লঞ্চের সর্বনাশ, সড়ক পথে উৎসব

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকা-বরিশালে যাতায়াতে যাত্রীরা ছুটছেন সড়ক পথে। এতে সময় আর খরচ বাঁচে বলে জানান যাত্রীরা। এদিকে পদ্মা সেতু চালুর তিন দিন যেতে না যেতেই নৌপথে যাত্রীর ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। এর প্রভাবে অঘোষিত ভাবে লঞ্চের কেবিন ও ডেকের ভাড়া কমেছে। এতে লঞ্চ শ্রমিকরা আছেন বেতন সংকটে আর চাকরি হারানোর ভয়ে লঞ্চ স্টাফরা।
লঞ্চের টিকিট কাউন্টারের সূত্রে জানাযায়, ৪০০ থেকে ৩৫০ টাকার স্থানে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা করে ডেকে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এছাড়া ২ হাজার ৪’শ টাকার ডাবল কেবিন বর্তমানে এসি/ননএসি ১ হাজার ৮’শ থেকে ২ হাজার টাকা, ১ হাজার ৪’শ টাকার সিঙ্গেল কেবিন বর্তমানে এসি/ননএসি ১ হাজার থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোফ ৫’শ টাকায়া বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ‘পদ্মা সেতু’ চালুর পরে দক্ষিনজনপদের সড়কে নতুন নতুন বিলাসবহুল গাড়ির উৎসব শুরু হয়েছে। নিত্য নতুন গাড়ি প্রবেশ করছে ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা লাইনে। ভাড়াও কম। তাই এই লাইনে যাত্রীর চাপ বেড়েছে তিনগুনেরও বেশি। এতে দক্ষিণাঞ্চলের পরিবহন খাতেও আসছে ব্যাপক পরিবর্তন। সেতু খুলে দেওয়ার পর যানবাহনের চাপ বাড়ছে ঢাকা-বরিশাল সড়কে।
বাসের টিকিট কাউন্টারের সূত্রে জানাযায়, এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গায় টোল কার্যকরের প্রজ্ঞাপন না দেওয়ায় বিআরটিএ সেটা বাদ দিয়ে ভাড়া নির্ধারণ করেছে। বাসে ৪০ আসন ধরে ভাড়ার তালিকা করা হয়েছে। আসন কমলে ভাড়া বাড়বে। কিন্তু শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের জন্য এই ভাড়ার তালিকা কার্যকর নয়। তবে বাসের ভাড়া মালিকরা নির্ধারণ করে থাকেন।
ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে মাওয়া, ভাঙ্গা, মাদারীপুর হয়ে বরিশালের দূরত্ব ১৫৬ কিলোমিটার। এ রুটে ভাড়া করা হয়েছে ৪২১ টাকা। ঢাকা-পিরোজপুর ৫৩২, ঢাকা-পটুয়াখালী ৫১৯ এবং ঢাকা-কুয়াকাটা ৭০১ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে পদ্মা সেুত চালুর ২ দিনের মাথায় গত রবিবার (২৭ জুন) রাত ৯ টায় সরেজমিনে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র-বরিশাল নৌ-বন্দরে নোঙর করা পাঁচটি লঞ্চ ঢাকা উদ্দেশ্যে ছাড়া প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার মধ্য পারাবাত ১০ ও ১৮, সুন্দরবন-১১, মানামী এবং সুরভী-৯। এসব লঞ্চ গুলোতে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে ডেকে যাত্রী তুলতে দেখা গেছে। এসময় যাত্রী নিয়ে একে অনের প্রতি চলে ভাড়া কমা-কমির যুদ্ধ।
ঢাকাগামী মানামী লঞ্চের যাত্রী মো. আল-আমিন জানান, ‘আমি লঞ্চে ভ্রমণ করতে পছন্দ করি এবং হাতে আজ সময় আছে তাই লঞ্চে করেই ঢাকা যাচ্ছি।’
বেসরকারি কোম্পানির চাকরিজীবী লঞ্চ যাত্রী সিমুল আকন বলেন, ‘কিছু দিন আগে আন্দোলন, সংগ্রাম করেও লঞ্চের ভাড়া কমানো যায়নি- আজ হঠাৎ ভাড়া কমিয়ে ঘাটে আসার পর হাত ধরে টানা-টানি শুরু করেছে।’
ঘাটের শ্রমিক আবুল হোসেন ভোরের আলোকে বলেন, ‘পদ্ম সেতু চালুর পর এই দুইদিন লঞ্চে যাত্রী নাই। আমরা শ্রমিকরা যে কি খামু কইতে পারি না। লঞ্চ মালিকরা আমাগো বেতন দিবে ক্যামনে। এহন তেল কিনবে না আমাগো বেতন দিবে। ঘাটে যাত্রী নাই। আজ দুই’শ থেকে আড়াইশ যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের এই ঘাটে ৫০০ থেকে ১ হাজার শ্রমিক আছে হেরা এহন না খাইয়া মরবে! আগে প্রতিদিন বেতন পাইতাম ৫০০ টাকা। আইজ পাইছি ২০০ টাকা, হেয়া প্রায় ঘাটেই শ্যাষ। সংসারে নিমু কি? আমি এই ৩৫ বছর ঘাটে কাম করি। এমন অবস্থা কোনদিন হয় নাই।’
এ বিষয়ে মানামী লঞ্চের সুপারভাইজার মো. শুভ বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হয়েছে কিছু দিন হয়েছে। সে ক্ষেত্রে লঞ্চে কতটা প্রভাব পরছে বা পরবে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।’ তবে ভাড়া কমার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, ‘কেবিনের ভাড়া আগের মতই আছে। কিন্ত আজ ঘাটে লঞ্চ বেশি থাকায় ডেকের ভাড়া কমেছে।’
তবে পদ্মা সেতুর কারণে লঞ্চযাত্রায় কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে। কিন্তু সেটা সিমিতি সময়ে জন্য হতে পারে। কারণ লঞ্চে চলাচল করা নিরাপদ। আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী। তাই আমাদের যাত্রীদের এই লঞ্চের প্রতি তাদের আস্থা আছে বলে জানান লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু।