মিন্নি চমকে দিলেন আদালত প্রঙ্গনের সবাইকে

বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা- দেখেছেন খুব কাছ থেকে। এ কারনে অধিকাংশ সচেতন মানুষের দৃষ্টি ছিলো মিন্নির প্রতি। মিন্নির কাছে নানা প্রশ্নও ছিলো তাদের। পাঠক দর্শক এবং শ্রোতাদের এই উত্তর জানাতে ঘটনার শুরু থেকেই গণমাধ্যমের দৃষ্টি ছিলো নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির উপর।
রিফাত হত্যাক-ে নিহত রিফাত যতটা আলোচিত ছিলো, তার থেকেও বেশি আলোচিত ছিলো মিন্নি। হত্যাকা-ের ২০ দিন পর নিজের স্বামী হত্যাকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে মিন্নিকে গ্রেফতার করা হলে, মিন্নিকে ঘীরে সাধারণ মানুষের কৌতুহল বাড়ে বেশ।
গত ১৭ জুলাই পুলিশের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদনের প্রেক্ষিতে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্চুরের পর গত ১৯ জুলাই বিকেলে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রিফাত হত্যাকা-ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মিন্নি। এরপর টানা ৪৮ দিন ছিলেন বরগুনার কারাগারে। এসময় পুলিশের প্রিজন ভ্যানে করেই আদালতে হাজির করা হতো মিন্নিকে। কারাগারেও নেয়া হতো আবার একই ভ্যানে। গত ৩ সেপ্টেম্বর জামিন কারামুক্ত হয়েছেন মিন্নি। সেই সাথে মুক্তি পেয়েছেন প্রিজন ভ্যানে আসা-যাওয়া থেকেও।
মিন্নির কারামুক্তির পর গতকাল বুধবারই প্রথম আদালতে হাজির হয়েছেন মিন্নি। পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী চার্জশিটের শুনানি থাকায় সকাল নয়টার আগেই আদালতে আসেন মিন্নি। কিন্তু আদালতে মামলার মূল নথি না থাকায় শুনানির সময় সকালের পরিবর্তে নিধারণ হয় বিকেল তিনটায়। তাই সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাবার সাথেই বাসায় চলে যান মিন্নি। আবার বাবার সাথেই দুপুর দেড়টার দিকে আদালতে আসেন মিন্নি।
বাবার সাথে মিন্নির আদালতে আসার খবরে আদালত প্রাঙ্গণে ভীর জমে উৎসুক মানুষের। মিন্নির কেউ ছবি তুলেছেন, কেউ ভিডিও করেছেন আবার কেউ কেউ দেখেছেন কাছ থেকে। কম যাননি মিন্নিও! সবার নজর যে মিন্নির দিকে, সেই মিন্নি চমকেও দিয়েছেন সবাইকে। সকালের দৃষ্টিনন্দন পোষাক ছেড়ে দুপুরে এসেছেন অন্য পোষাকে। নাকে নাকফুল, চোখে কাজল আর মাথায় হিজাব পরা মিন্নি দৃষ্টি কেড়েছেন সবার।
আদালত প্রাঙ্গণে মিন্নিকে দেখতে আসা কাইউম নামের একজন বলেন, গত আড়াই মাস ধরে মিন্নিকে নিয়ে প্রতিদিন সব টিভি এবং পত্রিকায় খবর দেখেছি। তাই মিন্নিকে স্বজক্ষে দেখার ইচ্ছে জাগে। এর আগেও মিন্নিকে দেখতে এসেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তখন মিন্নি পুলিশে গাড়িতে আসা-যাওয়া করায় তাকে দেখতে পারিনি। তাই আজ তাকে দেখতে পেরেছি।
এদিকে বুধবার দুপুর দুইটার দিকে শুনানি শেষে আলোচিক এ মামলার চার্জশিজ গ্রহণ করে আগামি ৩ অক্টোবর এ মামলার চার্জ গঠনের তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত। গত ১ সেপ্টেম্বর আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী মিন্নিসহ ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মোঃ হুমায়ুন কবির।
পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী বুধবার সকালে এ অভিযোগপত্রের শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও মামলার মূল নথি বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে থাকায় শুনানি শুরু হতে বিলম্ব হয়। সকাল ১১ টার দিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোঃ সিরাজুল ইসলাম গাজী অভিযোগপত্র শুনানির জন্য দুপুর দুইটা নির্ধারণ করেন।
শুনানির জন্য আদালতে হাজির করা হয় বরগুনা জেলা কারাগারে থাকা রিফাত হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক সাত অভিযুক্তকে। তারা হলেন- মোঃ রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, রেজোয়ান আলী খান ওরফে টিকটক হৃদয়, মোঃ হাসান, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মোঃ সাগর ও কামরুল হাসান সাইমুন। এছাড়া এ মামলায় জামিনে মুক্ত থাকা আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি ও আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ আদালতে উপস্থিত হয়েছেন তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে। শুনানি শুরু হওয়ার আগেই তারা সবাই দাঁড়ান আদালতের কাঠগড়ায়।
এ বিষয়ে মামলার বাদী পক্ষের নিয়োজিত আইনজীবী অ্যাডভোকেট মজিবুল হক কিসলু বলেন, শুনানি শেষে আদালত রিফাত হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন। একই সাথে এ মামলায় অভিযুক্ত পলাতক নয় আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছেন। এ মামলার চার্জ গঠনের জন্য আগামি ৩ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আদালত। ওইদিন সকল অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, রিফাত হত্যা মামলার শুনানির আগে এ মামলায় অভিযুক্ত আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, রেজোয়ান আলী খান ওরফে টিকটক হৃদয়, মোঃ হাসান, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মোঃ সাগর ও কামরুল হাসান সাইমুনের জামিন আবেদনের শুনানি হয়। পরে আদালত শুনানি শেষে তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, রিফাত হত্যা মামলায় অভিযুক্ত সকলের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। এদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি ৩০২, ৩৪, ১৩৯, ১২০ (বি-১) ধারায় অভিযোগ গ্রহন করা হয়েছে। এছাড়া এ মামলায় শিশু ও কিশোর অভিযুক্তদের অভিযোগ আমলে নিয়ে সেই আদেশ শিশু আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
রিফাত হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ২৪ জনের মধ্যে ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া এ মামলার প্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্ত মোঃ মুছা, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, কিশোর অভিযুক্ত মোঃ আবদুল্লাহ ওরফে রায়হান, মোঃ সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ ওরফে মহিবুল্লাহ, মারুফ মল্লিক, প্রিন্স মোল্লা, মোঃ রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার, মোঃ নাইম মোঃ রাকিবুল হাসান নিয়ামত পলাতক রয়েছেন। আর এ মামলার এজাহারে প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।