সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর নির্যাতন-মামলা দোষীদের শাস্তি দিতে হবে

দেশের খ্যতিমান অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর যে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়। আমাদের দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালেয়র কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন, রাতে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে যেভাবে নথি চুরির মামলা দেওয়া হয়েছে তা বাক স্বাধীনতাকে আটকে দেওয়ার সামিল। করোনাকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছে রোজিনা ইসলামসহ পুরো গণমাধ্যম। সেখানে দুর্নীতির খেরোখাতা তুলে ধরার কারণে নির্মমভাবে হেনস্থা হতে হয়েছে রোজিনা ইসলামকে। এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিকার না হলে সরকারের ঘোষণা করা ‘দুর্নীতির শুন্য সহনশীল নীতি’ প্রশ্নের মুখে পড়বে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ হবে দুর্নীতি মুক্ত। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও জাতির পিতার কণ্ঠের অনুরনণ সৃষ্টি করেছেন। কোনভাবেই দুর্নীতিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরার কারণে রোজিনা ইসলামের ওপর যে নির্যাতনের চিত্র দেখলাম তাতে আমাদের মনে নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমরা কি দুর্নীতি মুক্ত শুদ্ধাচারের বাংলাদেশ দেখতে চাই কি না। জনগণের অর্থে প্রতিপালিত হওয়া সচিব, উপসচিবদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত থাকুক দেশ। যেহেতু রোজিনা ইসলাম দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেছেন, তাই তাকে নানান অজুহাতের ফাঁদে ফেলা হয়েছে। এই অপচেষ্টা বন্ধ না হলে বাংলাদেশ প্রগতির পথ থেকে ছিটকে পরবে।
পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে অনুসন্ধানী প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘ সময় আটকে রেখে হেনস্তা এবং রাতে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে যেভাবে নথি চুরির মামলা দেওয়া হয়েছে সেই প্রক্রিয়া দেখে। কারা দীর্ঘ সময় রোজিনা ইসলামকে আটকে রেখে মামলার জালে আটকানোর ব্যবস্থা করেছে তাদের প্রতি ঘৃণা জানাই। একই সঙ্গে এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। অবিলম্বে রোজিনা ইসলামের নামে দেওয়া মামলা প্রত্যাহার এবং নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি করছি। এই দাবি পূরণ না হলে সারা দেশে যে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে তার আচ কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা বলা মুশকিল।
গণমাধ্যম সরকারের বিপক্ষের কেউ নয়। সাধারণ মানুষের পক্ষে গণমাধ্যম প্রধান ভূমিকা পালন করে। সরকারের নানান দপ্তরের অনিয়ম দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরার কারণে গণমাধ্যম সাধুবাদ পাওয়ার কথা। কিন্তু হচ্ছে উল্টো বাহাবা পাওয়ার পরিবর্তে নানা আইনের জটিলতা দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের হয়রানী করার ঘটনা পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। যার অকাট্য প্রমান হচ্ছে অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে নির্যাতন করে মিথ্যা তথ্য চুরির অভিযোগ দিয়ে হেনস্থা করা।
করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতের ক্রয় থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র তুলে আনতে নিরন্তরভাবে মাঠে থেকে কাজ করেছে গণমাধ্যমকর্মীরা। করোনার ঝুঁকি জেনেও তারা সার্বক্ষণিক কা করে চলেছে। গণমাধ্যম কর্মীরাই সাধারণ মানুষের সামনে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। যা ছিল অবিশ^াস্য এবং ভয়াবহ। স্বাস্থ্যখাতের যে ভয়াল ও অমানবিক চিত্র জাতির সামনে এসেছে, তার অনেকটাই সম্ভব হয়েছে রোজিনা ইসলামের মতো নির্ভিক গণমাধ্যমকর্মীদের নিরন্তর প্রচেষ্টা ও নিষ্ঠার কারণে। ওইসব প্রতিবেদন সরকারের সামনে চলার পথকেও সুগম করেছে। যার ফলে সরকারও স্বাস্থ্যখাতে ইতিবাচক ভুমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে।
তাই, সরকারি নথি চুরির অভিযোগ এনে দীর্ঘসময় ধরে একজন নারী সংবাদকর্মীকে আটকে রেখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রোজিনা ইসলামের সঙ্গে যে ধরণের নিপীড়নমূলক আচরণ করেছেন তা মুক্ত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে হুমকী স্বরূপ। এর নিন্দা জানালে হবে না। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে সাংবাদিকদের আশ^স্ত করতে হবে।