সামনের গাড়ি থেমে গেলে আমিও থেমে যাবো

প্রাণের শহর বলি বরিশালকে। হ্যা এটা প্রাণের শহরই। কিন্তু দিন দিন বড় অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছি এখানে থাকতে।
অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন হর্ণ খুব পীড়া দেয় ইদানীং। আমরা উন্নয়নের দিকে এগোচ্ছি, হচ্ছি উন্নত দেশ, সাথে এগোচ্ছে বরিশাল নগরী। কিন্তু এত অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন কি বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোথাও আছে?
হ্যা, আমি বিশ্বাস করি এ সমস্যা একদিন থাকবে না কিন্তু আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে কি খারাপ সময়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছি না?
আমি বরিশালের মানুষ। তাই এখানের অবস্থাটা অন্য সব যায়গার থেকে ভাল বুঝি ও জানি। প্রতিদিন কাজের জন্য সদর রোড যেতে হয়। সদর রোড যেতে যেতে তো নতুন বাজারে জ্যাম, জেলখানার মোড় জ্যাম, বিবির পুকুর পাড়ে জ্যাম, আর লঞ্চ ঘাটের কথা না-ই বললাম। বরিশাল সিটি করপোরেশনের মাননীয় মেয়র এ ব্যাপারে কাজ করেছেন। সড়কে রোড ডিভাইডার দিয়েছেন। তারপর ও তো কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। হ্যা বুঝলাম শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেজন্য যানবাহন ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সেজন্য এত অনিয়ন্ত্রিত ক্যানো?
আর তাদের ব্যাবহৃত 'হর্ণ' আমাদের ফেলছে ভোগান্তিতে। শব্দ দূষণের সাথে সাথে আমার শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির দায়ভার কে নিবে?
সামনের গাড়ি থেমে গেলে আমিও থেমে যাবো ঠিকই কিন্তু আমার হাতটা অবিরতভাবে টিপতে থাকবে ‘কর্কশ হর্ণ’ এর বোতামটি। এটাই যেন এখন আমাদের শহড়ের নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তায় হাটতে গেলে হর্ণ এর জন্য মাথাব্যাথা অব্দি এখন শুরু হয়ে গেছে। আর দূর বাকি?
বলতেই হয়, হলুদ রঙের ব্যাটারি চালিত ইজি বাইকগুলোকে আমি প্রধান কারণ হিসেবে রাখবো। এদের ব্যাবহৃত হর্ণ গুলো চেক করলে অধিকাংশই পাওয়া যাবে বেআইনী বিকট শব্দ সৃষ্টিকারী হাইড্রোলিক হর্ন। যা আমাদের দেশে এসকল যানবাহনের জন্য নিষিদ্ধ করা হলেও তারা খুব সানন্দেই ব্যবহার করেচলছে। কারণ এদের বলার কেউ নাই। তারাই সব। এদেরই উত্তরসূরী হিসেবে মানবো ব্যাটারি চালিত মোটর অটোরিকশা। একই অবস্থা। এদের নেই কোনো নিজেদের নিয়ন্ত্রণকারী সমিতি। করে নিজেদের যা ইচ্ছা তাই। কিছু বলতে যাবেন এদের? উলটো আপনাকে বলে দিবে। এদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে যাবেন? আমি নিশ্চিত আপনি এদের পেটে লাত্থি মারার ধান্দায় আছেন। প্রয়োজন কি বলার?
আছে প্রয়োজন। কারণ সমস্যাটা আমার হচ্ছে আমার বৃদ্ধ বাবার হচ্ছে মায়ের হচ্ছে আমার শিশু বাচ্চার হচ্ছে। শুধু মাত্র এই হর্ণ এর কারণে বধির হয়ে যেতে পারে আমার বাচ্চাটা। সে আমার বাবা ডাকটা শুনতে পাবে না শুধুমাত্র এই হর্ণ এর জন্য। আরে তোমরা তো আমার পরিবারটা ধ্বংস করছো তোমাদের ‘হর্ণ’ দিয়ে। অন্ধকার করে দিচ্ছো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে।
এদেরকে কি নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যাবস্থা নেই?
এদের ‘হর্ণ’ নিয়ন্ত্রণের কি কোনো ব্যাবস্থা আমাদের জানা নেই?
মাননীয় মেয়র, আপনি আমাদের জন্য করেছেন, করছেন এবং করবেনও জানি। কারণ আপনি বলেছিলেন, আপনি যদি বরিশালের জন্য কিছু করতে না তবে আর কেউ পারবে না সেটা বিশ্বাস করি। আমাদের আশ্রয়স্থল আপনি। ভরসাও আপনি। আমাদের জন্য, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষার জন্য, সুন্দর বরিশাল গড়ার জন্য আপনাকে এই কষ্টটুকু করার জন্য অনুরোধ করলে আপনি নিশ্চই ফেলবেন না।
‘কারণ আমরাই গড়বো আগামীর বরিশাল’