মৌলভীবাজারের হারারগজ সংরক্ষিত বনাঞ্চল ইজারা দেওয়ার তোড়জোড়ে টিআইবির উদ্বেগ

মৌলভীবাজারের হারারগজ সংরক্ষিত বনাঞ্চল ইজারা দেওয়ার তোড়জোড়ে টিআইবির উদ্বেগ

মৌলভীবাজারে একটি বিতর্কিত ভূমি জরিপের ওপর নির্ভর করে হারারগজ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ঠিক মধ্যবর্তী ভূমি ‘খাস জমি’ হিসেবে দেখিয়ে, একটি চা উৎপাদন কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ার সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের একাংশের তোড়জোড়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। পরিবেশ বিধ্বংসী, আত্মঘাতীমূলক ও সংবিধান পরিপন্থি এ জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

একইসঙ্গে, স্থানীয় পর্যায়ের যে সকল কর্মকর্তা উচ্চপর্যায়ে ভুল বার্তা প্রদানের মাধ্যমে সংরক্ষিত বনাঞ্চলটি ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে তাঁদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহি নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছে টিআইবি।  

শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘শত বছরব্যাপী সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে স্বীকৃত হওয়া সত্ত্বেও পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য অপরিহার্য এরকম একটি বনাঞ্চলের ঠিক মধ্যবর্তী ভূমি ‘খাস জমি’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার নজির উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যা খুবই উদ্বেগজনক। বন্যপ্রাণির আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত বনটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং পরিবেশের সুষম ভারসাম্য রক্ষায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের একাংশ পরিকল্পিতভাবে দৃশ্যত প্রভাবশালী একটি মহলের সঙ্গে যোগসাজশে এই অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ডিজিটাল জরিপে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ‘টিলা রকম’ উল্লেখ করেছে। এর ফলে ভূমিটি ইজারা দেওয়া যেতে পারে বলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সুযোগ তৈরি করা হয়েছে মর্মে যে অভিযোগ উঠেছে, তার যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।’ 

একইভাবে, রেকর্ড সংশোধনের জন্য মৌলভীবাজার ভূমি জরিপ ট্রাইবুনালে জেলা প্রশাসন, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ও জুড়ী উপজেলার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) বিরুদ্ধে বনবিভাগের বিচারাধীন মামলার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চা উৎপাদন কোম্পানিকে মামলার নিষ্পত্তি সাপেক্ষে ইজারা দেওয়ার যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ। যা একইসঙ্গে চলমান ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে স্বার্থান্বেষীদের পক্ষকেই ভারি করবে বলে মনে করে টিআইবি।

২০১৪ সালে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের তৎকালীন মহপরিচালকের তদন্তের সুপারিশ অনুযায়ী এই বনভূমির কোনো  ভূমিই ইজারা দেওয়া যাবে না এবং এই ইচ্ছাকৃত ভুলের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে বিভাগীয় শাস্তি গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন তার বাস্তবায়ন হলে, আজ সম্পূর্ণ বনাঞ্চলটি যেভাবে ধ্বংস হওয়ার সম্ভবনা সৃষ্টি হয়েছে, সেই সুযোগই তৈরি হতো না উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, ‘সার্বিক বিবেচনায় এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলকে কেন্দ্র করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল পরিকল্পিত কূটকৌশল অবলম্বন করেই অগ্রসর হচ্ছে। যেখানে স্থানীয় কর্মকর্তাদের একাংশের  যোগসাজশের ফলে সম্পূর্ণ বিষয়টি ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে। তাই এ সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অগ্রসর হওয়া জরুরি। একইসঙ্গে, ট্রাইবুনাল এ ব্যাপারে কোনো ধরণের ভয়ভীতি, চাপ ও শঙ্কার ঊর্ধ্বে থেকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও নির্মোহভাবে পরিবেশ ও প্রতিবেশগত স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকেই আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।’