মৃত্যু আশঙ্কাও আমাদের ভীত করতে পারছে না

মৃত্যু আশঙ্কাও আমাদের ভীত করতে পারছে না

আজকের এই লেখাটি লেখা কতটা যৌক্তিক জানি না। তারপরও লিখতে হচ্ছে। কারণ উন্নত দেশে করোনা মহামারী আকার ধারণ করেছে এই সংবাদ আমরা জানি। কিন্তু সেটা কতটা ভয়াবহ তা আমাদের জানার বাইরে। সেখানে ঘরের মধ্যে স্বজনের লাশ পড়ে থাকার ঘটনা ঘটছে। বারবার ধরনা দিয়েও দাফন করার ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। শিশু সন্তানদের এক অনিশ্চয়তার মধ্যে বাবা-মায়ের মরদেহ নিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। এর চেয়ে আর নির্মমতা কি হতে পারে। এটা উন্নত দেশের কোন একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করলাম। এরকম অগণিত ঘটনার জন্ম দিচ্ছে করোনা। আমেরিকা, ইতালি স্পেনসহ উন্নত দেশের রাস্ট্রনাকরা কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। করোনার কাছে তাদের অসহায়ত্ব দেখছি আমরা।

গত দুই দিনে বাংলাদেশ করোনার চিত্র জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। অথচ আমরা বিষয়টি আমলেই নিতে পারছি না। সরকার প্রশাসনযন্ত্র, গণমাধ্যম কোনভাবেই মানুষদের সামাজিক দূরত্বে রাখতে পারছে না। দেশের বেশিরভাগ মুনষ কনোরার প্রাদুর্ভাবকে স্বাভাবিক মনে করছেন। অথচ যেহারে সংক্রমণ হচ্ছে তাতে আমরা পালানোর রাস্তাও পাবো না। কোন ভীতি ছড়ানোর জন্য বলছি না। বাংলাদেশে যদি করোনা মহামারী আকার ধারণ করে তাহলে কবর দেওয়ার মানুষ খুঁজে পাওয়া দায় হবে। পুলিশ, প্রশাসনের কর্মীরা, গণমাধ্যম কতক্ষণ পাশে থাকবেন। তাদের কি মৃত্যু ভয় নেই? মৃত্যু ঝুঁকি জেনেও সেনাবাহিনী, জনপ্রশাসনকর্মীরা, পুলিশ, গণমাধ্যম মাঠে থেকে সাধারণ মানুষদের সতর্ক করতে পারছে না।

করোনার ভয়াবহতার আশঙ্কায় বাংলাদেশ সরকার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সবকিছু বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু মানুষ সরকারের নির্দেশনা মানছে না। উল্টো সরকারি নির্দেশনা অমান্য করার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে শিক্ষিত মানুষরা এই নিষেধাজ্ঞা বেশি অমান্য করছেন। এর সঙ্গে ধর্মের দোহাই দিয়ে একদল নানা রকম অদ্ভুত তথ্য দেওয়া শুরু করেছেন। যার সূত্র ধরে মসজিদে মানুষের ভীড় সাধারণ সময়ের চেয়ে বেড়ে যায়। যা করোনা ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কয়েক দফা নির্দেশনা দিলেও বন্ধের মধ্যেও আমাদের মসজিদ, মন্দির, হাট-বাজার, রাস্তাঘট, দোকানপাটের ভীড় কমানো যায়নি। বাধ্য হয়ে গতকাল প্রধানমন্ত্রী প্রশাসনকে কঠোর হতে নির্দেশ দিয়েছেন। ধর্মমন্ত্রী প্রজ্ঞাপন জারি করে মসজিদ, মন্দির এবং গির্জায় না যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।

করোনার ঝুুঁকি উপলব্ধি করতে পারলে আমাদের কঠোর হওয়ার দরকার ছিল না। আমরা মনে করি, করোনা ঝুঁকি মোকাবেলায় আমাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরী। কারণ এই ভাইরাস জনসামাগম থেকেই বেশি ছড়ায়। গতকাল বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন পরিচালক করনায় মারা গেছেন। মাত্র ৪৭ বছর বয়সে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। এটা কি আমাদের কাম্য ছিল? এ ছাড়াও গতকাল আরও দুইজন রোগি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। সারা দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল সোমবার একদিনে আক্রান্ত হয়েছে ৩৫জন। সারা দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২৩জন। এটা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে বলেই মনে হয়। তাই এখনো যদি আমরা সতর্ক হতে না পারি তাহলে কিন্তু আমেরিকা, ইতালী এবং স্পেনের চেয়ে ভয়াবহ অবস্থার মুখে পড়বো আমরা। আমরা সেই অবস্থায় পড়তে চাই না। একই সঙ্গে করোনা নিয়ে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন সেটাও দেখতে চাই না।

গতকাল বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলক কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তির কিছুক্ষণের মধ্যে একজন রোগি মারা গেছেন। তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। তার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সতর্কতার জন্য প্রশাসন ওই মৃত রোগির বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছেন। অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং মুঠোফোনে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। এটা অবশ্যই বন্ধ করা দরকার। একই সঙ্গে যারা এখনো সতর্ক হননি তাদের সতর্ক হওয়া দরকার।

আমরা লক্ষ্য করছি, মসজিদের ভীড় কমাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ধর্মান্ধ মানুষের ব্যাখ্যা বন্ধ হয়নি। আল্লাহ-ভগবানের দোহাই দিয়ে তারা করোনাকে পাত্তা দিচ্ছেন না। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। রাস্তার ভীড় কমাতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, জনপ্রশাসনকর্মীদের সঙ্গে গণমাধ্যম কাজ করছে। কিন্তু গ্রামগঞ্জে ঈদের উৎসব চলছে। সেখানে টুর্ণামেন্ট আয়োজন চলছে। চলছে ভীড় জমিয়ে ক্রিকেট খেলা, আড্ডা। দ্রুত এসব খেলা বন্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। করোনার মহামারী থেকে রক্ষা পেতে আমাদের অবশ্য অবশ্যই সচেতন এবং সতর্ক থেকে প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে হবে।