রহস্য উদঘাটনে সামনে চলে আসছে অনেক প্রশ্ন

রহস্য উদঘাটনে সামনে চলে আসছে অনেক প্রশ্ন

বৈধ-অবৈধ বিভিন্ন ব্যবসার আড়ালে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহেদ করিম প্রতারণা করে আসছিলেন মানুষের সাথে। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে প্রতারণা করে আসলেও খুব কম সময়েই তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হয়েছে। ফলে নির্বিঘ্নে তিনি করে গেছেন একের পর এক প্রতারণা। তবে তাকে এজন্য সহায়তা করেছে সমাজের নানান শ্রেণি পেশার মানুষ। শাহেদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছে তারা। কারা তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতো, কীসের বিনিময়ে তারা শাহেদের অনৈতিক কাজে সহায়তা করতো এখন সেসব প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

গত ২০ বছর ধরে শাহেদ একে একে গড়ে তুলেছেন রিজেন্ট হসপিটাল লিমিটেড (মিরপুর ও উত্তরা), এমএলএম কোম্পানি বিডিএস ক্লিক ওয়ান, ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজ, রিজেন্ট ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, হোটেল মিলিনা, করেছেন ঠিকাদারি ব্যবসা। হয়েছেন নতুন কাগজ নামে একটি পত্রিকার সম্পাদকও। কিন্তু সব ব্যবসার মধ্যেই ছিল তার প্রতারণা। তার এতসব প্রতারণা করে টিকে থাকার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সামনে চলে আসছে অনেক প্রশ্ন।

এছাড়াও মামলা হবার পরে ৬ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত শাহেদ কোথায় ছিলেন? কীভাবে ছিলেন, কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন? সাতক্ষীরায় কী করে পৌঁছালেন? ইতিমধ্যে করোনার টেস্ট না করে রিপোর্ট দেয়ার প্রতারণার বিষয়টি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে স্বীকার দিয়েছেন। এই জালিয়াতির সঙ্গে আরো কারা জড়িত, তারও প্রশ্ন ছুড়ছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

সাতক্ষীরা থেকে গ্রেপ্তারের পর হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনার পথে র‌্যাব কর্মকর্তাদের দেখে নেওয়ার হুমকিও দেয় শাহেদ। র‌্যাবের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তারা বলেন, হেলিকপ্টারে ওঠানোর পর শাহেদ বলেন, ‘কত দিন আমাকে আটকে রাখবেন? যখন বের হব তখন আপনাদের দেখে নেব। আমাকে ৬ মাসের বেশি জেলে রাখতে পারবেন না’।

এছাড়াও গ্রেপ্তারের পর সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে তাদেরও দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

র‌্যাবকে হুমকি ও ৬ মাসের বেশি শাহেদকে জেলে রাখা যাবে না- এসব হুমকি কার জোরে দিচ্ছেন, তার খুঁটির জোর কোথায়? এসব প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও শাহেদের গোপন অফিসে উদ্ধার হওয়া জাল টাকার উৎসও খুঁজছে পুলিশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। শাহেদকে জিজ্ঞাসাবাদে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

এর আগে, বুধবার ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সীমান্তবর্তী কোমরপুর গ্রামের লবঙ্গবতী নদীর তীর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছে গুলিসহ একটি ‘অবৈধ অস্ত্র’ পাওয়া যায়। এরপর তাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়। র‌্যাব সদর দপ্তরে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই তাকে নিয়ে উত্তরার একটি বাড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব। সেখানে জাল টাকার সন্ধান মেলে। বিকালে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে গ্রেপ্তার অভিযানের আদ্যোপান্ত বলেন র‌্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

ব্রিফিং শেষে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে চেকআপের পর শাহেদকে ডিবির কাছে হস্তান্তর করে র‌্যাব।

উল্লেখ্য, গত ৬ জুলাই উত্তরায় রিজেন্ট হাসপাতালে ভুয়া করোনা টেস্টের অভিযোগে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম অভিযান পরিচালনা করার পর থেকে শাহেদ করিম পলাতক ছিলেন। র‌্যাব অভিযান চালিয়ে ভুয়া করোনা টেস্ট রিপোর্ট প্রদান ও হাসপাতালে অব্যবস্থাপনার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতাল উত্তরা ও মিরপুর শাখা দুইটি সিলগালা করে দেয়। শাহেদ করিমের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে। তার বিরুদ্ধে সারা দেশে অর্ধশতাধিক প্রতারণার মামলা রয়েছে। এছাড়া একজন এসএসসি পাস হয়ে তিনি সমাজের উচ্চস্তরের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে ছবি তুলে তা ফেসবুকে দিয়ে প্রতারণা করেন বলে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।


ভোরের আলো/ভিঅ/১৮/২০২০