মিন্টু বসু মনেপ্রাণে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করতেন

মিন্টু বসু মনেপ্রাণে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করতেন

বরিশালের প্রতিথযশা সাংস্কৃতিক সংগঠক, মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও সাংবাদিক মিন্টু বসু ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারক। মানব ধর্মকে মনেপ্রাণে বিশ^াস করে আজন্ম প্রজন্ম গড়ে তুলতে কাজ করে গেছেন। বর্তমান সময়ে গভীর চক্রান্ত হচ্ছে। এখন সময় এসেছে মিন্টু বসুর অসাম্প্রদায়িক চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরবার।

শুক্রবার সন্ধ্যায় খেয়ালী গ্রুপ থিয়েটার মিলনায়তনে নাট্যজন, সাংবাদিক মিন্টু বসু স্মরণে গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা।
নাট্য সংগঠক খেয়ালী গ্রুপ থিয়েটার এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত সম্মাননা অনুষ্ঠানে গুণীজন হিসেবে সংবর্ধিত করা হয় একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রদীপ কুমার ঘোষ পুতুলকে।


সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ে উপার্চায প্রফেসর ড. মো. সাদেকুল আরেফিন। অন্যান্যের মধ্যে মঞ্চে ছিলেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যাল, নাট্যজন সৈয়দ দুলাল।

বক্তারা বলেন, মিন্টু বসু মৌলবাদের বিরুদ্ধে যেমন সোচ্চার ছিলেন, তেমনি সামাজিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নির্ভিকভাবে মাঠে থেকে কাজ করেছেন। সাম্প্রদায়িক রাজনীতিরি বিরুদ্ধে এবং অসাম্প্রদায়িক চিন্তার পক্ষে কাজ করেছেন তিনি। নিজে নাটক লিখেছেন এবং সেই নাটকে অভিনয় করেছেন। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী সকল সাংস্কৃতিক আন্দোলনে মিন্টু বসু সামনের সারিতে থেকেছেন। কোন রক্তচক্ষু মিন্টু বসুকে তার আন্দোলন থেকে সরাতে পারেনি। বরিশাল বিভাগ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, বরিশাল বিশ^বিদ্যালয় আন্দোলন, মাওয়ায় পদ্মাসেতু নির্মাণ আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন মিন্টু বসু। বর্তমান সময়ে মিন্টু বসুর মতো এমন নির্ভিক অগ্রজ খুবই প্রয়োজন। তাই তার অসাম্প্রদায়িক চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।

খেয়ালী গ্রুপ থিয়েটারের সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ গোলাম মাসউদ বাবলুর সভাপতিত্বে ও খেয়ালীর সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ চক্রবর্তীর সঞ্চলনায় অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বক্তব্য দেন, শিশু সংগঠক জীবন কৃষ্ণ দে, খেয়ালী গ্রুপ থিয়েটারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু, ব্রজমোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ স.ম. ইমানুল হাকিম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বরিশাল নাটকের সভাপতি কাজল ঘোষ, প্রফেসর বিমল চক্রবর্তী, শিশু সংগঠক পংকজ রায় চৌধুরী, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী বরিশাল জেলার সভাপতি সাইফুর রহমান মিরণ, অধ্যাপক টুনু রানী কর্মকার, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সভাপতিম-লীর সদস্য শুভংকর চক্রবর্তী, স্বপন খন্দকার, ডেইলি স্টার প্রতিনিধি সুশান্ত ঘোষ, রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল বিশ^াস, বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সম্বয় পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিন্টু কুমার কর প্রমূখ।

অনুষ্ঠানে বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, আজকের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মরণ অনুষ্ঠানে আর একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধিত করা হয়েছে। এটা একটা অনন্য ইতিহাস হয়ে থাকবে। আজকের সেই সূচনা করেছে খেয়ালী। এটা আমাদের সবার দায়। এই দায় থেকেই আমাদের কাজ করতে হবে। আজকের এই আয়োজনের মাধ্যমে যুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্ম বেশি উপকৃত হলেন। মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরতে হবে। এখান থেকেই নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এইভাবেই মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করুক। সেটাই হবে মুক্তিযুদ্ধের অনন্য চেতনা। নতুন প্রজন্মের মাঝে মিন্টু বসুর অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে হবে।

সংবর্ধনার জববাবে মুক্তিযোদ্ধা প্রদীপ কুমার ঘোষ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তীতে এসে গভীর চক্রান্ত হচ্ছে। আমরা জানি, আমাদের পতাকা হয়ত পরিবর্তন হবে না। কিন্তু মনে রাখা দরকার রাজাকাররা কখনো মুক্তিযোদ্ধা হবে না। তারা কিন্তু বসে নেই। তাদের ইন্ধনে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মকে সব ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। তাই আপনাদের সন্তানদের খোঁজ নিন। তারা কি করছে, তাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানান। আপনাদের সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হলে চক্রান্তকারীরা লাভবান হবে।