মেহেন্দিগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো তরিঘরি করে মেরামত শুরু

বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ধ্বসে পড়ার পর তরিঘরি করে মেরামত শুরু হয়েছে। স্থানীয়ভাবে নিয়োগ করা ঠিকাদারের লোকজন দিয়ে ফাটল ধরা ও ধ্বসে পড়া দেয়াল, কাত হয়ে পড়া ও ভেঙ্গে যাওয়া পিলার মেরামত শুরু করেছে। তবে এবারও নিম্মমানের সামগ্রী আনা হয়েছে ঘর মেরামতে। হতদরিদ্ররা খুশী হলেও ঘর ধ্বসে পড়ায় তারা আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের ঘরে। সুপেয় পানির অভাব এবং জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।
মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় ভূমি ও গৃহহীনদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ৩১৭টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ দেয়া হয় ২৫২টি ঘর। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬৫টি ঘর এখন নির্মাণাধীন। প্রথম পর্যায়ে গত ২৩ জানুয়ারি ওই উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের কাঠের পোল এলাকায় দুটি ক্লাস্টারে ৪০টি ঘর ও জমি কাগজপত্রসহ সুবিধাভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়। একটি ক্লাষ্টারের ১৬টি ঘরের মধ্যে ২টি ঘরের বেশিরভাগ দেয়াল ধ্বসে পড়েছে। অন্য ১২টি ঘরের কোনটির দেয়াল ও মেঝে ফাটল ধরেছে। বারান্দার পিলার ভেঙ্গে গেছে। অপর ক্লাস্টারের ১৪টি ঘরের ১টির রান্নাঘর ও টয়লেট-বাথরুমের দেয়াল ধ্বসে পড়েছে। অপর একটি ঘরের রান্নাঘর ও বাথরুম কাত হয়ে গেছে। সেখানে সুপেয় পানির কোন ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি আটকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগ পোহাতে হয় বাসিন্দাদের।
গত শুক্রবার সকালে শ্রীপুরের দুটি ক্লাস্টারে গিয়ে দেখা গেছে, একটি ডোবা বালু ভরাট করে সেখানে একটি ক্লাস্টারের ১৬টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছিলো। সাম্প্রতিক বন্যা ও জোয়ারের পানিতে ওই বালু ধুয়ে এই ক্লাস্টারের দুটি ঘরের বেশিরভাগ দেয়াল ভেঙ্গে পড়েছে। অন্য ১২টি ঘরও কমবেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই ঘর নির্মাণে স্থানীয়ভাবে নিয়োগকৃত ঠিকাদারের লোক ঠেলাগাড়ি ভরে ইট-বালু আনছেন। ইটগুলো ভালো মানের নয়। এর আগে ৩ নম্বর ইট দিয়ে কাজ করা হয় বলে অভিযোগ করেন স্থানীরা। ঘরগুলোর ভীত করা হয়েছিলো বালুর তৈরী ভিটি লেভেল থেকে মাত্র ১ ফুট নিচ পর্যন্ত। মাত্র ১০ ইঞ্চি ইটের গাথুনীতে ওই ভীত নির্মাণ করা হয়। ইট বিছিয়ে সোলিং না করেই ভিটির উপর পলিথিন বিছিয়ে ১ ইঞ্চি ঢালাই দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিলো এসব ঘরের মেঝে (ফ্লোর)।
নির্মাণ শ্রমিকরা জানান, জনৈক মো. জহির এই কাজের ঠিকাদার। তার নির্দেশে তারা ভাঙ্গা ঘর মেরামত করছেন। তাদের সহায়তা করছেন সুবিধাভোগীরা।
অদূরে আরেকটি ক্লাস্টারে গিয়ে দেখা গেছে, ১৪টি ঘরের মধ্যে ১টির রান্নাঘর ও টয়লেট-বাথরুমের দেয়াল ধ্বসে পড়েছে। অপর একটি ঘরের রান্নাঘর ও বাথরুম কাত হয়ে গেছে। অন্য দুটি ঘরের দেয়াল এবং মেঝে ফাটল ধরেছে। সেখানেও ঠিকাদারের লোকজন ভেঙ্গে যাওয়া ঘর মেরামত করছেন। উপহারের ঘর ভেঙ্গে যাওয়ায় ওই পরিবারগুলো অন্যের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে তারা অনেক খুশী হয়েছিলেন। সেই ঘরে উঠতে না উঠতেই ঘরের দেয়াল ধ্বসে পড়েছে। এখন ওই ঘরে থাকার উপায় নেই। এই ঘর নির্মাণের সময় সরকারি লোকজন ও ঠিকাদার সুবিধাভোগীদের কোন কথাই শোনেননি। তারা বালুর উপর এক ফুট ভীত দিয়ে আধা পাকা ঘর নির্মাণ করেছে। জোয়ারের পানিতে বালু সরে গিয়ে ঘরের দেয়াল ধ্বসে পড়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো কারা মেরামত করছে জানতে চাইলে বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, ঘরগুলো তিনি মেরামতের নির্দেশ দিয়েছেন। স্থানীয়ভাবে নিয়োগকৃত ঠিকাদার, তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ ঘর নির্মাণে গঠিত ৫ সদস্যের কমিটির সবাইকে এর দায় নিতে হবে।