শহীদ আলাউদ্দিন দিবস

শহীদ আলাউদ্দিন দিবস

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তীতে প্রধানত সরকারিভাবে ও খানিকটা বেসরকারি ভাবে গত ২ বছর ধরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব নানা ভাবে দেশে বিদেশে পালিত হচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানে দু’চার জনের অবদান বহুল ভাবে আলোচিত হলেও স্বাধীনতার ভিত্তি মূলে যারা জীবন দান করেছেন তাদের কথা একেবারেই আসছে না। শহীদ আসাদ, শহীদ মতিউর, শহীদ আলাউদ্দিন, শহীদ শ্রমিকে নেতা মনুমিয়ার কথা একেবারেই অনুল্লেখ থাকছে।
 
আওয়ামী লীগের ৬ দফা ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফার মিলিত সংগ্রাম জখন সারা পূর্ব বাংলার মানুষকে সংগ্রামের দীপ্ত ও শপথে জাগিয়ে তুললো তখন পাকিস্তানের লৌহ মানব আইয়ূবের খমতার আসন নড়বড়ে হয়ে পড়ল। স্বৈরাচারী আইয়ূবের উন্নয়নের ১০ বছরে মিথ্যা ফানুস ছিড়ে মানুষ নির্যাতন ও জুলুমের ভয়কে পাশ কাটিয়ে রাজপথে নেমে আসে। শাসকের দেয়া ১৪৪ ধারা, কার্ফু ভেঙ্গে ছাত্র জনতা বঙ্গবন্ধু সহ রাজবন্দীদের কারামুক্তি, পূর্ব বাংলার স্বায়ত্ব শাসন ও সাধারণ নির্বাচনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। ২০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল সমাবেশ থেকে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে রাজপথে ছাত্র জনতা মিছিল বের করলে পুলিশের গুলিতে আসাদুজ্জামান আসাদ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। আসাদের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পরলে সারা ঢাকা শহরে অলিতে গলিতে আইয়ুবশাহীর পতনের আওয়াজ উঠে। প্রতিদিনি মিছিল ধর্মঘট চলতে থাকে। ২৪ জানুয়ারি পুনরায় গুলিত নিহত হন পুরান ঢাকার নবকুমার ইন্সিটিটিউটের ছাত্র কিশোর মতিউর রহমান। মতিউর রহমানের মৃত্যুর পর বাঁধ ভাঙা জোয়ারের মত মানুষের ঢল নেমে আসে রাজপথে। সৃষ্টি হয় গণঅভ্যুত্থান। ঢাকার রাজপথে সৃষ্ট গণঅভ্যুত্থানের ঢেউ সারা দেশের ছড়িয়ে পড়ে। 

আমাদের বরিশালের ছাত্র জনতাও এসময়ে ঘরে বসে ছিলেন না। প্রতিদিনই মিটিং মিছিল চলছিল। ২৮ জানুয়ারি বরিশালেও শাসক গোষ্ঠী ১৪৪ ধারা জারি করে। তাদের দেয়া ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে ছাত্র জনতার মিছিল বের হয়। প্রতিটি স্কুলের সামনে দিয়ে মিছিল গেলে ছাত্ররা নিজেরাই ছুটির ঘন্টা বাজিয়ে মিছিলে যোগ দেয়। একে স্কুলের ছাত্ররা মিছিল নিয়ে মূল মিছিলে এসে যোগ দেয়। একে স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র শহীদ আলাউদ্দিন মিছিলের সামনের কাতারে ছিল। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। ওই মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে কয়েকজন ছাত্র গুলি বৃদ্ধ হয়ে রাজপথে পরে যায়। এসময় পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত ছাত্র আলাউদ্দিনকে বরিশাল সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। 

শহীদ আলাউদ্দিন বরিশালের বিকে হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করতেন। তখন দক্ষীণের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্কুল কলেজ বলতে ছিলই না। কলাপাড়ার হাজিপুরে জন্মগ্রহণকারী আলাউদ্দিন তার মামা যিনি মুকুল স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন তার তত্তাবধায়নে থেকে বরিশালে লেখাপড়া করতেন। শহীদ আলাউদ্দিন কোন ছাত্র সংগঠনের সদস্য না হয়েও সুধু ৬৯ গণ আন্দোলনের উত্তাল ঢেউয়ে তিনি চলে এসেছিলেন মিছিলে। তার কিশোর মনকেও দোলা দিয়েছিলো বাঙালির স্বাধীকারের আন্দোলন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমরা এই কিশোরের আত্মত্যাগকে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছি। কোথাও তার সেই ভাবে স্বীকৃতি নেই। প্রকৃত বীর কোন সম্পদ ও পদকের জন্য লালাইত থাকে না। জাতি হিসাবে তাদেরকে আমরা সম্মান জানালে আমাদের ত্যাগ ও গৌরব গাঁথা আরও দ্যুাতি ছড়াবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম।