শিশু কণ্যা মনিকা নিজের বিয়ে নিজেই ভেঙ্গে দিল

নিজের বিয়ে নিজেই ভেঙ্গে দিল শিশু মনিকা। মনিকার লেখাপড়ার সকল দায়িত্ব নিল বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শমভু, আমতলী পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান ও আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এ ঘটনাটি ঘটেছে বরগুনা জেলার আমতলীপৌরসভার বাসুগী এলাকায় শুক্রবার রাতে। এ ঘটনায় বরের মা ও কনের মাকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা ও অনাদায়ে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
জানা গেছে, আমতলী পৌর শহরের ৮নং ওয়ার্ডের বাসুগী এলাকার রিক্সা চালক জুয়েল প্যাদার মেয়ে মনিকা আমতলী মফিজ উদ্দিন বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণীর ছাত্রী।
মনিকার সাথে পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের রিক্সা চালক মোঃ তৌফিকের পুত্র পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মী সুমন (১৪) এর সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ের সিদ্ধান্ত হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। শিশু মনিকা তার বিয়ের কথা জানতে পেরে শুক্রবার বিকেলে কৌশলে বাসা থেকে পালিয়ে বান্ধবী কনিকা ও ফারজানাকে নিয়ে পরামর্শ করে বিয়ে বন্ধ করার জন্য প্রথমে তারা আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে যায়। কোর্ট বন্ধ দেখে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করে মনিকা তার বান্ধবীদের নিয়ে আমতলী থানায় আসে। থানার ওসিকে সব ঘটনা খুলে বললে তাৎক্ষনিক তিনি এসআই নাসরিন সুলতানাকে দায়িত্ব দিয়ে বর সুমন, বরের মা ডলি বেগম ও কণ্যার মা শাহানাজ ওরফে শাহিনুরকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। পরে পুলিশ আটককৃতদের ভ্রাম্যমান আদালতে সোপর্দ করে। ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কমলেশ মজুমদার বাল্য বিয়ে নিরোধ আইনের ২০১৭ এর ৮ ধারা মোতাবেক বরের মা ডলি বেগমকে ২ হাজার টাকা ও কনের মা শাহানাজ ওরফে শাহিনুরকে এক হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ২০ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।
সাহসী শিশু কণ্যা মনিকা জানায়, আমি দুপুরে জানতে পারি শুক্রবার সন্ধ্যায় আমার বিয়ে হবে। আমি বিকেলে বান্ধবী কনিকা ও ফারজানার সাথে কোর্টে যাই। সেখানে কাউকে না পেয়ে আমতলী থানায় এসে বড় স্যারকে সব খুলে বলি। আমি লেখাপড়া করে অনেক বড় হতে চাই।
আমতলী থানার ওসি মো. আবুল বাশার বলেন, আমি সব ঘটনা শুনে পুলিশ পাঠিয়ে বর, বরের মা ও কনের মাকে আটক করে থানায় এনে ভ্রাম্যমান আদালতে সোপর্দ করি।ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কমলেশ মজুমদার বলেন, এর পূর্বে অনেক বাল্য বিয়ে রোধ করেছি। সার্বিক বিবেচনায় আমার নিকট এটি একটি হৃদয় বিদারক বাল্য বিয়ে। ধন্যবাদ জানাই সাহসী কণ্যা মনিকাকে। এত অল্প বয়সে নিজে নিজের বিয়ে ভেঙ্গে
দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, সাহসী কণ্যা মনিকা যতদূর লেখাপড়া করতে চায় আমরা তার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করবো।বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শমভু শনিবার বিকালে বলেন, মনিকার লেখাপড়া ও বিয়ের দায়িত্ব আমি নিলাম। তিনি বলেন, মনিকা এ দেশের দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। এখন থেকে মনিকাকে দেখে সমাজ শিক্ষা নিবে। তিনি মনিকার ভুয়সী প্রশংসা করলেন। আমতলী পৌরসভার মেয়র মতিয়ার রহমানও মনিকার সার্বিক দায়িত্ব নিয়েছেন।