মেডিকেল সার্টিফিকেট ছাড়াই দীর্ঘ ছুটি মঠবাড়িয়ায় প্রধান শিক্ষকের

মেডিকেল সার্টিফিকেট ছাড়াই দীর্ঘ ছুটি মঠবাড়িয়ায় প্রধান শিক্ষকের

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার কে এম লতীফ ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান ২৮ জানুয়ারী ২০২১ থেকে অদ্যবধি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। কোন মেডিকেল সার্টিফিকেট ছাড়াই দীর্ঘদিন ছুটি ভোগ করছেন তিনি । ওই দিন থেকেই প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করে আসছেন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ খলিলুর রহমান। 

ছুটিতে যাওয়ার পূর্বে প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান সহকারী প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে একটি চিঠি প্রেরন করেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নিম্ন স্বাক্ষরকারীর কিছু শারীরিক সমস্যার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্রামে থাকা আবশ্যক। প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক / দাপ্তরিক কার্যক্রমে যাতে কোন প্রকার ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয় সে জন্য উক্ত দায়িত্ব আপনাকে পালনের জন্য অনুরোধ জানানো গেল। উক্ত দায়িত্ব পালনকালীন যে - কোন প্রয়োজনে নিম্ন স্বাক্ষরকারী সহযোগিতা করবেন। প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষরিত ওই চিঠিটি ২৮.০১.২০২১ খ্রি. তারিখ ইস্যু করা হয়। পরিপত্র অনুযায়ী এ ধরনের অভ্যান্ত্যরীন চিঠির মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১ সপ্তাহের ছুটি ভোগ করা যায়। এর ব্যাতিক্রম হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যম প্রয়োজন হয়।  

মেডিকেল ছুটি / স্বাস্থ্যগত কারনে ছুটির ক্ষেত্রে পরিপত্রে উল্লেখ আছে,  স্বাস্থ্যগত কারনে দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে রেজিস্টার্ড মেডিকেল অফিসার কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষককে পূর্ণ গড় বেতনে এক মাস ও অর্ধ গড় বেতনে তিন মাস মোট চার মাস মেডিকেল ছুটি / স্বাস্থ্যগত ছুটি মঞ্জুর করা যায়। ক্ষেত্র বিশেষ পরিচালনা পরিষদ কোন শিক্ষককে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বিনা বেতনে চিকিৎসা ছুটি মঞ্জুর করতে পারে। 

বিদ্যালয় সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান কোন মেডিকেল ছুটিতে যান নি। তাছাড়া ওই পদটি শূন্যও হয়নি। প্রধান শিক্ষক নিয়মিত বেতন উত্তোলন করেছেন। সেক্ষেত্রে বিদ্যালয়টিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থাকার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।   

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে যোগদানের পূর্বেই বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক/দাপ্তরিক কাজে অবৈধভাবে হস্তক্ষেপ করায় প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। মেডিকেল ছুটিতে থাকার কোন নিয়ম কানুন না মেনে পরিপত্র লঙ্ঘন করেছেন তিনি। নিজের অনিয়ম ও দুর্নীতি ঢাকতে একের পর এক মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও গণমাধ্যমকর্মী সহ সাধারন মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।

তিনি আরও বলেন, ৯ম শ্রেনীর নিবন্ধন কার্যক্রমের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা এ সংক্রান্ত কাজও শুরু করেছি। দুঃখের বিষয় বোর্ড প্রদত্ত পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে বোর্ডের ওয়েবসাইটে কাজ করতে গেলে দেখা যায় ওয়েবসাইট ওপেন হচ্ছে না। বোর্ডে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান শিক্ষা বোর্ডে বিভ্রান্তমূলক তথ্য দিয়ে উক্ত ওয়েবসাইটটি নিজের নিয়ন্ত্রনে নিয়েছেন। এতে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর রেজিষ্ট্রেশন অনিশ্চিত হয়ে পরেছে।

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের উপ পরিদর্শক (বিদ্যালয়) মোঃ জামাল উদ্দিন জানান, একজন শিক্ষার্থীও রেজিষ্ট্রেশন থেকে বাদ পড়বে না। দায়িত্ব পালনে আমরা বদ্ধ পরিকর। 

মামলা জটিলতায় বিদ্যালয়টিতে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় জরুরী ভিত্তিতে এডহক কমিটি গঠন করা দরকার। কমিটি হলেই বিদ্যালয়ের বিশৃঙ্খলা অনেকটা দূর হবে। প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিত থাকা এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করা বিধি মোতাবেক হয়নি। 

তিনি আরও বলেন, প্রধান শিক্ষক যে ছুটিতে গেছেন তা মেডিকেল ছুটি নয়। এটি কয়েক দিনের ছুটি। যা ৭ দিনের কম। শারীরিক সমস্যায় বিশ্রামের জন্য কয়েকদিন ছুটি নিয়ে ৬ মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি আমরা অবগত নই।   

এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে একাধিকবার  যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি।