যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক

যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ শুরু করেছেন ঋষি সুনাক। এই প্রথম কোনও অশ্বেতাঙ্গ ও অভিবাসী পরিবারের সন্তান দেশটির প্রধান একটি রাজনৈতিক দলের নেতা এবং একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হলেন।

সোমবার ঋষি সুনাক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর মঙ্গলবার বাকিংহাম প্রাসাদে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন রাজা তৃতীয় চার্লস। এর আগে গত সপ্তাহে এমপিদের অনাস্থার মুখে পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

লন্ডনের ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের সামনে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেওয়া প্রথম ভাষণে আস্থা ও স্থিতিশীলতা পুনপ্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেন ঋষি সুনাক।

তিনি সতর্ক করে দেন যে ব্রিটেন এখন এক গভীর অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন এবং তার পূর্বসুরীর কিছু ভুল তার সরকারকে সংশোধন করতে হবে। এজন্য ‘কঠিন কিছু সিদ্ধান্ত’ নিতে হবে।

ব্রিটেনের বিরোধীদলগুলো ইতোমধ্যেই নতুন সাধারণ নির্বাচন দেওয়ার যে দাবি জানিয়েছে সেটি প্রত্যাখ্যান করেছেন ঋষি সুনাক।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লাইনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা পৃথক পৃথক বার্তায় ঋষি সুনাককে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

সম্পর্ক উন্নয়নের আশা নেই: রাশিয়া

ইউক্রেনের জন্য সাহায্য অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ঋষি সুনাক। তিনি বলেছেন, ভ্লাদিমির পুতিনের কারণে সারা বিশ্বের জ্বালানির বাজার এবং পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে ক্রেমলিন বলছে, সুনাকের প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় ব্রিটেনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক উন্নয়নের কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে চীন বলেছে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হওয়া সম্ভব বলে তারা আশা করে। যদিও এর আগে চীনকে ব্রিটেনের নিরাপত্তার জন্য এক নম্বর হুমকি বলে বর্ণনা করেছিলেন ঋষি সুনাক।

মন্ত্রিসভায় কারা থাকছেন? 

সুনাকের মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম এখন প্রকাশ করা হচ্ছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে লিজ ট্রাসের মন্ত্রিসভার সদস্যরাই বহাল আছেন। অর্থমন্ত্রী পদে জেরেমি হান্টই থাকছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে জেমস ক্লেভারলি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে সুয়েলা ব্রাভারম্যান এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেসও বহাল আছেন। তবে লিজ ট্রাসের মন্ত্রিসভার অন্য অনেক সদস্যই ইতোমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন। তাদের জায়গায় নতুন মন্ত্রী নিয়োগের কথা জানানো হয়েছে।

ঋষি সুনাক এমন একটি সময়ে প্রধানমন্ত্রী হলেন যখন ব্রিটেন কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যায় আক্রান্ত। স্থবির প্রবৃদ্ধি, ১০ শতাংশের বেশি মুদ্রাস্ফীতি, ইউক্রেন যুদ্ধ, কোভিড মহামারি ও ব্রেক্সিটের কারণে দেশটির অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে সরকারের অস্থিতিশীলতা।

এ কারণে লেবার পার্টি ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টিসহ বিরোধী দলগুলো বলছে, সমস্যার সমাধান প্রধানমন্ত্রী বদল করে হবে না। তারা নতুন সাধারণ নির্বাচন দাবি করছে। তবে অনেকেই বলছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একজন অশ্বেতাঙ্গ এবং অভিবাসী পরিবারের সন্তান সুনাকের নির্বাচন স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ব্রিটেনের সমাজ ও রাজনীতিতে এক মৌলিক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।