সাংবাদিক অপহরণচেষ্টা : আরো ১ জন গ্রেপ্তার

বরিশালে সময় টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান অপূর্ব অপুর উপর হামলা করে অপহরণচেষ্টার ঘটনায় হাবিব ওরফে ট্যারা হাবিব নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এনিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে মূলহোতা জিহাদুল ইসলাম জেহাদ ও নূরে আলম এখনও ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে। ঘটনার পেছনে কারা রয়েছে সেই রহস্য উন্মোচন করার দাবি জানিয়েছে, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী নেতারা।
রোববার সকালে ট্যারা হাবিবকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিমুল করিম।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় মামলার পরপরই ভিডিও ফুটেজ ও বিভিন্ন সূত্র ধরে আমরা অভিযানে নামে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার গভীর রাতে বরিশাল সদর উপজেলার লাহারহাট এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মো: হাবিবুর রহমান ওরফে ট্যারা হাবিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার নামে এর আগেও মাদক মামলা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে। সবই তদন্ত করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গ্রেপ্তারকৃত হাবিবই প্রথম সাংবাদিক অপুর পথরোধ করে হামলা চালায়। এরপর অন্যান্যদের মধ্যে জিহাদুল ইসলাম জেহাদ অপুকে প্রাইভেটকারে করে তোলার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছাত্রদলের সাবেক নেতা জেহাদ একসময়কার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী।
এদিকে গত ৩ জুন পটুয়াখালী জেলার মহিপুরে অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ সভাপতি নুরুন মোমেন ওরফে কোটন, মো. মাহমুদ ওরফে রিয়াজ ও মো. মামুন সিকদার ওরফে চিডা মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের সবার বিরুদ্ধে এলাকায় মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ জানিয়ছে, গ্রেপ্তারকৃত ৪ জনই দাবি করছে, সময় টিভির বরিশাল অফিসের পাশেই একটি ভবনে দৈনিক সময় সংবাদ নামে একটি সাইনবোর্ড টাঙায় সেই ভবনের একজন মালিক মামুন মল্লিক। সেটি নিয়ে সাংবাদিক অপুর সঙ্গে মামুনের কথার কাটাকাটি হয়। সেই রেশ ধরে অপুকে অপদস্ত করতে মামুন মল্লিক হামলাকারীরাদের নির্দেশ দিলে অপুর ওপর হামলা চালানো হয়। তবে তদন্ত না করে এখনই সত্যতা নিশ্চিত হতে পারছে না বলে জানায় পুলিশ।
অন্যদিকে অপূর্ব অপুর উপর হামলার ঘটনায় জড়িত মূল অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও ঘটনার পেছনের রহস্য উন্মোচন করার দাবি করেছে সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল টিআইবির বরিশাল সদস্য শুভঙ্কর চক্রবর্তী বলেছেন, অপূর্ব অপুর মত নির্মোহ সাংবাদিকের উপর হামলা ও তাকে অপহরণ চেষ্টায় মূল অভিযুক্তদের এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গ্রেপ্তার করতে পারেনি। সাংবাদিক অপুর উপর হামলা ও অপহরণ চেষ্টার বিচারের দাবীতে আমাদের আন্দোলন অব্যহত রয়েছে। ধীরে ধীরে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো।
সচেতন নাগরিক কমিটি বরিশালের সভাপতি অধ্যাপিকা শাহ সাজেদা বলেন, অপু একজন পেশাদার সাংবাদিক ও ভালো মানের সাংস্কৃতিক সংগঠক। তার সাথে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা আমাদের মধ্যে আতংকের জন্ম দিয়েছে। আমরা চাই অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে মূল অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক। তা না হলে আমরা যে আন্দোলনে নেমেছি, সেটা কঠোর থেকে কঠোরতর হবে।
শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন বলেন, অপূর্ব অপুর ওপর হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৪ জনকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও মূলহোতা জেহাদ, নূরে আলম ধরাছোয়ার বাইরে। জেহাদ নগরীর চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী। অপুর উপর হামলা ও অপহরণ চেষ্টায় মূল অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথেই থাকবো।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, বরিশালের ইতিহাসের সাংবাদিক অপহরণের চেষ্টা এর আগে কোনদিন ঘটেনি। এই ঘটনায় বরিশালে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মহল, সাংবাদিক সমাজ, সুধী সমাজসহ সর্বস্তরের নাগরিকরা তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিচার চাইছে। আশা করছি এ ঘটনায় মূল হোতারা দ্রুত আইনের আওতায় আসবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ মে বিকাল সাড়ে ৩টায় দিকে সময় টেলিভিশনের বরিশাল অফিসে যাওয়ার পথে ব্যুরো প্রধান অপূর্ব অপুকে নগরীর শীতলাখোলা এলাকার মুমীতু কমিউনিটি সেন্টারের সামনে হামলা করে অপহরণ চেষ্টা চালায় একদল সন্ত্রাসী। তখন দৌড়ে আত্মরক্ষা করেন অপু।