রাশিয়ার ৪৩০০ সেনা নিহত: দাবি ইউক্রেনের

রাশিয়ার ৪৩০০ সেনা নিহত: দাবি ইউক্রেনের

ইউক্রেন দাবি করেছে, তাদের সঙ্গে যুদ্ধে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার ৪৩০০ সেনা মারা গেছে।

এ ছাড়া রাশিয়ার ২৭টি যুদ্ধ বিমান, ২৬টি হেলিকপ্টার, ১৪৬টি ট্যাঙ্ক, ৭০৬টি সাঁজোয়া যান, ৪৯টি কামান, ১টি বাক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ৪টি গ্র্যাড বহুমুখী রকেট লঞ্চ সিস্টেম, ৩০টি যুদ্ধ যান, ৬০টি ট্যাঙ্কার, ২টি ড্রোন, ২টি নৌকা ধ্বংস করেছে ইউক্রেন।

ইউক্রেনের উপ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হান্না মালিয়ার রবিবার ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়ে রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে ইউক্রেন সেনাদের এই সাফল্যের খবর দিয়েছেন।

আজ ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের চতুর্থ দিনে বিভিন্ন শহরে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। রাশিয়া ইতিমধ্যে ইউক্রেনের তিনটি শহর দখলে নিয়ে নিয়েছে। আর দুটি শহর অবরোধ করে রেখেছে। তবে এখনো রাজধানী কিয়েভের পতন ঘটাতে পারেনি রুশ সেনারা।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কিয়েভেই অবস্থান করছেন এবং সেনাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন।

ওদিকে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার ভেটোদানের ক্ষমতা বাতিল করতে বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন গণহত্যার শামিল।

রবিবার এক সংক্ষিপ্ত ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি এসব কথা বলেছেন বলে খবর দিয়েছে রয়টার্স।

জেলেনস্কি বলেছেন, এটি সন্ত্রাসবাদ। তারা ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে আরও বেশি বোমা বর্ষণ করতে যাচ্ছে। তারা আরও বেশি চতুরতার সাথে আমাদের শিশুদের হত্যা করতে যাচ্ছে। আমাদের ভূমিতে একটি অশুভ শক্তি এসেছে, যাকে অবশ্যই ধ্বংস করা হবে।

তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড গণহত্যার শামিল।’

রবিবার অনলাইনে অপর এক পোস্টে ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনের আবাসিক এলাকায় বোমাবর্ষণ করছে মস্কো। আগ্রাসী শক্তি পশ্চিমাপন্থী দেশটির আরও গভীরে আঘাত করতে চায়। ইউক্রেনে গত রাতটি ছিল অত্যন্ত নৃশংস। তারা আবাসিক এলাকায় বেসামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে একের পর এক গুলি, বোমাবর্ষণ করেছে।

তিনি বলেন, আজ দেশে এমন কোনো জিনিস নেই; যা দখলদাররা লক্ষ্যবস্তু হিসাবে আক্রমণ করছে না। তারা সবার বিরুদ্ধে লড়ছে। তারা জীবন্ত সবকিছুর বিরুদ্ধ লড়ছে। আগ্রাসী শক্তিরা কিন্ডারগার্টেন, আবাসিক ভবন এমনকি অ্যাম্বুলেন্সের বিরুদ্ধেও লড়াই করছে।

জেলেনস্কি বলেছেন, রুশ সৈন্যরা পুরো শহরের সব জেলায় রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে। যেখানে কোনো সামরিক স্থাপনা নেই এবং কখনই ছিল না।

‘ইউক্রেনের ভাসিলকিভ, কিয়েভ, চেরনিগিভ, সুমি, খারকিভ এবং অন্যান্য অনেক শহরে এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে; যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমাদের ভূমিতে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল'।

অন্যদিকে, সংঘাতের অবসানে ইউক্রেনের সাথে আলোচনার জন্য রাশিয়ার পাঠানো প্রতিনিধিদের একটি দল বেলারুশে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে মস্কো। কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার আলোচনার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তিনি বলেছেন, রাশিয়া যদি বেলারুশ ভূখণ্ড থেকে ইউক্রেনে হামলা বন্ধ করে তবেই শুধু মিনস্কে আলোচনা সম্ভব হতে পারে। এছাড়া এই সংকট সমাধানে বিশ্বের অন্যান্য স্থানে আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি।

ইউক্রেনের এই প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আপনার ভূখণ্ড থেকে যদি কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে আমরা মিনস্কে কথা বলতে পারি... অন্যান্য শহর আলোচনার স্থান হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই শান্তি চাই। আমরা সাক্ষাৎ করতে চাই। আমরা যুদ্ধ শেষ করতে চাই। আমরা আলোচনার স্থান হিসেবে ওয়ারসো, ব্রাতিসলাভা, বুদাপেস্ট, ইস্তাম্বুল, বাকুর নাম প্রস্তাব করেছি।

ভলোদিমির জেলেনস্কি আরও বলেন, অন্য এমন একটি দেশের যেকোনো শহর আমাদের জন্য যথাযথ হবে; যাদের ভূখণ্ড থেকে আমাদের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়নি। সৎ আলোচনার জন্য এটিই একমাত্র উপায় এবং সত্যিই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইউক্রেনে আক্রমণের আগে রাশিয়া বেলারুশে কয়েক হাজার সৈন্য জড়ো করেছিল এবং দেশটিকে ইউক্রেনে আক্রমণের জন্য মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করছে।