বরিশালে সাপের আতঙ্কে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। জেলার মুলাদী উপজেলার রাঘুয়া কাজিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটে ওই ঘটনা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের নির্দেশে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
গত বৃহষ্পতিবার ক্লাস চলা অবস্থায় চতুর্থ শ্রেণির মেঝেতে সাপ দেখে আতঙ্কিত হয়ে পরে শিক্ষার্থীরা।
গত শনিবার এবং রোববার ২৮টি সাপ মারা হয়। এর প্রেক্ষিতে গত শনিবার থেকে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দ্রুত বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর আশ্বাসও দিয়েছেন তারা।
বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এবিএম মিজানুর রহমান গতকাল বিকেলে বলেন, বৃহষ্পতিবারের ঘটনা হলেও গত শনিবার থেকে স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছ। দুই দিনে ২৮টি সাপ স্থানীয়রা মেরেছে। পরে শুনেছি আরও বেশ কয়েকটি সাপ মারা হয়েছে। বিষয়টি বন বিভাগ জানানো হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে শাপুরে পাঠানো হয়েছ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করা হবে।
রাঘুয়া কাজিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী তাদের শ্রেণিকক্ষে একটি সাপ দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করে। এতে ওই কক্ষে থাকা সব শিক্ষার্থী আতঙ্কিত হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। শিক্ষকরা ওই সাপটি মেরে ফেলার পর পরই শ্রেণিকক্ষের ভাঙা মেঝের গর্ত থেকে একাধিক সাপ বেরিয়ে আসতে শুরু করে। এতে পুরো বিদ্যালয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুত শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় ত্যাগ করে বাড়ি চলে যায়।
গত শনিবার সকালে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের কেচি (কলাপসিবল) গেটে পেঁচানো অবস্থায় একটি সাপ দেখতে পায়। পরে স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে বিদ্যালয়ের মেঝের কিছু অংশ ভেঙে ফেললে বেশ কয়েকটি সাপ বেরিয়ে আসে। এসময় সাপের অগণিত ডিম ও বাচ্চাও দেখতে পাওয়া যায়। ওই দিন ১৭টি সাপ মারা হয়। গত রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্থানীয়রা ওই বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষ থেকে ৪২টি সাপ মেরেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন, বৃহস্পতিবার সাপ আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় থেকে চলে যায়। এরপর অগণিত সাপ এবং ডিম দেখা যায়। সাপের ভয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। সাপ আতঙ্কে অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে আসতে দিচ্ছেন না। বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তাদের এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হলে তারা বিদ্যালয়ের পাঠদান সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মুলাদী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জানার পর বিদ্যালয় পরিদর্শন এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেেেশ বিদ্যালয় সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।
মুলাদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমি গত রোববার ঘটনা জানতে পেরেছি। বিদ্যালয়ের মেঝের নিচে সাপে বাসা তৈরি করেছে। সেখান থেকে বাচ্চা ও সাপ স্থানীয়রা মেরেছে। তবে সেটা ৬০ হবে না। গতকাল সোমবার বিকেলে সাপুরে নিয়ে বিদ্যালয়টি তল্লাসি চালানো হয়। পরিস্থিতি স্বাভাকি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে দ্রুত বিদ্যালয় চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।