সংগঠন কি এত দুর্বল যে কিছুই করতে পারলাম না: আব্বাস

সংগঠন কি এত দুর্বল যে কিছুই করতে পারলাম না: আব্বাস

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজয়ের পর রবিবার মতবিনিময় সভা করেছেন ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

এ সময় কাউন্সিলর প্রার্থীরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষপাতের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তারা ইলেকট্রোনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট কারচুপির বিষয় সামনে আনেন।

তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিএনপি গঠিত কমিটির নেতৃবৃন্দ ও মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন আত্মসমালোচনা করেন। এ সময় ঢাকা মহানগর বিএনপির দূর্বলতার বিষয়টি উঠে আসে।

রবিবার নয়াপল্টনে আনন্দ কমিউনিটি সেন্টারে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ র‌্যাব, পুলিশ দিয়ে ভোট কেন্দ্রে হানা দিয়েছে। সেখানে আমাদের কমিশনার প্রার্থীরা টিকতে পারেননি। আমার একটাই প্রশ্ন, আমাদের সংগঠন কী সেখানে এতই দুর্বল যে আমরা কিছুই করতে পারলাম না। আমাদের কিছু একটা করা উচিত ছিল।

তিনি বলেন, ‘আমরা এমন কোনো সংবাদ পেলাম না যে, ওখানে কিছু একটা হয়ে গেছে। সুতরাং আমাদের সংগঠনটাকে আমাদের জন্য আমাদের নেত্রীর জন্য আরো সুন্দর ও সুসংগঠিত করতে হবে। এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে’।

সিটি নির্বাচনে কারচুপির বিষয় তুলে ধরে বিএনপির এই নীতি নির্ধারক বলেন, ‘আমি আমার এলাকায় দেখেছি, যারা নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে সেই লোকগুলোর ফলাফল স্থগিত রেখে চার/পাঁচ ঘণ্টা পরে দুই/চার ভোটে, ১১ ভোটে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ জনগণ যে ভোট দিয়েছে আওয়ামী লীগ সেটা জনগণের কাছে প্রকাশ করে নাই।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় তাদের সমীহ করার প্রয়োজন নাই। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে ক্ষমতায় আছেন সেভাবে জবরদস্তি করে মেয়র ক্ষমতায় আছে’।

মহানগর বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির দূর্বলতার কথা বললেও দীর্ঘদিন মহানগর বিএনপির দায়িত্বে ছিলেন মির্জা আব্বাস। এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজিত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের বাবা প্রয়াত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা দীর্ঘদিন মহানগর বিএনপির দায়িত্বে ছিলেন। এই খোকা-আব্বাসের দ্বন্দ্বেই মহানগর বিএনপি সংগঠিত করা যায়নি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সভায় বলেন, ‘সভায় কাউন্সিলর প্রার্থীরা ঢাকা মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন। আমাদের ঢাকা মহানগরের সব ওয়ার্ড, থানায় এবং সব পর্যায়ে দলকে সংগঠিত এবং আরো শক্তিশালী করতে হবে।’

তিনি দাবি করে বলেন, ‘৯০ শতাংশ মানুষ ভোট দিতে যায়নি। সিটি নির্বাচনে ১০ শতাংশের ওপর যে ভোট দেখানো হয়েছে তা ইভিএমের কারচুপির মাধ্যমে। সরকারের প্রতি অনাস্থার কারণে ঢাকার ৯০ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে যাননি’।

সভায় ইশরাক হোসেন বলেন, ‘ঢাকা সিটি নির্বাচনের দিন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা চেষ্টা করেছিল মাঠে থাকার। কিন্তু তাদের সংগঠিতই করা হয়নি। কেউ ঝুঁকি নেবে, কেউ ঘুমিয়ে থাকবে- সেটা হতে পারে না। এভাবে আমাদের সাফল্য আসবে না’।

কাউন্সিলর প্রার্থীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের দিন কার, কী ভুমিকা ছিল, সেটা নাম উল্লেখ করে বলার দরকার নেই। নির্বাচনের দিন ভোট দিয়ে আমি নিজেও কেন্দ্র থেকে কেন্দ্র ঘুরে বেড়িয়েছি। সেদিন কিছু বিষয়ে আকাশ-পাতাল তফাৎ লক্ষ করেছি। কিছু এলাকায় দেখি কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চেষ্টা করছেন বিজয় ছিনিয়ে নিতে। আবার কিছু জায়গায় দেখেছি, কাউন্সিলর প্রার্থী ও স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। কেউ জীবনবাজি রাখবে, আর কেউ ঘুমিয়ে থাকবেন, তা হবে না কিন্তু’।

ইশরাক হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আব্দুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, ফরিদপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, বিএনপি নেতা রফিক সিকদার, শিরিন সুলতানা, কাজী মফিজুর রহমান প্রমুখ।