ সন। সংখ্যার যোগফল ১৩। এক সংস্কার বলে এই সংখ্যাটি ভালো নয়। কেউ বলে ‘দিস ইজ আনলাকি থার্টিন’। কেন? কোথায়? কে এর কুষ্টি বিচার করেছে তার কোন সঠিক মানতত্ত্ব আমার জানা নেই। সুতরাং যা জানি না তাকে নিয়ে বিষদ ভেবে বক্তৃতার অবকাশ নাই। যদিও বক্তৃতা যারা দেন তাদের কাছে না জানা বিষয়ের আলোচনাই সহজ এবং প্রিয়। এতে সুবিধাটা হলো, নিশ্চিন্তে যা খুশি বলে যাওয়া যায়। যারা শুনতে আসেন কিংবা বাধ্য হন তারা খুব একটা বুঝে উঠতে পারেন না।
মাঝে মাঝে মনে হয় পিছনে ফেলে আসা সেই সব দিনের কথা। যেখানে না জেনে বুঝে পাড় পেয়ে যাওয়ার কোন সুযোগই ছিলো না। যেখানে শিক্ষক বেত হাতে ক্লাস নিতেন। পড়া ভুল হলে বেত্রাদর কিংবা কান ধরিয়ে বেঞ্চে দাঁড় করিয়ে রাখতেন। যেন তেন কোন মতে সেই পথ অতিক্রম করে যেখানে এসে দাঁড়িয়েছি সেখানে ভুলের কোন সাজা নেই। এখন ছাত্র-ছাত্রীরা অবলিলায় শিক্ষকের ভুল খোঁজেন। তিনি প্লেনে না চড়ে হেঁটে এলে স্কুল কলেজ বা বিশ্বদ্যালয়ের কত অর্থ সাশ্রয় হত তার হিসাব কষেণ।
এখন শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা বিষয়ক যোগ্যতা বৃদ্ধিকল্পে চিন্তিত না হয়ে তাদের অনুকম্পা প্রাপ্তিতে মনোনিবেশ করেন। এবং অতি দ্রুতই সেই প্রাপ্তি প্রত্যাশায় যত রকম সম্ভব বিভাজিত হন নীতি নৈতিকতায়। ভালো বাসেন ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র হতে, ব্যস্ত হয়ে পড়েন জয়ধ্বনি জিন্দাবাদে।
কেন? প্রশ্ন করে লাভ নেই। বলা যায় এই ধরণ এমন প্রথাসিদ্ধ হয়ে গেছে। যে ছাত্র-ছাত্রীরা দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বোচ্চ মেধা অর্জন করে শিক্ষক হিসেবে নিজেদের নিয়োজিত করেন, সেই শিক্ষকরা কেমন করে হারিয়ে ফেলেন নিজেদের অস্তিত্ব, অবস্থান, তাদেরই ছাত্র-ছাত্রীদের দাবির কাছে? এ কেমন তাদের মেধা বুদ্ধির প্রয়োগ? হায় অসহায়ত্ব! হায় বেত! হায় কান ধরে বেঞ্চে দাঁড়ানো! হায়রে সময়!
না এই কথাগুলো থাক। কার আছে এখন এসব কথা শোনার সময়? কে বলতে পারে এভাবে যারা সব নষ্ট করে দেয়, অন্ধকার সৃষ্টি করে। আসুন সবাই মিলে তাদের মুখোশ উন্মোচন করি। না, আসলে তেমনটা ভাবা যায় না। সম্ভব নয় বলা তেমন কথা। কারণ সেখানে তেজদৃপ্ত সূর্যের প্রখরতা। তাকালেই পুড়ে ভস্ম! তার থেকে ভালো, অনেকটা সহজ, অসুন আমরা রাজপথে দাঁড়াই। কোন গৃহপালিত আন্দোলনের নেতা নেত্রী সেজে নেতৃত্ব দেই। দেশ জানুক, বিশ্ব জানুক আমাদের না জানা, না বোঝা, অর্থহীন, আত্মহননের পথে চলার স্বাভাবিক সাবলীল গল্প।
ইদানিং কোন গল্পই তেমন কাউকে আর স্পর্শ করতে পারছে না। তবে এবারের নববর্ষের প্রভাতে মঙ্গল শোভাযাত্রায় দুটি বিষয় বেশ চোখে পড়লো। এই মঙ্গল প্রভাতে মানুষের পাশে হেঁটে হেঁটে দুটো বিষয় দেখে মনে হলো, না, একেবারে হতাশ হবার সময় এখনো আসেনি। মানুষ এখনো নিঃশন্দেহে ভাবে এবং অন্যকে তার রং তুলি কিংবা কলমের আচড়ে ভাবতে বাধ্য করে। এই যে হেঁটে চলেছি নানা রঙের বিচ্ছুরণের মাঝে মানুষের নানান সাজের সাথে মিশে। ঢাকের ঢ্যামকুরকুর বাজনার মাঝে। হঠাৎ দৃষ্টি আটকে গেল পথে। আরে কে ও, শিয়াল পন্ডিত না? হ্যা, তাই তো শিয়াল পন্ডিতইতো বটে। আয়োজকরা স্পষ্ট লিখে দিয়েছে ওর নাম। বাহ, এমন চরিত্র প্রকাশের এইতো সময়। এইতো সময় যখন ধূর্তের হাতেই সব। আমি, আপনি আমরা সবাই। ঠিক একইভাবে দেখি দারুন ব্যঙ্গ করে পাশ কাটিয়ে সামনে যাচ্ছে এক ব্যাঙ। মাথায় তার ছাতা হাতে দারুন সেলফির ব্যস্ততা।
শিয়াল পন্ডিতের গল্পটা মনে পরে? সেই যে কুমিড়েরর ছানাদের শিখাবে বলে এক এক করে সব সাবার করে দিয়েছিলো। নিশ্চয়ই এখন গল্পটা মনে পড়ছে আপনাদের। কি অসাধারণ ভন্ডের রূপক রূপ তাই না? শিয়াল পন্ডিতের এই ধূর্ত শিক্ষা আর ব্যাঙের মাথায় ছাতা হাতে আধুনিক ফোন। সময়ের অতি বাস্তব এবং সত্যিই বড় বেশি দায়িত্বশীল এই উপস্থাপনা।
এই দুই অতি বাস্তব সময় উপযোগী উপকরণের সামনে অন্য সমস্ত আয়োজন যেন অনারম্বড়। একই সঙ্গে অর্থহীন। অর্থহীন লক্ষীর প্যাঁচা, বনদেবীর বাঘ, নরমুন্ড ধারণ করা অসুর, গণেশ শক্তির হাতিকে উপেক্ষা করে সময়ের প্রয়োজনে এমন শোভাযাত্রা ভরে উঠুক লাল শাপলা কিংবা গোলাপের বাগানে। সবুজ রঙের টিয়ার ঠোঁট দারুন লাল হয়ে উঠুক বাঙালির হৃদয়ে। আবহমান বাংলার নদীতে নৌকার মাঝির হাঁক উঠুক হেই সাবধান, সাবধান। মুক্তিযোদ্ধার হাতে উড়–ক স্বাধীন বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা। প্রজাপতির দল উড়–ক সমস্ত মিছিল জুড়ে। সারা পথে পথে মানুষ দেখুক কীষাণ কীষাণীর ধান কেটে ঘরে ফেরার সেই নির্মল দৃশ্য। রাখী বঁধা হাতে হাত বেঁধে আমাদের বর্ণিল আনন্দ শোভাযাত্রা ধেয়ে চলুক রাস্তা থেকে রাস্তায়। প্রতিটি কণ্ঠে উঠুক গান ‘ও আমার দেশের মাটি তোমান পরে ঠেকাই মাথা’। কোন বিপর্যয় নয় কোথাও। প্রাণের হিল্লোল বয়ে চলুক পথ থেকে পথে।
তেমনটা না হলে আমাদের কেবল বাঙালি সাজা হবে, বাঙালি বলা যাবে, সত্যিকার অর্থে বাঙালি আর হয়ে ওঠা সম্ভব হবে না। পহেলা বৈশাখকে ঘিরে যে প্রাণের সম্মিলন ঘটে দেশময়, তাকে নির্দিষ্ট কিছু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে বেঁধে না রেখে কর্মে, চিন্তায় চেতনায় আন্তরিক করে তুলতে হবে। সকল সম্প্রদায়ের মানুষদের উদারচিত্তের সুন্দর মনের বিচ্ছুরণ ঘটাতে হবে কাজে। সংকীর্ণতা, ধর্মীয় অনুসঙ্গগুলিকে যথার্থ সম্মানপূর্বক সর্বাত্মক দূরে রাখতে চেষ্টা চালাতে হবে।
আমাদের ভুলে যাবার কোন সুযোগ নাই যে, এই দেশে বিরাজমান দুই প্রধান ধর্মীয় সম্প্রদায় হিন্দু বা সনাতন এবং মুসলিম। এই দুই ধর্মেরই আছে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় অনুশাসন। ধর্মপ্রণ সবাই সেটা মেনে চলে যার যার ধর্মের মত অনুসারে। তাদেরও রয়েছে দারুন দুটি অনুশাসন। সনাতন ধর্ম বিশ^াস করে আকৃতিকে আর ইসলামের বিশ^াস সম্পুর্ণ নিরাকার। সুতরাং বাঙালি তত্ত্ব বিনির্মাণে এই দুই বিষয়কে দূরে রাখা অত্যন্ত জরুরী। কারণ খুবই স্পষ্ট কোন ধর্মের অনুসঙ্গগুলিই যদি বাঙালি সংস্কৃতির ধারা হয়, তবে সেই সংস্কৃতির আচরণ কখনই এই দেশে সার্বজনীনত্ব লাভ করেবে না।
যে বিষয়টি খুবই সহজ সরল ভাবে বুঝে নেওয়া দরকার তা হলো, পহেলা বৈশাখের আয়োজন, শোভাযাত্রা কখনোই কোন ধর্মীয় বিষয় নয়। এ কখন ঈদ নয়, পূজাও নয়। এ কেবল এ দেশের সকল ধর্মের কার্যক্রমকে সর্বাত্মক পবিত্র রেখে, শুধু বাংলা ভাষাভাসী সকল সম্প্রদায়ের মানুষদের স্বাধীন স্বকীয় সম্মিলন। রাখীর বন্ধন মানুষের সঙ্গে মানুষের, সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্প্রদায়ের। এ কাজে এগিয়ে এসেছে রাষ্ট্র। ঘোষণা করেছে ১লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের দিনে রাষ্ট্রীয় ছুটি। এই উৎসবকে ঘিরে ঘোষণা করেছে উৎসব ভাতা। এখন আমাদের শুধু দায় রয়ে গেল সবাই মিলে বাঙালি হয়ে এই উৎসবকে সার্বজনীন রূপ দেওয়ার।
এখানে অজ্ঞতাবশত কিংবা সঠতাশ্রয়ী হয়ে কোন ধার্মর আকৃতিগত অনুসঙ্গের প্রয়োগে দিনের পর দিন বাঙালিতত্বকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করবে। সেই বিকারগ্রস্ত বুদ্ধির প্রয়োগ থেকে নববর্ষের সকল আয়োজনকে অবশ্যই মুক্ত করতে হবে। সেই কাজে আমরা সার্থক হলে তবেই সার্থক হবে ইউনেস্কোর ঘোষণা। শুধু বাংলা ভাষাভাসী মানুষের একটি নির্দিষ্ট উৎসব পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকবে। সেই উৎসবের নাম ‘বাঙালির ১লা বৈশাখ’ তাদের নববর্ষের দিন, তাদের মঙ্গল শোভাযাত্রা। যে মোহনায় সকল ধর্মের মানুষের স্রোত মিলিত হয়ে বাঙালি তার বিষ্ময় রূপের জন্ম দেবে। যেমনটা হয়েছিলো ১৯৫২ তে।
বাঙালি তার সমষ্ঠির স্বরূপ প্রকাশ করেছিলো ভাষার জন্য প্রতিবাদী হয়ে। রক্ত ঢেলেছিলো রাজপথে রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার। ১৯৬৯ এ উত্তাল গণঅভ্যুথানে ৭১ এর সোপান তৈরি করেছিলো বাঙালি আসাদের রক্তে। যার ধারাবাহিকতায় বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলন। দেশ এবং পতাকা পূর্ণতা পেল লক্ষ লক্ষ বাঙালির রক্তে সম্ভ্রমে প্রাণের বিনিময়ে ১৯৭১ এ। এইতো হচ্ছে বাঙালির প্রকৃত রূপ। যেখানে সে সম্মিলিত গেয়ে চলেছে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’? যেখানে সুরের ধারায় প্রবাহমান ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা, আমরা তোমাদের ভুলবো না’।
এইতো বাঙালি। এইতো তার ঠিকানা। যেখানে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে গেছে ৭ বীরশ্রেষ্ঠের নাম। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গির, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ, বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল, বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন এবং বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ হামিদুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের সামরিক সর্বাধিনায়ক আতাউল গণি ওসমানির নাম এবং বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নাম। যে নামগুলি উচ্চারণের মধ্যেই স্পষ্ট বাংলাদেশের বাঙালিত্ব নির্মাণের গল্প এবং ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। তার যে কোন ব্যত্যয় বাঙালি ও বাংলাদেশের জন্য অশুভ। সে মোটেই কাম্য নয় কখনো।
একজন দুলাল ভট্টাচার্য গেরুয়া বস্ত্রে জন্মাষ্টমীর মিছিলে অংশ নিলে, রথের কলা খেলে, মন্দিরে গেলে, কপালে তিলক এঁকে পূজা করলে, শ্মশানে গেলে, শ্রাদ্ধ খেলে যদি কেউ তাকে ধর্ম না বলে সাংস্কৃতিক আচরণ বলে। আর সৈয়দ দুলাল যদি টুপি মাথায় মসজিদে যায়, নামাজ পড়ে, নবীজীর জন্মদিনে মিছিল করে, গোরস্থানে যায়, জিয়ারত করে তখন সেই কাজকে যদি কেউ মৌলবাদিত্ব আখ্যা দেয়। তখন বড় অদ্ভুতভাবে মনে হতেই পারে এটা সাবলিলত্ব নয়। এর নাম সঠতা। এর নাম কুট কৌশল। এই অপকৌশল আমাদের বাঙালিত্বের ভীতকে কখনোই সোজা হয়ে দাঁড়াতে দেয় না।
এই অপকৌশল অতিক্রম করার কৌশলটিও ভট্টাচার্য এবং মীর উভয় দুলালকেই অর্জন করতে হবে। তা হলেই নীরব দ্বন্দ্ব ঘুচিয়ে সরবে আন্তরিকতায় বাঙালির যুথবদ্ধ শক্তির উন্মেষ ঘটবে। মনে এবং প্রকাশ্যে মেনে নিতে হবে যে, বাঙালি, বাংলাদেশ, ১লা বৈশাখ, রাষ্ট্রীয় ছুটি এবং উৎসব বোনাস এক সুতোয় গাঁথা। এর কোন ভিন্নতা সর্বৈভ অযৌক্তিক। তাকে অতিক্রম করতেই হবে। সেখানেই অসাম্প্রদায়িক বাঙালি রূপের প্রকাশ ঘটবে। তবেই বৈশাখী প্রভাতে বাঙালি কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে পথে পথে গাইতে পারবে মঙ্গলের গান, মায়ের গান, দেশের গান, সর্বপরি বাঙালির গান।
‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা।
মায়ের ভাইয়ের এতো স্নেহ,
কোথায় গেলে পাবে কেহ
ও মা তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি
আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি’।
চারিদিকে এখন অপ্রতিরোধ্য মৃত্যুর মিছিল। আকাশে, বাতাসে, মসজিদে, মন্দিরে, গীর্জায়। মানুষ মারছে মানুষ। প্রতিরোধ প্রতিবাদ আগুন। আরো মৃত্যু। আবার মৃত্যু। মৃত্যুর প্রতিবাদ শহরে নয় শুধু, দেশেই নয় এ মৃত্যু চলছে পৃথিবীব্যাপি। না, কেবল দুর্ঘটনা নয়। এখন যা চলছে তার নাম হত্যা। ধর্মের বিরুদ্ধে ধর্ম। কোথায় বিজ্ঞান? কোথায় শিক্ষা? কোথায় শান্তি শান্তনা? শুধুই দোষারোপ। ধর্মীয় বিষদগার।
ক্রাইসচার্চ নিউজিল্যান্ড, মসজিদে গুলি জুমার নামাজে। রক্তে ভিজে গেল আল্লাহর ঘর। সেই রক্ত শান্ত হতে না হতেই শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বে ইস্টারসানডেতে গীর্জায় প্রার্থনারত খ্রিষ্টীয় ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের উপর বোমা হামলায় প্রায় তিনশত মানুষ খুন। ভক্তের রক্তে রঞ্জিত হলো যিশু। কে কাকে মারছে? কেন মারছে? কে দিচ্ছে অর্থ, অস্ত্র? কোন সে মহৎ ধর্ম? কোন সে বাণী যাতে মোহিত হয়ে মানুষ হত্যা? ধর্মের সিদ্ধি লাভ, কোন সে ধর্ম? কার জন্য? এ কোন যুদ্ধ মানবসভ্যতায়, হিংস্র পশুর মত। রক্ততো চায় না মন্দির, মসজিদ, গীর্জা। তবু ধর্মের নামে রক্ত কেন?
মানুষ, মানুষ না হলে মসজিদ অর্থহীন, মানুষ, মানুষ না হলে মন্দির অর্থহীন, মানুষ, মানুষ না হলে গীর্জা, প্যাগোডা এবং পৃথিবীর সকল ধর্মীয় উপাসনালয় অর্থহীন। সবিশেষ অর্থহীন ধর্ম এবং তার অনুশীলন। একমাত্র আমিই ভাল। আমার সকলই ভালো, আর যা আছে সেখানে ভালো বলে কিছুই নেই। এমন চিন্তা ভালো নয় মোটেই। এই বোধ ভালো না। এই বুদ্ধি এবং তার প্রয়োগ কখনেই ভালো নয়। ধর্র্র্র্র্মের মহিমা প্রচারে কোন কুট কৌশলের প্রয়োগ ভলো না।
এভাবে বারবার ধর্ম অনুশীলনে বাধা এলে বাধা দানকারী, হামলাকারী, সন্ত্রাসী সে যেই হোক সমষ্টিগতভাবে তাকে এবং তাদের পৃথিবীচ্যুত কর। যে কোন ধর্মের সেই প্রশ্নের কোন প্রয়োজন নেই। যে প্রশ্ন কাউকে অহংকারী করে। যে প্রশ্ন কাউকে হতাশায় ডুবিয়ে দেয়। যে প্রশ্ন কাউকে বিজয়ী করে কিংবা করে পরাজিত। সেই প্রশ্নকেই হত্যা করতে হবে প্রথমে। মানতে হবে হত্যাকারীর কোন দেশ, ধর্ম, কিংবা উপাসনালয় কিছুই থাকতে পারে না।
পৃথিবীর ইতিহাস বলে তাকে কেউ গ্রহণ করে না। না পরিবার, না ধর্ম, না সমাজ, না দেশ। না কোরআন, না পুরান, না বেদ, না বাইবেল। শুধু এইটুকু মনে রাখি ‘মানুষ এনেছে ধর্ম, ধর্ম আনেনি মানুষ কোন’।
লেখক: আজমল হোসেন লাবু, সভাপতিম-লীর সদস্য, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ