মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি বন্ধ হোক

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি বন্ধ হোক
মানুষের পাঁচটা মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে চিকিৎসা। আমাদের দেশে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। যত রোগ আছে তার চেয়ে বেশি ওষুধ আছে। ওষুধ কোম্পানী আছে। সামান্য জ¦র-সর্দি-কাশি হলেও মানুষ ছুটে যায় ওষুধের দোকানে। চাহিদা মত ওষুধ কিনে খান সবাই। এজন্য অনেক সময়-ই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শও নেওয়া হয় না। মজার ব্যাপার হচ্ছে বাজার থেকে যে ওষুধ কিনছেন তার মেয়াদ আছে কি না তা তারা জানেন না। কোন রোগে কি ওষুধ সেবন করেন তা কেবল যিনি ওষুধ কেনেন তিনিই জানেন। তারপরও আমাদের ওষুধের ওপর নির্ভর করতেই হয়। তাই বাজারের ওষুধ ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরী। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়াও জরুরী। শরীরে রোগ বাসা বাঁধলে অনেকেই চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। তাঁদের পরমার্শ নেন। চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ কিনে সেবন করেন। এখনো বাংলাদেশের নব্বই ভাগ মানুষ ওধুধের গুনাগুণ সম্পর্কে না জেনেই ওষুধ সেবন করেন। আমাদের চিকিৎসকরাও এব্যাপারে কোন তথ্য রোগীকে দেন না কিংবা দিতে চান না। কোন রোগী জিজ্ঞেস করলে তারা বিরক্ত হন। ফলে রোগীর দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায় চিকিৎসকের লিখে দেওয়া ওষুধগুলো কিনে খাওয়া। এইভাবে অন্ধের মতো ওষুধ কিনে খেতে গিয়ে বাজারের মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ জুটে যায় তাদের কপালে। বাজারে ওষুধ কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হন ক্রেতারা। দেশে বেশিরভাগ সময় খাদ্যে ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার বিক্রি বন্ধে অভিযান চলে। অনেক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করা হয়। খাদ্যে ভেজাল কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার খেলে মানুষ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে দ্রুত চিকিৎসা দিলে তাকে মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু ওষুধে ভেজাল কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খেলে সেই রোগীকে বাঁবাবেন কি ওষুধ দিয়ে। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ মানে তো যেনে শুনে বিষ পান করার মতো অবস্থা। তাই মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ এবং ভেজাল ওষুধ মজুত, বিক্রি ও বাজারজাতের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া দরকার। যদিও সরকার আগামী ২ জুলাইয়ের পর কোন দোকানে যাতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ না থাকে সেব্যাপারে সতর্কতা জারী করেছে। দোকানগুলোর এক কর্নারে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। সেগুলো লাল রঙ দিয়ে চিহ্নিত করার কথাও বলা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু আমাদের ব্যবসায়ীদের সহাজত প্রবৃত্তি হচ্ছে পচা-বাঁসি এবং মেয়াদোত্তীর্ণ যা-ই হোক বিক্রি করতেই হবে। ওই খাবারে মানুষ মরুক কিংবা বাঁচুক তাতে আমাদের ব্যবসায়ীদের কিছু যায় আসে না। তারা যে কোন পন্থায় লাভবান হওয়ার জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ পন্য বিক্রি করেন। এই পরিস্থিতি পাল্টাতে হলে সচেতনতার পাশাপাশি আইনী ব্যবস্থাও নিতে হবে। আমরা চাই, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি বন্ধ হোক। সেটা কেবল সতর্কতা নয়, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ১৫ দিন আগে ওষুধগুলো দোকান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো ধ্বংস করে ফেলতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ কোনভাবেই দোকানের কোন স্থানে রাখার পারামর্শ দেওয়া সঠিক হবে না। তাহলে ওই ওষুধ অন্য পথে ক্রেতার কাছে পৌঁছে যাবে। সেই পথ বন্ধ করতে কার্যকর অভিযান ও পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।